Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Madhyamik Exam

সময় লাগবে নীতি রূপায়ণে, ধন্দ মাধ্যমিকের ভবিষ্যৎ ঘিরেই

নয়া শিক্ষানীতির প্রণেতাদের বক্তব্য, এক দিনের পরীক্ষায় ভবিষ্যৎ ওলট-পালট হয়ে যাবে, এমন ব্যবস্থার বদল চান তাঁরা।

যে-সব স্কুলে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ানো হয়, তাদের কী হবে?—ফাইল চিত্র।

যে-সব স্কুলে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ানো হয়, তাদের কী হবে?—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২০ ০৪:১৩
Share: Save:

‘বোর্ড পরীক্ষার চাপ কমাতে’ বুধবার নয়া শিক্ষানীতি অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সাংবাদিকদের সামনে নতুন শিক্ষানীতির কথা ঘোষণা করতে গিয়ে সেই লক্ষ্যের কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেন্দ্রের স্কুলশিক্ষা সচিব। তার পরেই ধন্দে পড়েছেন পড়ুয়া এবং অভিভাবকেরা। প্রশ্ন উঠছে, নতুন ব্যবস্থায় মাধ্যমিক পরীক্ষা কি পুরোপুরি অবলুপ্ত হয়ে যাবে?

এ দিন নয়া শিক্ষানীতির প্রণেতাদের বক্তব্য, এক দিনের পরীক্ষায় ভবিষ্যৎ ওলট-পালট হয়ে যাবে, এমন ব্যবস্থার বদল চান তাঁরা। শিক্ষানীতিতে সেই কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে তা বাস্তবায়িত করা হবে, সেটা ঠিক করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও শিক্ষা বোর্ডের। এ দিকে, তাদের এড়িয়ে নয়া শিক্ষানীতি অনুমোদন করে দেওয়ায় মোদী সরকারের প্রতি খড়্গহস্ত বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি। সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষা কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ তালিকাভুক্ত। ফলে রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করছে, এই অভিযোগও উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এই সংঘাতের নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত বোর্ড পরীক্ষার ভবিষ্যৎ ঘিরে ধোঁয়াশা থেকে যাবে। যার জেরে চাপ বাড়বে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের উপর।

নতুন শিক্ষানীতিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং তার আগের তিন বছর মিলিয়ে পাঁচ বছরে ভিত তৈরি, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি প্রস্তুতি পর্ব, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি মাঝারি পর্বের শিক্ষা ও নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শিক্ষায় সঙ্ঘ-ধ্বনি, নিয়ন্ত্রক সংস্থাতেও কি আরএসএস

প্রশ্ন উঠছে, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিকে একটি ইউনিট ধরলে যে-সব স্কুলে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ানো হয়, তাদের কী হবে? পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের প্রশ্ন, ‘‘মাধ্যমিক স্তরের সব স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করার পরিকাঠামো কি সর্বত্র আছে? নিয়ম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে পড়ান স্নাতক শিক্ষকেরা। উচ্চ-মধ্য স্তরে পড়াতে হলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাগে। তা হলে মাধ্যমিক স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক হলে পড়াবেন কারা? এত দ্রুত সব পরিকাঠামো পাল্টানো কি সম্ভব?’’

রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘‘নবম থেকে দ্বাদশের মধ্যে আটটি সিমেস্টারের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এক-একটা ক্লাসে ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষার মতো। কিন্তু সেটা কি মাধ্যমিকের বিকল্প হতে পারে?’’ আটটি সিমেস্টারের আয়োজন করে সময়ে ফল প্রকাশের পরিকাঠামো সব স্কুলে আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। তবে অভীকবাবুর বক্তব্য, এখনই উদ্বেগের কারণ নেই। নতুন নীতি বলবৎ করতে হলে অনেক ধাপ পেরোতে হবে। নতুন শিক্ষানীতিকে আইন করে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর করাতে হবে। তা ছাড়া, শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত। তাই রাজ্যের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। নিখিল বঙ্গ শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।’’

আরও পড়ুন: সংসদকে এড়িয়ে শিক্ষানীতি পেশ, সরব বিরোধীরা

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির আগে তিন বছরের পড়াশোনার জন্য যথেষ্ট শ্রেণিকক্ষ সব স্কুলে আছে কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর প্রশ্ন, প্রথম তিন বছর পড়ানোর মতো প্রশিক্ষিত শিক্ষক আছেন কি? ঠিকমতো প্রশিক্ষণ না-হলে গোড়ায় গলদ থেকে যাবে কচিকাঁচাদের।

জোরদার প্রশ্ন উঠছে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় পঠনপাঠন বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েও। রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস মনে করেন, মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দিলেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ইংরেজিকেই প্রধান ভাষা এবং আঞ্চলিক ভাষাকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষা হিসেবেই গণ্য করা হবে। ‘‘নতুন শিক্ষানীতিতে ভাষা নির্বাচনে নিশ্চয়ই স্বাধীনতা দেওয়া হবে,’’ বলেন তিনি।

আরও পড়ুন: নয়া নীতিতে সুযোগ বাড়ছে প্রি-স্কুল বাণিজ্যে

নতুন নীতিতে অনলাইন শিক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতার শতল কলসা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পুলককুমার বসুর প্রশ্ন, ‘‘আমাদের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় অনলাইন ক্লাস কী ভাবে হবে?’’ তিনি জানান, বহু গরিব পড়ুয়ার স্মার্টফোন নেই। নেট-সংযোগ দুর্বল। আগে অনলাইন ক্লাসের পরিকাঠামো দরকার।

এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়ে উচ্চবাচ্য নেই। এই শিক্ষানীতি বেসরকারিকরণের রাস্তা প্রশস্ত করবে। মাল্টিডিসিপ্লিনারি স্টাডির জেরে বিষয়ের গভীরে গিয়ে লেখাপড়া করার উৎসাহ কমিয়ে দেবে। তা ছাড়া এই কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতি সাম্প্রদায়িক।’’ ছাত্র সংগঠন ডিএসও-র পক্ষ থেকেও নয়া শিক্ষানীতির বিরোধিতা করা হয়েছে।

শিক্ষানীতিকে স্বাগত জানিয়ে বিজেপির শিক্ষা সেলের রাজ্য আহ্বায়ক দীপল বিশ্বাস অবশ্য বলেন, ‘‘প্রাথমিক ও প্রাক্-প্রাথমিক বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ। প্রায় কেউই ছ’বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের স্কুলে না-পাঠিয়ে ফেলে রাখে না। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও নতুন শিক্ষানীতি যথাযথ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE