ঘন সবুজের আবরণ, এ গাছ থেকে ও গাছে উড়ে বেড়ায় রঙিন পাখির দল। জঙ্গল চিরে যাওয়া নদী খানিক দূরের নীলপাহাড়। পশ্চিম মেদিনীপুরের আনাচ-কানাচে এই অরণ্য-মোহই পর্যটক টানত এক সময়। গত কয়েক দশকে সেই আনাগোনা কমে গিয়েছে অনেকটাই। অথচ জেলায় এমন বহু জায়গা রয়েছে, যেখানে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করলেই গড়ে উঠতে পারে পর্যটন।
সে কথা মাথায় রেখেই নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার ‘ট্যুরিস্ট স্পট’ নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের ওয়েবসাইটে তা আপলোড করা হয়েছে। শীঘ্রই তা দেখতে পাওয়া হবে ইউটিউবেও। সম্প্রতি জেলা সফরে এসে তথ্যচিত্রটি দেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক বৈঠকে ছবিটি দেখে খুশি মুখ্যমন্ত্রী। সে দিন পর্যটনের প্রসারে জেলায় আরও ভাল কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “এক তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়েছে। আর ওই ট্যুরিস্ট স্পটগুলো সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র কয়েক মাস আগেই এই তথ্যচিত্র তৈরির পরিকল্পনা হয়। জেলায় পর্যটনের বিষয়টি দেখভাল করেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক সুমন্ত রায়। তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন জেলাশাসকের সঙ্গে।
তারপরেই শুরু হয় কাজ। জেলায় কোন কোন জায়গায় পর্যটন পরিবেশ রয়েছে, তা অনেকে জানতে পারবেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রচুর বেড়ানোর জায়গা রয়েছে। রাজ্যের মানুষই তা জানেন না। অথচ ঝাড়খণ্ডের কথা জানেন। এই তথ্যচিত্র সাহায্য করবে এ রাজ্যের পর্যটন প্রসারে।” একের পর এক পর্যটন কেন্দ্রের ছবি তুলে ধরা হয়েছে তথ্যচিত্রে। বেলপাহাড়ির ঘাঘরা, চিল্কিগড়, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, পাথরা, কর্ণগড়, মোহবনি, নাড়াজোল রাজবাড়ি, ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানা, ডিয়ার পার্ক, কুড়ুমবেড়া দুর্গ, লালজল, একাধিক ইকো-পার্ক, বীরসিংহপুর, নয়া, কাঁকড়াঝোড়, মোগলমারি, হাতি বাড়ি, গনগনির পাশাপাশি পুরোনো মন্দির, মসজিদ ও গির্জার ছবিও রয়েছে। সব মিলিয়ে মোট সাত মিনিটের তথ্যচিত্র।
মাওবাদী-পর্বের অশান্তির কারণে পর্যটক জঙ্গলমহল বিমুখ হন। এখন আবার বিভিন্ন জায়গায় ভিড় জমছে। জঙ্গল আর পাহাড়ে স্নিগ্ধ পরিবেশে পশ্চিমের এই বনাঞ্চলের জুড়ি নেই। এক সময় বহু ছবির একাধিক দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তারা বলছেন, “সপ্তাহান্তে দু’দিন জঙ্গলমহলে যে কেউ আসতে পারেন। তবে কী কী পরিকাঠামো রয়েছে, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। তাই আসেন না।’’ সব সময় ভিড় খুব বেশি থাকে না এই সব এলাকায়। এই ছবিটা বদলানোর সব রকম চেষ্টা চলছে বলে প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি। তার মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে ছিলেন পর্যটন সচিব অজিত বর্ধন। জানা গিয়েছে, সেই বৈঠকে জেলার জন্য আর কী কী করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে অজিতবাবুকে পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী আরও কিছু বনবাংলো তৈরি হতে পারে বলে খবর। ইতিহাসকে নিয়েই যেখানে একের পর এক এলাকা পর্যটকদের আকর্ষণ হয়ে ওঠে, সেখানে জেলার বেশ কিছু এলাকা যেন হারিয়ে ফেলছে নিজের ইতিহাস। স্মৃতি যেন ক্রমেই ধূসর হচ্ছে। এই তথ্যচিত্রের দৌলতে জেলা পর্যটনে কতটা জোয়ার আসে, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy