Advertisement
E-Paper

ভার্চুয়াল বৈঠকে উপাচার্যদের অনুপস্থিতি নিয়ে তোপ রাজ্যপালের, পাল্টা পার্থর

রাজ্যের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চাযদের ভার্চুয়াল বৈঠকে ডাকেন রাজ্যপাল। কিন্তু ওই বৈঠকে ছিলেন মাত্র এক জন উপাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২০ ১৬:২৯
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জগদীপ ধনখড়।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জগদীপ ধনখড়।

আচার্য-রাজ্যপালের ডাকা ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেননি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যেরা। এ নিয়ে বুধবারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সেই সুর আরও কয়েক ধাপ চড়ালেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সরাসরি বিঁধলেন রাজ্যকে। বললেন, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ‘রাজনৈতিক খাঁচাবন্দি’। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নও তুলেছেন রাজ্যপাল। সেই সঙ্গে ‘বিদ্রোহী’ উপাচার্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। রাজ্যপালের পাল্টায় মুখ খুলেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ, রাজ্যপাল ‘মায়াকান্না কাঁদছেন’। ছাত্রদের কল্যাণে রাজ্যপাল কী করেছেন বৃহস্পতিবার সে প্রশ্নও তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, বিধি অনুযায়ী উপাচার্যরা ভার্চুয়াল বৈঠকে থাকেননি।

করোনা পরিস্থিতিতে পডুয়াদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গতকাল বুধবার রাজ্যের ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপার্চাযদের বৈঠকে ডেকেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই বৈঠকে এক জন উপাচার্য ছাড়া কেউই উপস্থিত হননি। আর তা নিয়ে রাজ্যপাল এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে নতুন করে সঙ্ঘাতের আবহ তৈরি হয়েছে। গতকালই এ নিয়ে টুইটারে ক্ষোভ উগরে দেন ধনখড়। লেখেন, ছাত্রস্বার্থেই উপাচার্যদের বৈঠকে যোগ দেওয়া উচিত। তাঁর বক্তব্য, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ‘রাজনৈতিক খাঁচাবন্দি’ করে রাখলে ফল ভয়াবহ হতে বাধ্য। এমন ব্যবস্থা আত্মঘাতী। উপাচার্যদের কাছে আইন কি কারও ‘অঙ্গুলিহেলন’? বুধবারই ইঙ্গিত করেছিলেন রাজ্য সরকারের দিকে। এ দিন তোপের মুখ তিনি সে দিকেই ঘুরিয়ে দিয়েছেন।

জগদীপ এ দিন ফের অভিযোগ করেছেন, রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা ‘রাজনৈতিক খাঁচাবন্দি’। করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। জগদীপ দাবি করেছেন, ‘‘যদি রাজ্য সরকার ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার উদ্বেগ খারিজ করে দেয়, তা হলে ভুল হবে। সরকারকে জন সাধারণ এবং তাঁদের সন্তানদের দায়িত্ব সম্পর্কে সরকারকে সচেতন করে দেওয়া আমার চিন্তা এবং দায়িত্ব।’’ তাঁর দাবি, করোনার মতো অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে ‘সরকারি উদাসীনতা দেখে পড়ুয়াদের মন বিষাদে ভরে গিয়েছে।’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয় এমন সরকার প্রতিদিনই পড়ুয়াদের অশান্ত করে তুলছে।’’

আরও পড়ুন: স্পিকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গেলেন শচীন পাইলট

রাজ্যপালের দাবি, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে সমস্যার মধ্যে পড়েছে তার গভীরতা মাপতেই তিনি ওই ভার্চুয়াল বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু রাজ্য ‘নখ-দাঁত বার করে’ তা বানচাল করতে নেমে পড়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। এর পর তাঁর ধারাবাহিক প্রশ্ন, ‘‘যদি সরকার ক্রমাগত অস্বীকার করতে থাকে তা হলে কী হবে? কে এটা করবে? আমি কাউকে এটা করতে দেখছি না? আইনসম্মত প্রশ্ন তোলা কি রাজ্যপালের পক্ষে অনুপযুক্ত?’’ তার পরেই তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই অতিমারির সময়ে পড়ুয়াদের সঙ্কট ভুলে যাওয়া হচ্ছে।’’

করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ। সেখানকার পড়ুয়ারা কী ভাবে পড়াশোনা চালাবেন, কী ভাবে পরীক্ষা দেবেন— সেই সব বিষয়ই ভার্চুয়াল আলোচনায় তুলতে চেয়েছিলেন জগদীপ। এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে ফের এক বার সেই প্রশ্নগুলি ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। বিশ্বব্যাপী এই সঙ্কটের মধ্যেও আমেরিকা এবং ইউরোপের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে কী ভাবে পড়াশোনা চলছে সে সম্পর্কে উপাচার্যরা খোঁজখবর নিয়েছেন কি না সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। এ সব বিষয়ে সরকার কী পদক্ষেপ করছে তা স্পষ্ট করে জানানো উচিত বলে মনে করেন রাজ্যপাল।

আরও পড়ুন: এখন বিজেপির কাছ থেকেও আমরা গণতন্ত্র শিখব?

রাজ্যপালের বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সব কিছুই রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে রাজ্যপাল মায়াকান্না কাঁদছেন। বিধি অনুযায়ীই উপাচার্যরা ভার্চুয়াল বৈঠকে থাকেননি।’’ এর সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলছেন রাজ্যপাল।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো সব পরামর্শই ছাত্রদের কথা ভেবে বলেও এ দিন দাবি করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এর সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘‘পরীক্ষা পিছনোর জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি লিখেছি।’’ জগদীপ ধনখড়ের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাজ্যপাল বলছেন তিনি ছাত্রদের নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু ছাত্রদের কল্যাণে উনি কী করেছেন?’’ তিনি স্পষ্ট ভাবে জানান, ‘‘বিধি অনুযায়ী উপাচার্যরা ভার্চুয়াল বৈঠকে থাকেননি।’’

ভার্চুয়াল বৈঠক বিতর্কে মুখ খুলতে শুরু করেছে বিরোধীরাও। রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলছেন, ‘‘আচার্যের সঙ্গে উপাচার্যদের ভার্চুয়াল বৈঠক হলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না। দুই পক্ষের মধ্যে এমন বিদ্বেষ রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রের জন্য ভাল কিছু ডেকে আনবে না।’ এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের কাছে কী বার্তা গেল?’’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে অধীরের প্রশ্ন, ‘‘এই ধরনের অসার কাজে প্ররোচনা না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কেন সেগুলি নিয়ে প্রতিবাদ করছেন না?’’

উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে |

Jagdeep Dhankhar West Bengal Education Partha Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy