Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Jadavpur University

কেন্দ্রের কোপে ব্রাত্য বাংলা ভাষা

কেন্দ্রের হঠাৎ আপত্তিতে ১০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান বা রুসা প্রকল্পে প্রায় ৬০ কোটি টাকা মাঝপথে আটকে গিয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২১ ০৬:৩৬
Share: Save:

জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি নিয়ে অমূল্য গবেষণার কাজ বিশ বাঁও জলে! বাঙালির দুর্গাপুজোর ধারাবিবরণীর আর্কাইভ তৈরিও থমকে গিয়েছে। বাংলায় অনলাইন পূর্ণাঙ্গ বিবর্তনমূলক অভিধানের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য অনুদানের টাকায় চলছে।

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নানা প্রকল্প বা করোনাকালে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত উদ্ভাবনী কাজেরও দফারফার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ঘোর সঙ্কটে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্রের হঠাৎ আপত্তিতে ১০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান বা রুসা প্রকল্পে প্রায় ৬০ কোটি টাকা মাঝপথে আটকে গিয়েছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রকল্প ও যাদবপুরে আধুনিকীকরণের নানা কাজও থমকে। অভিযোগ, ডক্টরাল, পোস্টডক্টরাল ফেলো, প্রকল্প বা গবেষণা সহায়ক-সহ প্রায় ৪৫০ জনের জীবিকা সঙ্কটে। রুসা-র টাকায় শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্র ও যাদবপুরের সংযোগের ‘ইনকিউবেশন সেন্টার’ কিংবা টেগোর কালচারাল কমপ্লেক্স উন্নয়নেরও পরিকল্পনা ছিল।

সভায়-মঞ্চে রাতদিন দিল্লির শাসক শিবিরের বাংলা সংস্কৃতি-চর্চার বিস্ফোরণের উল্টো পিঠেই দগদগে এ অবহেলার ছবি। ভোটের হাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর মুখেও নিত্য বাঙালি মনীষীদের নামগান বা বাংলা ভাষার ফুলঝুরি। কিন্তু আসল কাজের ক্ষেত্র গবেষণার অঙ্গনই কি তবে দুয়োরানি? যাদবপুর কর্তৃপক্ষের দাবি, গবেষণার মাঝপথে বরাদ্দ টাকার কিস্তি আটকে যাওয়া অভূতপূর্ব। যাদবপুর-সহ দেশের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে রুসা-২ প্রকল্পের মেয়াদ ৩১ মার্চ সম্পূর্ণ হবে। কেন্দ্র-রাজ্য মিলে ৬০:৪০ অনুপাতে রাজ্যের মাধ্যমে রুসা-র টাকা দেয় কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্র আগে টাকা না-দিলে রাজ্য বাকিটা দিতে পারবে না। প্রথম কিস্তির ৪১.৬৭ কোটিতে কেন্দ্র ২৫ কোটি, রাজ্য দেয় ১৬.৬৭ কোটি। এর পরে
জোটেনি কানাকড়ি।

কেন্দ্রের শিক্ষা সচিব অমিত খারে কিন্তু বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারকে বলেছেন, “আমাদের তহবিলে টাকার অভাব নেই। আগের কিস্তির খরচের নথি (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) পেলেই বাকিটা মিটিয়ে দেব।” কিন্তু গত সেপ্টেম্বরেই কেন্দ্রীয় আমলারা আগের কিস্তির শতকরা ৭৫ ভাগের ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তবু ২০২০-র মার্চে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আসেনি। জুলাইয়ে ভার্চুয়াল বৈঠকে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অনুমোদিত পদে নিযুক্তি ৭০ শতাংশের কম। এটা ঠিক না-হলে কিস্তির বাকি টাকা দেওয়া যাবে না। কিন্তু রুসা-র প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির জন্য ৭০ শতাংশ পদ ভর্তির শর্ত ছিলই না বলে রুসা-র জাতীয় স্তরের কোঅর্ডিনেটরকে গত সেপ্টেম্বরে চিঠিতে জানান যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তিনি আশ্বাসও দেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। অতিমারির সমস্যা মিটলেই ৯৩ শতাংশ পদ ভর্তি হবে।

সুরঞ্জনবাবু বলেন, “গবেষণায় অর্ধেক টাকা দিয়ে হাত গুটিয়ে নিলে আগের টাকাটাও জলে যায়। সেটাও জনগণের করের টাকাই! রুসা-র মেয়াদ বাড়ল অথচ টাকা এল না। করোনার সময়ে বহু গবেষকের উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেল।” সরকারি সূত্রের খবর, রুসা-১ প্রকল্পেও পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পুরো টাকা পায়নি। তবে যাদবপুরের ক্ষেত্রে বঞ্চনার অঙ্কটি বিশাল। রুসা-র টাকায় বাংলা অনলাইন বিবর্তনমূলক অভিধান শব্দকল্প-এর কিছুটা কাজ হয়েছিল শিক্ষাবিদ সুকান্ত চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে। হতাশ শিক্ষাবিদের কথায়, “যাদবপুরের এ দেশের প্রথম সারির উৎকর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠাও গবেষণার সুবাদে। অনেক দিন বাদে নানা প্রকল্পে কাজের জোয়ার এসেছিল। গবেষণার টাকা এ ভাবে বন্ধ হওয়াটা ভাল সঙ্কেত নয়।” যাদবপুরের রুসা প্রকল্পের মনিটরিং কমিটির সদস্য স্যমন্তক দাসও বলছেন, “নানা ধরনের ইন্টারডিসিপ্লিনারি প্রকল্পের কাজ থমকে যাওয়ায় জাতীয় শিক্ষানীতির বহুচর্চিত রূপরেখাই ধাক্কা খেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE