Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সত্যবান ডাক্তার সত্য বলছেন কি, প্রশ্ন রোগীদের

(ডি/অসম) এবং বিএএমএস (ব্যাচেলর অফ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি)। মেডিক্যাল অফিসার (আলমপুর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র)।

সত্যবান মণ্ডল

সত্যবান মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া ও বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৭ ০৪:১০
Share: Save:

চেম্বারের বাইরের বোর্ডে লেখা— এমবিবিএস (ডি/অসম) এবং বিএএমএস (ব্যাচেলর অফ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি)। মেডিক্যাল অফিসার (আলমপুর গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র)। কিন্তু কাটোয়া সদরে এমনই চেম্বার যাঁর, সেই সত্যবান মণ্ডলের দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিলেন এক পরিচিত রোগী। এমবিবিএস (ডি তথা ডিপ্লোমা) স্বীকৃত নয় এবং আলমপুরে তাদের কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই জানিয়ে বিতর্ক আরও উস্কে দেয় স্বাস্থ্য দফতর। জাল ডাক্তার নিয়ে রাজ্যে চলা তুলকালামের আঁচ মঙ্গলবার পড়ল পূর্ব বর্ধমানেও।

এই জেলায় অন্তত ১৪ জন ডাক্তারের ডিগ্রি খতিয়ে দেখার জন্য মেডিক্যাল কাউন্সিলকে জানিয়েছে সিআইডি। এই আবহে কাটোয়া শহরের এই ঘটনা। লেনিন সরণিতে ২০০৮ সাল থেকে চেম্বার বরমপুরের বাসিন্দা বছর চল্লিশের সত্যবান মণ্ডলের। সাইনবোর্ডে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মস্থলের উল্লেখ ছাড়াও লেখা ‘জেনারেল ফিজিশিয়ান ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ’।

আরও পড়ুন: পরমবীর প্রাচীর ঘিরে দ্বন্দ্ব, প্রশ্নের মুখে রাজ্যপাল

এ দিন সকালে কাটোয়ায় মা-কে ডাক্তার দেখাতে এনেছিলেন আলমপুরের এক বাসিন্দা। সাইনবোর্ড দেখে সেখানে বসে থাকা রোগীদের সামনেই তিনি বলেন, ‘‘ইনি তো আলমপুরের আয়ুর্বেদিক ডাক্তার। এখানে তো দেখছি, উনি অ্যালোপ্যাথিও করেন!’’ সে কথা কানে যেতে রোগীদের একাংশ সত্যবানবাবুকে ঘিরে ধরে বলতে থাকেন, ‘‘কখনও তো বলেননি আপনি আয়ুর্বেদিক ডাক্তার। আমাদের ভুল বোঝাচ্ছেন!’’ সত্যবানবাবুর দাবি, ১৯৯৮ সালে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পাশ করে উত্তর কলকাতার যামিনীভূষণ রায় আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিএএমএস পাশ করেন। পরে অসম মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে তিন বছরের এমবিবিএস ডিপ্লোমা পান। যদিও কোন কলেজ থেকে ডিপ্লোমা করেছেন তা জানাননি। রাজ্য ইউনির্ভাসিটি অফ হেলথ সায়েন্সেস-এর অফিসার ইন চার্জ প্রদ্যুৎবিকাশ কর মহাপাত্রেরও দাবি, ‘‘২০০৩-এ জেবি রায় স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিএএমএস পাশ করেছেন সত্যবান। শম্ভুনাথ পণ্ডিত থেকে ইন্টার্নশিপ করেছেন। জেলা পরিষদের অধীনে বর্ধমানের কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত উনি।’’

আলমপুর পঞ্চায়েত প্রধান বাবলু মোল্লা জানাচ্ছেন, সত্যবান স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নন, পঞ্চায়েতের আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার। জেলা পরিষদের কর্মী। তা হলে তিনি নিজেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার পরিচয় দিতেন কেন? সত্যবান নিরুত্তর। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ লেখা ন্যায়সঙ্গত? সত্যবানবাবু বলেন, ‘‘লোকে চায় বলে লিখি। আমার এমবিবিএসের ডিপ্লোমাও আছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় অবশ্য বলেন, ‘‘এমবিবিএস কখনই ডিপ্লোমা হয় না। এসিএমওএইচকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। পুলিশকেও জানানো হবে।’’

ভুয়ো পরিচয়ে ডাক্তারি করছিলেন কেন? অভিযোগ উড়িয়ে সত্যবানের মন্তব্য, ‘‘গ্রামীণ ডাক্তারেরা তো সব ধরনের চিকিৎসা করেন। তারা কি আমাদের থেকে বেশি শিক্ষিত?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Satyaban Maondal Fake doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE