Advertisement
E-Paper

বাঘই ঘোগ, ধৃত কর্তার অস্ত্র ফাঁস

তিন দশকের পুরনো কর্মী তিনি। তার উপরে অফিসার। তাই পদাধিকারের জোরে কোনও রকম তল্লাশি ছাড়াই ফ্যাক্টরির ভিতরে সর্বত্র ছিল তাঁর অবাধ গতিবিধি।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:০৯

অস্ত্রের যন্ত্রাংশ পাচারে অস্ত্র ছিল তাঁর পদ ও প্রভাব। ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির ধৃত কর্তাকে জেরা করে শুক্রবার এ কথা জানায় লালবাজার।

তিন দশকের পুরনো কর্মী তিনি। তার উপরে অফিসার। তাই পদাধিকারের জোরে কোনও রকম তল্লাশি ছাড়াই ফ্যাক্টরির ভিতরে সর্বত্র ছিল তাঁর অবাধ গতিবিধি। বেরোনোর সময়েও তাঁর দেহ-তল্লাশির সাহস দেখাত না রক্ষীরা।

সেই সুযোগেই ইনস্যাসের মতো রাইফেলের যন্ত্রাংশ নিয়ে বেরিয়ে আসতেন ওই অস্ত্র কারখানার ওয়ার্কস ম্যানেজার শম্ভু ভট্টাচার্য। চোরাই যন্ত্রাংশ চলে যেত অস্ত্রের কারবারিদের কাছে। ঝাড়খণ্ড ও বিহারের গোপন ডেরায় সেগুলো জুড়ে জুড়েই তৈরি হতো সেই রাইফেল, যা থাকে সীমান্তে বা জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকায় পাহারারত জওয়ানদের হাতে! শম্ভু এবং অস্ত্রের কারবারি দীপক সাউকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে উল্টোডাঙা এলাকায় শম্ভু-দীপককে পাকড়াও করে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। গোয়েন্দারা জানান, শম্ভুর কাছ থেকে ইনস্যাসের যন্ত্রাংশ, ২০টি ‘সেল্ফ লোডেড রাইফেল’ (এসএলআর)-এর খালি ম্যাগাজিন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেগুলিতে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির ছাপ রয়েছে। দীপকের কাছে পাওয়া গিয়েছে একটি দেশি ৯-এমএম পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি। ধৃতদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। তদন্তকারীদের একাংশ জানান, সেনা ও আধাসেনাদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র এ ভাবে অস্ত্র কারখানারই কর্তার হাত ঘুরে চোরাকারবারিদের হাতে পৌঁছে যাওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

যন্ত্রাংশ পাচার হতো কী ভাবে?

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ৩০ বছর আগে বাবার মৃত্যুতে ‘কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ড’ বা মানবিকতার খাতিরে জগদ্দলের বাসিন্দা শম্ভুবাবুকে চাকরি দেওয়া হয় রাইফেল ফ্যাক্টরিতে। ধাপে ধাপে পদোন্নতির পরে জুনিয়র ওয়ার্কস ম্যানেজারের পদে উন্নীত হন তিনি। এত বছর চাকরি করার সূত্রে কারখানার অন্দরে অপরিসীম প্রভাব ছিল তাঁর। সেই প্রভাব খাটিয়েই ইনস্যাসের বিভিন্ন যন্ত্রাংশকে কাগজেকলমে বাতিল হিসেবে দেখাতেন তিনি। ইছাপুরের বাসিন্দা দীপক ওই কারখানায় ঠিকাদারের কাজ করতেন। সেই সূত্রে শম্ভুর সঙ্গে তাঁর পরিচয়। আর সেই পরিচয়ই পরে ব্যবসায়িক সম্পর্কে পরিণত হয়। ‘বাতিল’ ছাপ মারা যন্ত্রাংশগুলি দীপকের হাত দিয়ে পাচার করতেন শম্ভু। প্রতি বার যন্ত্রাংশ পাচারের জন্য ৫০-৭০ হাজার টাকা দিতেন দীপক। পুলিশের দাবি, গত এক বছরে ১৫ বার যন্ত্রাংশ বিক্রি করেছেন শম্ভু। তার আগে স্টোরকিপারের পদে থাকার সময়েও তিনি এসএলআরের যন্ত্রাংশ পাচার করেছেন বলে অভিযোগ।

পুলিশের সন্দেহ, এই দুষ্কর্মে বড় কোনও চক্র জড়িত। এবং শম্ভু ছাড়াও কারখানার আরও কেউ কেউ এই চক্রে জড়িত থাকতে পারেন। কেন তল্লাশি ছাড়াই নিরাপত্তারক্ষীরা শম্ভুর ব্যাগ ছেড়ে দিতেন, প্রশ্ন তুলেছেন তদন্তকারীরা। ইছাপুর থেকে পাচার হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ দিয়ে ঝাড়খণ্ড ও বিহারের গোপন ডেরায় তৈরি হওয়া রাইফেল কাদের হাতে গিয়েছে, উঠছে সেই প্রশ্নও। পুলিশের একাংশের মতে, ইনস্যাস রাইফেল চালানো তুলনায় সোজা। ফলে জঙ্গিদের কাছে এই রাইফেলের খুব কদর। একে-৪৭ বাদ দিলে ইনস্যাস-ই এখন জঙ্গিদের সব চেয়ে পছন্দের বন্দুক। সেই হাতিয়ার হাসিল করার জন্য সরকারি ভাঁড়ার থেকে অস্ত্র-যন্ত্রাংশ পাচারের এই চক্রে দেশদ্রোহে যুক্ত কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর মদত ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

corruption Ishapore Rifle Factory রাইফেল ফ্যাক্টরি Arrest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy