ITBP Masudul Rahman
নিজের গুলিতে নয়, সহকর্মী সুরজিৎ সরকারের গুলিতে কনস্টেবল মাসাদুল রহমানের মৃত্যু হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দাবি করল ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি)। তাদের তরফে এ-ও বলা হয়েছে, সুরজিৎ-সহ আরও চার জন একে ৪৭-এর গুলিতেই মারা গিয়েছেন। জখম হয়েছেন দু’জন।
যদিও সুরজিতের পরিবারের একাংশের দাবি, নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের জেরে নয়, মাওবাদী হামলাতেই তাঁরা হতাহত হয়েছেন। এই ঘটনায় নিহত আর এক বাঙালি জওয়ান পুরুলিয়ার বিশ্বরূপ মাহাতোর পরিবারের থেকে অবশ্য এমন কোনও দাবি করা হয়নি।
বস্তার রেঞ্জের আইজি সুন্দররাজ পি বুধবার জানিয়েছিলেন, সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ নিজের সার্ভিস রাইফেলের গুলিতে আত্মঘাতী হয়েছেন মাসাদুল। তার আগে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলেছেন পাঁচ সহকর্মীকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার আইটিবিপি-র জনসংযোগ আধিকারিক বিবেককুমার পাণ্ডে জানান, কোনও একটি বিষয়ে প্রবল বাগবিতণ্ডা শুরু হয়েছিল মাসাদুল ও সুরজিতের। তার জেরে পাশে বসে থাকা অন্য এক সহকর্মীর একে-৪৭ তুলে নিয়ে গুলি চালাতে থাকেন মাসাদুল। আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালান সুরজিৎ। বিবেক জানান, গুলির লড়াইয়ে তাঁরা দু’জনে তো মারা যানই, ওই লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয় আরও চার জওয়ানের।
বৃহস্পতিবার বিকেলে যখন মাসাদুলের মৃতদেহ নদিয়ার বিলকুমারী গ্রামের বাড়িতে আনা হয়, তখন বাঁ দিকের বাহুমূলে গুলির চিহ্ন দেখে পরিবারের লোক প্রশ্ন তোলেন, কেউ কি ওই অংশে গুলি চালিয়ে আত্মঘাতী হতে পারেন? এর পর সন্ধ্যায় বিবেককুমার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘বুধবার রাতে মাসাদুলের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে। কোনও বিবৃতি দেওয়ার আগে সেই রিপোর্ট হাতে আসার প্রয়োজন ছিল। রিপোর্ট এবং প্রাথমিক তদন্তে বোঝা যাচ্ছে, আত্মঘাতী হননি মাসাদুল। সহকর্মী সুরজিৎ সরকারের চালানো গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’ বিবেককুমারই নির্দিষ্ট করে জওয়ানদের মধ্যে গুলির লড়াইয়ের কথা জানান।
বিবেকের দাবি, চলতি বছর জুলাইয়ে ছুটি পেয়েছিলেন মাসাদুল। কিন্তু যেতে চাননি। বলেছিলেন, ডিসেম্বরে দু’মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবেন। বুধবার থেকেই সেই ছুটি শুরু হয়েছিল। বাড়ি যাওয়ার আগে ব্যাগ গোছাচ্ছিলেন তিনি। তখনই সহকর্মী সুরজিতের সঙ্গে তাঁর প্রবল তর্কাতর্কি শুরু হয়। সম্ভবত নিজের আগ্নেয়াস্ত্রটি তত ক্ষণে মাসাদুল জমা দিয়ে দিয়েছিলেন। আচমকা সামনে বসে থাকা অন্য এক সহকর্মীর কোমর থেকে একে-৪৭ তুলে নিয়ে তিনি চালাতে থাকেন। গুলি চালান সুরজিৎও। তাঁর একটি গুলি মাসাদুলের বাঁ পাঁজর ফুটো করে যায়। গুলি লাগে সুরজিতেরও। দু’জনেরই মৃত্যু হয়।
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাসিন্দা সুরজিতের শেষকৃত্য করতে এ দিনই নদিয়ার নবদ্বীপে এসেছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। সেখানে সুরজিতের কাকা বিশ্বজিৎ সরকার এবং ভগিনীপতি বিমল দে (যিনি নিজেকে সিআইএসএফের সদস্য বলেন) দাবি করেন, বুধবার সকালে ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুরের কাদেনা গ্রামের ছাউনিতে মাওবাদীরা হানা দিলে অস্ত্রাগারে ছুটেছিলেন জওয়ানেরা। তার আগেই মাওবাদীদের গুলিতে ছ’জন নিহত হন। দাবির সমর্থনে তাঁরা সাংবাদিকদের একটি ভিডিয়োও দেখান। সেখানে একটি ঘর দেখা যাচ্ছে, যার এক দিকে অস্ত্রশস্ত্রের বাক্স রাখা। মাটিতে রক্তের চিহ্ন, দেওয়ালে গুলির দাগ। তবে এই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার পত্রিকা যাচাই করতে পারেনি। যদিও বাবা পীযূষ সরকার এমন কোনও দাবি করেননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘দেশের হয়ে কাজ করতে গিয়ে মারা গেলে মেনে নিতাম। সহকর্মীর গুলিতে মারা গেল, এটা মেনে নিতে পারছি না।’’
(সহ প্রতিবেদন: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, কেদারনাথ ভট্টাচার্য)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy