Advertisement
E-Paper

মমতার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন জেটলির

ইটের বদলে পাটকেল! আর সেটা এল এমন এক জনের কাছ থেকে, যাঁর সঙ্গে মাত্র ক’দিন আগেই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করতে গিয়েছিলেন তিনি! ইট ছুড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাটকেলটা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। মমতা খাগড়াগড়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। জেটলি আজ মমতার দেশপ্রেম নিয়েই কটাক্ষ করলেন।

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪৮

ইটের বদলে পাটকেল! আর সেটা এল এমন এক জনের কাছ থেকে, যাঁর সঙ্গে মাত্র ক’দিন আগেই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করতে গিয়েছিলেন তিনি!

ইট ছুড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাটকেলটা দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। মমতা খাগড়াগড়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। জেটলি আজ মমতার দেশপ্রেম নিয়েই কটাক্ষ করলেন।

তৃণমূলের আক্রমণ অবশ্য তাতে থামেনি। দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন এ বার আঙুল তুলেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং সঙ্ঘের দিকে।

ডেরেকের এমন মন্তব্যে কিন্তু দলের মধ্যেই একটি অংশ অশনি সঙ্কেত দেখতে শুরু করেছে। তাদের বক্তব্য, দল যে চাপের মধ্যে দিশা হারাচ্ছে, এই কথায় সেটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের আরও আশঙ্কা, এর ফলে দলের লাভের বদলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “শীতকালীন অধিবেশনের আগে ওই মন্তব্য করে বিজেপি-সহ বিরোধীদের হাতেই উল্টে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী!”

এক দিকে, সারদা কাণ্ডে সিবিআই দলের প্রভাবশালীদের ধরপাকড় শুরু করেছে। অন্য দিকে, পুজোর পর থেকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়েও চাপে তৃণমূল। সেখানে প্রথমে দলের সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের সঙ্গে জড়িয়েছে জামাতের নাম, পরে দলের আরও কয়েক নেতার। আর এই দুইয়ের যোগফলে গত ক’দিনে মমতাকে যথেষ্ট দিশাহারা লেগেছে। তাঁর ঘনিষ্ঠরাও সে কথা মেনে নিচ্ছেন। কখনও বিজেপি, কখনও সিপিএম, কখনও সংবাদমাধ্যম তাঁর নিশানা থেকে বাদ যাচ্ছে না কেউই। এরই মধ্যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে গত কাল তিনি আঙুল তুলেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর দিকে। যে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রকৃত চিত্রটিকে বেআব্রু করে দিয়েছে, গত কাল দলীয় কর্মিসভায় মমতা সে প্রসঙ্গে আচমকাই অভিযোগ করে বসেন, এর পিছনে হাত রয়েছে ‘র’-এর!

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন আজ খোদ নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘নম্বর টু’ অরুণ জেটলি। নিজের ব্লগে খাগড়াগড় প্রসঙ্গ টেনে তাঁর বক্তব্য, এই ধরনের মন্তব্যে দুষ্কৃতীরা আরও মদত পেয়ে যায়। এমন বক্তব্য মোটেও জাতীয়তাবাদের সঙ্গে খাপ খায় না।

জেটলির এমন আক্রমণ তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে কিছুটা অপ্রত্যাশিত। গত সপ্তাহে দিল্লি সফরে এসে মমতা যে তিন বিজেপি শীর্ষ নেতার সঙ্গে দেখা করেছিলেন, তার মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। মমতা একে সৌজন্য সাক্ষাৎকার বললেও বিরোধীরা তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। সেই জেটলি আজ রীতিমতো কড়া সুরেই আক্রমণ করেছেন মমতাকে। তাঁকে ‘মমতাদিদি’ সম্বোধন করেও জেটলি লিখেছেন, “এনআইএ ইতিমধ্যেই একাধিক লোককে গ্রেফতার করেছে। তারা দেশের শত্রু। পশ্চিমবঙ্গের সরকার বা গোয়েন্দারা এমন কোনও তথ্য দিতে পারেননি, যা দেখে প্রমাণ হয়, এটি সাজানো ঘটনা। যদি এমন কোনও প্রমাণ না-ই থাকে, তা হলে কেন দিদি এ ধরনের অভিযোগ তুলছেন?” মমতার মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন ও দেশবিরোধী বলে আখ্যা দিয়ে জেটলি ব্লগে লিখেছেন, “এই ধরনের অভিযোগ আসলে প্রকৃত অপরাধীদের সাহায্য করে।”

পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহও আজ খাগড়াগড় নিয়ে মমতাকে বিঁধে একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের উদ্দেশে। একই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ, “জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে মমতা ও তাঁর দলের আত্মসমালোচনা করা উচিত।” মমতার কথার কড়া সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও। বিজেপি সূত্রের খবর, আসন্ন অধিবেশনে দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও আলোচনা হলে সেখানে খাগড়াগড় কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছে দল।

তৃণমূল অবশ্য চুপ করে বসে নেই। সারদা থেকে খাগড়াগড় চড়া সুরেই বিজেপির আক্রমণের জবাব দিয়েছে তারা। রাজ্যসভায় দলের সচেতক তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন দাবি করেছেন, আগামী দু’দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি খাগড়াগড় বিস্ফোরণ নিয়ে জেটলিকে বিঁধে মমতার সুরেই ডেরেকও জানান, এর পিছনে বিজেপির হাত রয়েছে। তাঁর কথায়, “এটা কাকতালীয় হতে পারে না। বর্তমান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এক জন আরএসএস সমর্থক। এই সব পরিকল্পনা আরএসএসের সদর দফতরেই হয়।” শুধু তাই নয়, সিদ্ধার্থনাথ সিংহের আক্রমণের জবাব দিতে তাঁর ধাঁচেই বিজেপি নেতৃত্বের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ডেরেক। তাঁর কটাক্ষ, “বিজেপি লোকসভা ভোটে কত কালো টাকা ব্যবহার করেছে, তা দেশের মানুষ জানতে পারলে দলটাই কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যাবে!” তৃণমূলকে দেশের দরিদ্রতম দলগুলির অন্যতম বলেও দাবি করেছেন ডেরেক।

শুধু বিবৃতি বা পাল্টা জবাব দেওয়াই নয়। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেও বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়ানোর পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। সরকারের একাধিক নীতির বিরোধিতা করে সংসদের ভিতরে-বাইরে সরব হবে বলে জানানো হয়েছে দলের তরফে। ইতিমধ্যেই স্পিকার ও সংসদীয় মন্ত্রীর পক্ষ থেকে ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে গরহাজির থেকেছে তৃণমূল। রাজ্যসভায় কালো টাকার প্রশ্নেও সরকারকে নোটিস দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। সিবিআইকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে ২৫ নভেম্বর সংসদে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভও দেখাবেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

সারদা, খাগড়াগড়-সহ একের পর এক ঘটনায় কেন্দ্রকে নিশানা করতে গিয়ে মমতা হাতিয়ার করতে চেয়েছেন সিবিআইকে। অথচ এই মমতাই বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন প্রায় সব ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি জানাতেন! আজ সিবিআই নিয়ে মমতার দাবি খারিজ করে জেটলি লিখেছেন, “তৃণমূলের কিছু নেতা বাড়তি টাকা কামাতে চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে। এই চিটফান্ডগুলি সাধারণ মানুষের অর্থ লুঠ করেছে। একটি নতুন দল হিসাবে তৃণমূলের উচিত ছিল ওই ধরনের লোকেদের দল থেকে বের করে দেওয়া। কিন্তু দুঃখজনক হল, তা করার বদলে মমতাদিদি ওই নেতাদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন!”

এর মধ্যেই অবশ্য মমতার প্রতি একটু সৌজন্যের সুরে বিজেপি নেতা তথা সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু বলেছেন, “দয়া করে বোঝার চেষ্টা করুন, সিবিআইয়ের কাজকর্মের ব্যাপারে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। এই সরকার সিবিআইয়ের কাজে নাক গলানোয় বিশ্বাস করে না।”

Arun Jaitley bjp tmc mamata remark state news online state news Mamata Banerjee modi government finance minister criticizes state government Khagragarh blast case saradha case Derek O'Brien
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy