Advertisement
E-Paper

ঘুরে গেল মাস, সৌরভ মামলায় রাজসাক্ষী বন্দি

পুলিশ তাঁর জবানবন্দির ভিত্তিতেই চার্জশিট দিয়েছে। তাঁর সাক্ষ্যকেই ভিত্তি করে ৮ জনের ফাঁসি, ১ জনের যাবজ্জীবন এবং ৩ জনের পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। এবং সেই সঙ্গে বামনগাছির কলেজ ছাত্র সৌরভ চৌধুরী হত্যা মামলার রাজসাক্ষী উত্তম শিকারিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও দিয়েছে আদালত। কিন্তু তার এক মাস পরেও মুক্তি পাননি মামলার এই রাজসাক্ষী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০৩:২০

পুলিশ তাঁর জবানবন্দির ভিত্তিতেই চার্জশিট দিয়েছে। তাঁর সাক্ষ্যকেই ভিত্তি করে ৮ জনের ফাঁসি, ১ জনের যাবজ্জীবন এবং ৩ জনের পাঁচ বছর কারাদণ্ডের রায় হয়েছে। এবং সেই সঙ্গে বামনগাছির কলেজ ছাত্র সৌরভ চৌধুরী হত্যা মামলার রাজসাক্ষী উত্তম শিকারিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও দিয়েছে আদালত। কিন্তু তার এক মাস পরেও মুক্তি পাননি মামলার এই রাজসাক্ষী। আড়াই বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে তাঁর স্ত্রী ও মা পুলিশ, আদালত আর জেলের দোরে-দোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

আদালত কাউকে বেকসুর খালাস করে দিলে তাঁকে কোনও ভাবেই আটকে রাখা যায় না। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট রায় রয়েছে। এই নিয়ম না মানলে শাস্তিও হতে পারে আদালত অবমাননার দায়ে। কিন্তু উত্তমের ক্ষেত্রে নিয়মের কোনও তোয়াক্কা কেউ করছে না বলে অভিযোগ উত্তমের পরিবারের।

এলাকায় সমাজবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করায় ২০১৪ সালের ৫ জুলাই রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছিল সৌরভকে। ওই ঘটনায় ১৪ জুলাই উত্তম-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে দত্তপুকুর থানার পুলিশ। এই ঘটনার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী না পেয়ে চার্জশিট দিতে গিয়ে আতান্তরে পড়ে পুলিশ। এই সময়েই ওই ঘটনায় যুক্ত উত্তম আদালতে নিজের অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। জানায়, সে অনুতপ্ত। সে সব সত্যি কথা বলবে। এর পরে উত্তমকে রাজসাক্ষী করেই চার্জশিট দেয় পুলিশ।

বারাসত জেলা আদালতে প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মামলায় একাধিক বার সাক্ষ্য দিয়েছে উত্তম। আসামি পক্ষের আইনজীবীর জেরার মুখোমুখি হয়েছে। তার বয়ানের গুরুত্ব বিচার করে এগিয়েছে তদন্ত ও শুনানি। অবশেষে গত ১৪ এপ্রিল সৌরভকে হত্যার অপরাধে ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন উত্তমকে। ১৯ এপ্রিল দোষীদের শাস্তি ঘোষণা হয়।

আদালত কাউকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিলে সেই রায়ের রিপোর্ট অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হয়। এর পরে যত শীঘ্র সম্ভব মুক্তি দিতে হয় খালাস পাওয়া ব্যক্তিকে। কিন্তু গ্রেফতারের পর থেকে এখন বসিরহাট জেলেই রয়েছেন তিনি। কিন্তু কেন?

উত্তমের মা চারু শিকারি বলেন, ‘‘আমরা বারবার বসিরহাট জেলে গিয়েছি। জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওরা আদালতের কোনও নির্দেশই পাননি।’’ নির্দেশ যে জেল পর্যন্ত পৌঁছয়নি তা স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশও। এক পুলিশ-কর্তার কথায়, ‘‘গত এক মাসে আমরা অন্তত ১০ বার উত্তমের মুক্তির নির্দেশ জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। কিন্তু সুরাহা হয়নি।’’

সৌরভ মামলার বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি বিপ্লব রায় বলেন, ‘‘নিয়ম মতো মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পরপরই রাজসাক্ষীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা। সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকও সেই নির্দেশই দিয়েছেন উত্তম শিকারির ক্ষেত্রে। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষকে সেই নোটিসটি পাঠান মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানেই আটকে আছে বিষয়টি। জেল কর্তৃপক্ষের কাছে সেই নোটিস যাতে দ্রুত পৌঁছয় আমরা সে ব্যাপারে খোঁজ রাখছি।’’

কিন্তু এই দেরির জন্য সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মামলাটির তদন্তকারী অফিসাররা। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উপরের আদালতে আবেদন করার জন্য ৯০ দিন সময় থাকে। সর্বশেষ খবর, দোষীদের তরফে এখনও আর্জি জমা পড়েনি। তাদের তরফে আইনজীবীরা কাগজপত্র জোগাড় করছেন। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, ‘‘এত দিন আটকে থাকার কারণে রাজসাক্ষী ক্ষুব্ধ হয়ে যদি অভিযোগ দায়ের করে, তা হলে সমস্যা হবে। তাতে মামলাটিরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। আমরা শুধু সেই ভয়টাই পাচ্ছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy