Advertisement
E-Paper

ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে বিদ্ধ বাংলা

বহিষ্কৃত হওয়ার পরে দলের অন্দরের কিস্সা প্রকাশ্যে এনে ফেললেন জগমতী সঙ্গওয়ান। আজ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদ্যপ্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক পোস্টে আরও বেআব্রু হয়ে গেল জোট-প্রশ্নে সিপিএমের ভিতরের ফাটল!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ১০:৩৫

বহিষ্কৃত হওয়ার পরে দলের অন্দরের কিস্সা প্রকাশ্যে এনে ফেললেন জগমতী সঙ্গওয়ান। আজ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদ্যপ্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের ফেসবুক পোস্টে আরও বেআব্রু হয়ে গেল জোট-প্রশ্নে সিপিএমের ভিতরের ফাটল!

আলিমুদ্দিনের নেতারা পার্টি লাইন অমান্য করে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করলেও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তে কেন তাঁদের বিরুদ্ধে নরম শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে গত কাল প্রশ্ন তুলেছিলেন জগমতী। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক চলাকালীনই তিনি ইস্তফা দিতে চান। তার পর মাঝপথে বৈঠক ছেড়ে চলে এসে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, তিনি দলই ছেড়ে দিচ্ছেন। এর পর রাতে তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিএম।

এ দিন ফেসবুক পোস্টে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর নাম না করে জগমতীর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় কমিটি যাতে আলিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে দলের রাজনৈতিক লাইন ভাঙার অভিযোগ না তোলে, তা নিশ্চিত করতেই ‘ব্ল্যাকমেল’ করার পথ নিয়েছিলেন ওই দুই নেতা।

জগমতীর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে যে জোটের রণকৌশল নেওয়া হয়েছিল, এ বার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সেটাই ছিল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য। পলিটব্যুরোর তরফে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত পেশ করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সামনে। সেই নোটে বলা হয়েছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী রণকৌশল দলের রাজনৈতিক লাইন ভেঙেছে।’ দলীয় সূত্রের খবর, প্রকাশ কারাট নিজে ওই নোটটি কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ করেন। জগমতী জানান, সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি পলিটব্যুরোর সংখ্যালঘু অংশের মত পেশ করেন। যাতে বলা হয়, ‘আলিমুদ্দিনের রণকৌশল দলের লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।’ জগমতীর অভিযোগ, এর পর পশ্চিমবঙ্গের দুই নেতা বলেন, যদি পলিটব্যুরোর সংখ্যাগরিষ্ঠের মত গ্রহণ করা হয়, তা হলে তাঁরা পদত্যাগ করবেন। বস্তুত, দলীয় সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোর মধ্যে বিমানবাবু বলেছিলেন, দলের লাইন ভাঙার কথা প্রস্তাবে বলতে হলে বাংলার রাজ্য কমিটি ভেঙে দিয়ে কারাটেরা নতুন কমিটি গড়ে দিল্লি থেকে দল চালান! আর সূর্যবাবু বলেছিলেন, তাঁদের এ ভাবে কাঠগড়ায় তোলা হলে তিনি দায় মেনে নিয়ে রাজ্য সম্পাদকের পদ ছেড়ে দেবেন। বাংলার নেতাদের এই হুঁশিয়ারিকেই ‘ব্ল্যাকমেল’ বলছেন জগমতী।

জগমতীর দাবি, বাংলার নেতাদের হুমকি সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় কমিটির বিতর্কে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য বলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে পার্টি লাইন ভাঙা হয়েছে। তার ফলে তাঁদের রাজ্যে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পরেও কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতিতে দলের লাইন ভাঙা হয়েছে বলে উল্লেখ না-করে শুধু সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না বলেই ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে এক দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে অস্বীকার করা হয়েছে। আবার দলের লাইন ভাঙারজন্য কাউকে দায়ীও করা হয়নি— অভিযোগ জগমতীর।

সূর্যবাবু অবশ্য পাল্টা মন্তব্যে যেতে চাননি। শুধু বলেছেন, ‘‘উনি ওঁর কথা বলেছেন। আমি এ নিয়ে একটা কথাও বলব না।’’ মুখ খোলেননি বিমানবাবুও। তবে দলের একটি অংশের প্রশ্ন, জগমতী পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন না। পলিটব্যুরোর ভিতরের বিভাজনের কথা তাঁকে দিয়ে বলিয়ে কেউ কি আসলে ইয়েচুরি-সূর্যদের পিছনে কলকাঠি নাড়ছেন?

জগমতীর পোস্টেই স্পষ্ট, দলে ইয়েচুরি ও কারাটের মধ্যে এখনও ফাটল কতটা চওড়া! পলিটব্যুরো প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট দলের লাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু সেটা যে আসলে ইয়েচুরি তথা বাংলার নেতাদের দাবিতে মেনে নেওয়া সংখ্যালঘু অংশের মত, তা খোলসা করে দিতেই কারাট সংখ্যাগরিষ্ঠের মত হিসেবে পাল্টা নোট পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। তাতে পার্টি লাইন ভাঙার অভিযোগ তুলতে না-পারলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক লাইন যাতে সংশোধন করা হয় তা নিশ্চিত করেছেন কারাট। আবার ইয়েচুরি পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, এখন ভোট নেই, ফলে জোটের প্রশ্নও আসছে না। কিন্তু তৃণমূলের হামলা রুখতে কংগ্রেসের সঙ্গে আন্দোলন চলবে। কারাট শিবিরের দাবি, তৃণমূলের হামলা ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গে ভবিষ্যতে কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে যাবে না আলিমুদ্দিন। ফেসবুকে জগমতী লিখেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট পার্টি লাইন ভাঙার জঘন্যতম উদাহরণ। ভোটের ফলই বলে দিয়েছে, মানুষ সুবিধাবাদী জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাঁর কথায়, ‘‘জনগণের পার্টির স্বার্থের বিরুদ্ধ মত গ্রহণ করতে আমার বিবেক সায় দেয়নি।’’

Jagmati Sangwan CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy