Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সরস্বতীর হাত ধরে কি তবে পদ্মের কাছে!

সরস্বতী পুজোর দিন কেন কেন্দ্রীয় বাজেট হবে, প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর ওই সরস্বতী-তত্ত্বেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অধীর চৌধুরী!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

সরস্বতী পুজোর দিন কেন কেন্দ্রীয় বাজেট হবে, প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেত্রীর ওই সরস্বতী-তত্ত্বেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অধীর চৌধুরী!

দলের নেতা, সাংসদ-সহ সকলে সরস্বতী পুজো নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন যখন, সেই দিনেই বাজেট পেশ নিয়ে আপত্তি আছে মমতার। সেই সূত্র ধরেই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সরস্বতী পুজো শুধু তৃণমূলের সাংসদেরা কেন, সকলেই করবেন। কিন্তু সরস্বতী বন্দনা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, তার জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটের দিন সংসদে অনুপস্থিত থাকতে হবে? তৃণমূলের সাংসদেরা সে দিন সংসদে না থেকে আসলে কি বিজেপি-কে কিছুটা সুবিধা করে দিতে চাইছেন?’’ অধীরের যুক্তি, নোট বাতিলের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে মমতা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদীকে উৎখাত করে ছাড়বেন। অথচ বিগত কিছু দিন ধরে এই প্রসঙ্গে মোদী-বিরোধী সুর নরম হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তার পরেই সরস্বতীর তত্ত্ব আসায় অধীরের প্রশ্ন, কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দল কি ফের অলিখিত সমঝোতার পথে হাঁটছে?

বিধান ভবনে এ দিন প্রদেশ সভাপতি বলেন, ‘‘দু’দলের আঁতাঁতের ফলে ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে তদন্ত শ্লথ হয়ে পড়েছিল। এখন আবার সেই ঘটনায় সিবিআই কয়েক জনকে গ্রেফতার করতে শুরু করেছে। আমাদের আশঙ্কা, বাঁচার চেষ্টায় তৃণমূল আবার বোঝাপড়ায় যাচ্ছে না তো?’’ কিন্তু তৃণমূল কি লোকসভার স্পিকারকে বা অন্য কোথাও জানিয়েছে যে, তারা বাজেট বয়কট করবে? অধীরবাবুর জবাব, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে বিবৃতি দিয়েছেন। ওঁদের হাবভাব দেখে আমাদের আশঙ্কার কথা বলছি আগেই।’’

তৃণমূলের তরফে অবশ্য পাল্টা বলা হচ্ছে, প্রদেশ সভাপতির ‘আশঙ্কা’ অযৌক্তিক। তৃণমূলের মুখ্য জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন জানাচ্ছেন, সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার আগের দিন, সোমবার কালীঘাটে দলের সব সাংসদকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন স্বয়ং মমতা। সেখানেই অধিবেশনে দলের রণকৌশল ঠিক হবে। তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, ১ ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজোর দিন বাজেট ফেলায় কিছু বাস্তব অসুবিধা আছে। সরস্বতী পুজোর সঙ্গে বহু মানুষের ভাবাবেগ ও অভ্যাসও জড়িত। দলনেত্রী সেই কথাই বলতে চেয়েছেন। এর সঙ্গে বিজেপি-কে সুবিধা করে দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

মমতার দলের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশিই নোট বাতিলের প্রতিবাদকে আরও তৃণমূল স্তরে ধারাবাহিক ভাবে ছড়িয়ে দিতে চাইছে কংগ্রেস। দলের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর নির্দেশ তেমনই। সেই অনুযায়ীই উত্তম মঞ্চে দলের জেলা ও ব্লক সভাপতিদের ডেকে কনভেনশনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন অধীর এবং এআইসিসি-র তরফে রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সি পি জোশী। পরে জেলা সভাপতিদের নিয়ে বসে জোশী জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে সরকার-বিরোধী আন্দোলন কংগ্রেসের যেমন চলছে, চলবে।

এই সূত্রেই রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যের সঙ্গে তাঁদের মতের ফারাকের কথাও এ দিন সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছেন অধীর। বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনে এসে রাজ্যে উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন প্রণববাবু। তাঁরই দলের প্রাক্তন বর্ষীয়ান নেতা যখন এমন দরাজ মমতার প্রতি, তাঁরা এত সমালোচনা করছেন কী ভাবে? প্রদেশ সভাপতির সাফ কথা, ‘‘রাষ্ট্রপতি রাইসিনা হিলসের উপর থেকে কী দেখেন, জানি না! আমরা মাটিতে থেকে যা দেখছি, তা-ই বলছি। যে জেলা থেকে তিনি সাংসদ ছিলেন, সেই মুর্শিদাবাদ-সহ নানা জায়গায় কংগ্রেস কর্মীদের মাদক পাচারের মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। যাতে তাঁরা জামিন না পান!’’ অধীরের সংযোজন, ‘‘রাষ্ট্রপতিকে সম্মান করেই বলছি, রাজ্য দারুণ চলছে, এটা আমরা বলতে পারছি না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Adhir Ranjan Chowdhury Central State
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE