মাল নদীতে হড়পা বান। ফাইল চিত্র।
মাল নদীতে এর আগেও হড়পা বানের ঘটনা ঘটেছে। তার জেরে বন দফতরের তৈরি মালবাজার উদ্যান কার্যত পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই নদী হড়পা-প্রবণই। তার প্রধান কারণ, এ নদীর ক্যাচমেন্টে মিশন হিলস অঞ্চল। বাগরাকোটের উপর দিকে এটি হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে। এখানে অল্প সময়ে ব্যাপক মাত্রায় বৃষ্টিপাত হয়। এই ক্যাচমেন্ট বড় এলাকা নিয়ে নয়। আয়তনে কম এবং মালবাজার শহর থেকে বেশি দূরেও নয়। তাই বৃষ্টির পরে এক-দেড় ঘণ্টার মধ্যে প্রবল বেগে পাহাড়ের জল নেমে আসে।
ডুয়ার্স অঞ্চল আমার দীর্ঘ দিনের চেনা। জয়ন্তীর দিকে বালা, ডিমা, সুকৃতি, পাগলি, লিস, ঘিস— প্রায় সব নদীতেই এ ধরনের হড়পা বান কম-বেশি ঘটে। তার মধ্যে মাল নদী বেশি হড়পা-প্রবণ। কারণ, তার ক্যাচমেন্ট লম্বাটে আকারের হওয়ায় জল দ্রুত নেমে আসে।
স্থানীয় লোকজন, চা-বাগানের আদিবাসী বাসিন্দারা বিষয়টি জানেন। এ নিয়ে তাঁরা খোঁজও রাখেন। কারণ, নদীখাত দিয়ে তাঁদের চলাফেরা করতে হয়। কালো মেঘ দেখে তাঁরা বুঝে নিতে পারেন, কোথায় বৃষ্টি হলে কোন নদীতে আচমকা জল বাড়তে পারে।
বিপদ আরও বাড়িয়েছে অবৈধ ও অপরিকল্পিত ভাবে নদীখনন, বালি-পাথর তোলা, বসতি স্থাপন। এর ফলে হড়পা বানে নদীস্রোতের গতিপথ আচমকা বদলে জল অন্য কোনও দিকে চলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
বুধবার বিসর্জনের সময় ঘটনাটি ঘটল। তখন পুজো নিয়ে আলাদা উন্মাদনা ছিল। নাচ-গান, ব্যস্ততার কারণে হয়তো স্থানীয় মানুষ তেমন চিন্তাভাবনা করেননি। বুঝে উঠতে পারেননি, এমন ভাবে জল বেড়ে যাবে। তা না হলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না। শুনছি, নদীর একাংশে গতি আটকে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের রাস্তা করা হয়েছিল। সেটাও বিপজ্জনক। এর ফলে নদীর জল ছড়িয়ে যেতে না পেরে যে দিকে ফাঁকা পেয়েছে, সে দিক দিয়ে প্রবল স্রোতে বেরিয়েছে। নদীর মধ্যে এ সব কিছু না করাই ভাল। সেটা বিপজ্জনক। প্রশাসনের তরফেও সম্ভবত আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার কাজে কিছুটা অবহেলা ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনা করে লোকজনকে নদীতে নামতে না দেওয়া বা ভাসানের সময় পিছোনো, এ সব করা হয়নি। পুলিশকর্মী পর্যাপ্ত ছিলেন কি না, রয়েছে সেই প্রশ্নও। সব মিলিয়ে এত বড় অঘটন!
পরিবেশবিদ ও প্রাক্তন প্রধান, ভূগোল বিভাগ, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy