Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Sudip Banerjee Kunal Ghosh

ফিশফ্রাই-জলভরা-নাড়ুতে সমস্যার সমাধান? পোস্ট এখনও বহাল! কুণাল-সুদীপ শান্তিকল্যাণ ‘আপাতত’?

তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এই বিষয়টি নিয়ে সুদীপকে ফোন করেছিলেন। তৃণমূলনেত্রীই সুদীপকে বলেছিলেন, কুণালের সঙ্গে কথা বলতে। তার পরেই সুদীপ কুণালকে ফোন করেছিলেন বলে খবর।

Is the issue between Sudip Banerjee and Kunal Ghosh resolved

(বাঁ দিকে) কুণাল ঘোষ। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৩:১৮
Share: Save:

গত চার দিন ধরে কুণাল ঘোষ যাঁকে নিশানা করেছিলেন, তিনি উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সুদীপের বাড়িতে তাঁরই আমন্ত্রণে সোমবার সন্ধ্যায় চায়ের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন কুণাল। চায়ের সঙ্গে বিবিধ ‘টা’ ভক্ষণ করে বেরিয়ে কুণাল সংবদামাধ্যমের সামনে সমস্যা মিটমাটের কথা বললেও শাসকদলের অনেকেই মনে করছেন, মিটমাটের প্রশ্নে কুণাল ‘আপাতত’ বললেই ভাল হত।

কুণালকে দল শো-কজ় করায় এক দিকে যেমন সুদীপ শিবির ‘উল্লসিত’, তেমনই গোটা পরিস্থিতির ময়নাতদন্তে নেমে কুণাল-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, যে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ শুরু হয়েছিল, তাতে বরং মাথা নোয়াতে হয়েছে সুদীপকেই। কারণ, তিনিই ফোন করে কুণালকে তাঁর বাড়িতে ডেকে ফিশফ্রাই, কুকিজ়, জলভরা সন্দেশ এবং চা খাইয়েছেন। তার পরে কথাবার্তাও বলেছেন। কুণাল নারকেল নাড়ু ভালবাসেন বলে বিশেষ ভাবে তা বানিয়ে রেখেছিলেন সুদীপের স্ত্রী তথা চৌরঙ্গীর তৃণমূল বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপ-কুণালের আলোচনার সময় সেখানে ছিলেন নয়নাও।

প্রথমে কুণাল এবং তার পরে সদ্য তৃণমূলত্যাগী প্রবীণ বিধায়ক তাপস রায় উপর্যুপরি সুদীপকে লক্ষ্য করে তোপ দাগা শুরু করেছিলেন। উত্তর কলকাতা জেলা কমিটির ব্রিগেডের প্রস্তুতি বৈঠকে কুণালকে সুদীপের না-ডাকা নিয়ে সাম্প্রতিক মতানৈক্যের সূত্রপাত। এমনকি, কুণাল সুদীপকে গ্রেফতার করতে বলে তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্টও করেছিলেন। সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকার সময় সুদীপ যখন ভুবনেশ্বরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখন সেই বিল কে বা কারা মিটিয়েছিল, তা নিয়েও তদন্তের দাবি তুলেছিলেন কুণাল। সরাসরি লিখেছিলেন, তদন্ত না-করালে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন। পাশাপাশিই, কুণাল সুদীপকে ‘বিজেপির লোক’ বলেও বর্ণনা করেছিলেন। লিখিত ভাবে ছাড়াও মৌখিক ভাবেও সুদীপকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন।

ওই পুরো সময়টাতেই সুদীপ নীরব ছিলেন। তাপস সুদীপকে আক্রমণ করে দল ছাড়েন (যদিও তৃণমূলের তরফে বলা হচ্ছে, কিছু ‘বাধ্যবাধকতা’র কারণে তিনি বিজেপিতে যেতে চেয়েই দল ছেড়েছেন)। আর সুদীপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বলার জন্য কুণালকে শো-কজ় করেছেন দলীয় নেতৃত্ব। যার ব্যাখ্যা সুদীপ-শিবির করছে তাদের ‘জয়’ বলে।

সেখানেই আপত্তি কুণাল-শিবিরের। প্রকাশ্যে কিছু না-বললেও দলের অন্দরে তাদের পাল্টা বক্তব্য, ঘটনাপ্রবাহে সুদীপকে ‘বাধ্য’ হয়ে কুণালকে বাড়িতে ডেকে আপস করতে হয়েছে। তাঁকে বলতে হয়েছে, ব্রিগেডের প্রস্তুতি বৈঠকে কুণালকে না-ডাকাটা তাঁর ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’। যদিও এ সব কিছুই কুণাল বা তাঁর হিতৈষীরা আপাতত প্রকাশ্যে বলতে নারাজ।

পাশাপাশিই, কুণাল-শিবিরের আরও বক্তব্য, গত কয়েক দিনে কুণাল সংবাদমাধ্যমে বলার পাশাপাশি নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিবিধ ভাবে বিঁধেছেন সুদীপকে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অধিকর্তা এবং সিবিআইকে ট্যাগ করে এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্টে কুণাল দাবি করেছিলেন, রোজ়ভ্যালি মামলায় ফের সুদীপকে গ্রেফতার করা হোক। যে পোস্ট তৃণমূলের মধ্যে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। যদিও পরে সেটি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি কুণাল। জানিয়েছেন, ওই পোস্টটি নিয়ে তিনি একটি বাক্যও বলবেন না। কারণ, তাঁর ‘অপারগতা’ রয়েছে। কী অপারগতা, তা খোলসা না করলেও কুণাল বলেছিলেন উপরওয়ালার কথা। সেই সূত্রেই কুণাল শিবিরের দাবি, ওই পোস্টগুলি কিন্তু এখনও এক্সে রয়েছে। সেগুলি কুণাল মুছে দেননি। অর্থাৎ, সেই মতামতে কুণাল এখনও অনড়। তা হলে এতে সুদীপ-শিবির ‘জয়’ দেখছে কেন?

বস্তুত, তৃণমূল সূত্রের খবর, সুদীপ-কুণাল দ্বন্দ্বের বিষয়টি ক্রমশ আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে পূর্ব মেদিনীপুর সফররত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করেন। তিনিই সুদীপকে নির্দেশ দেন কুণালের সঙ্গে অবিলম্বে কথা বলতে। এবং কুণালকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিষয়টির সুরাহা করতে। সেই মতোই সুদীপ কুণালকে ফোন করে ব্রিগেডের প্রস্তুতি বৈঠকে না-ডাকার বিষয়টিকে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে বর্ণনা করেন এবং কুণালকে বাড়িতে চা পানের আমন্ত্রণ জানান। কুণালও ‘সৌজন্য’ দেখিয়ে সেখানে যান। সুদীপের স্ত্রী নয়নার উপস্থিতিতে দু’জনের আলোচনা হয়।

উত্তর কলকাতার রাজনীতি, তৃণমূলের সংগঠন ইত্যাদি নিয়েই কুণালের সঙ্গে সুদীপের মৌলিক সংঘাত। যেমন ছিল তাপসেরও। যিনি সোমবার বিধানসভায় গিয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। তবে কুণালের দল বদলানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, নিজের গায়ে কখনও ‘দলবদলু’ শব্দ লাগতে দেবেন না। কিছু বিষয়ে তাঁর নিজস্ব অভিমত রয়েছে। সেটা থাকবেও। তবে দিনের শেষে তাঁর নেত্রী মমতা আর নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এখন দেখার, কুণাল তাঁর শো-কজ়ের জবাবে দলকে কী উত্তর দেন। ওই নোটিসে কুণালকে জবাব দেওয়ার জন্য সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। কুণাল চিঠি পেয়েছেন সোমবার। হিসেবমতো তাঁর জবাব দেওয়ার শেষ দিন আগামী রবিবার, যে দিন তৃণমূলের ব্রিগেড সমাবেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Politics Kunal Ghosh Sudip Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE