যত দিন না ব্লক ও টাউন স্তরে নতুন সভাপতিদের নাম ঘোষণা হচ্ছে, তত দিন অন্য দল থেকে কাউকে তৃণমূলে যোগদান করানো যাবে না। সভাপতি ঘোষণার পরে যদি যোগদান করাতে হয়, তা হলে জেলা কমিটির পাশাপাশি পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাককেও জানাতে হবে। অবগত করতে হবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরকেও। এই মর্মে ব্লক সভাপতি, বিধায়ক এবং শাখা সংগঠনের জেলা সভাপতিদের নির্দেশিকা পাঠাল জঙ্গিপুর জেলা তৃণমূল।
গত রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) এই নির্দেশিকা জারি করেছেন তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা সাংসদ খলিলুর রহমান। রাজ্যের সব জেলায় যে এমন নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে তেমন নয়। সেই সূত্রেই কৌতূহল, কেন জঙ্গিপুরে এমন নির্দেশিকা জারি করল? খলিলুর আনুষ্ঠানিক ভাবে বলেছেন, ‘‘পার্টি বলেছে বলেই করেছি।’’ কিন্তু অন্যত্র তা হল না কেন? সে প্রসঙ্গে খলিলুর কিছু বলতে পারেননি। তবে শাসকদলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, ‘‘কয়েকটি সাংগঠনিক জেলা রাজনৈতিক ভাবে নানা কারণে স্পর্শকাতর। তার মধ্যে জঙ্গিপুর অন্যতম। সেই তালিকা অনুযায়ী বাকি জেলাতেও এই ধরনের নির্দেশিকা জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
জঙ্গিপুরের তৃণমূলের নির্দেশিকায় স্পষ্ট, যোগদানের বিষয়টিকে সুসংগঠিত ভাবে করাতে চাইছেন অভিষেক। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এর পুরোটাই ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ’। স্পষ্ট করা হয়েছে, শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া কাউকে যোগদান করানো যাবে না। যোগদান করাতে হলেও একাধিক বিষয় দলকে জানাতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে যোগদানের সময়, স্থান, যোগদানকারীর নাম, তিনি কোন দল থেকে আসছেন, সেই দলে তিনি কী পদে ছিলেন।
খলিলুরের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যালয়কে অবগত করেই যা করার করতে হবে। পাশে বন্ধনীর মধ্যে লেখা রয়েছে ‘এবি’। অভিষেকের নাম ও পদবীর ইংরেজি আদ্যক্ষর মিলিয়ে দলে তাঁকে ওই নামেই ডাকা করা হয়। তবে আইপ্যাককেও অবগত করার বিষয়টি অনেকেরই নজর কেড়েছে। তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘ব্লক ও টাউন স্তরে যে রদবদল হচ্ছে, তা আইপ্যাকের সমীক্ষার ভিত্তিতেই করা হচ্ছে। ফলে নতুন যোগদানের ক্ষেত্রেও তাঁদের অভিমত প্রয়োজন। কারণ এলাকাভিত্তিক যাবতীয় সমীক্ষার তথ্য তাদের কাছেই রয়েছে।’’
জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার মধ্যেই পড়ে সামশেরগঞ্জ, সুতির মতো এলাকা। যে সমস্ত এলাকা কয়েক মাস আগে হিংসার আগুনে পুড়েছিল। সে দিক থেকে জঙ্গিপুর রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর। জেলা তৃণমূলের নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, এই সবই ‘বাধ্যতামূলক’। এবং কিছুটা হুঁশিয়ারির সুরেই বলা হয়েছে, অন্যথা হলে বিষয়টি ‘গুরুতর ভাবে বিবেচনা করা হবে’।
গত অগস্ট মাস থেকে সাংগঠনিক জেলাগুলির নেতাদের নিয়ে বৈঠক শুরু করেছিলেন অভিষেক। মঙ্গলবার বসিরহাট এবং যাদবপুর-ডায়মন্ড হারবার দিয়ে সেই পর্ব শেষ হচ্ছে। ইতিমধ্যে কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো কয়েকটি জেলায় ব্লক ও টাউন স্তরে রদবদল সেরে ফেলেছে তৃণমূল। ধাপে ধাপে বাকিগুলিও হবে। তার আগে জঙ্গিপুর জেলা তৃণমূল নেতাদের জানিয়ে দিল, যোগদান করাতে হলে অভিষেকের দফতর এবং আইপ্যাককে জানাতে হবে। এর পর আর কোন কোন জেলা এমন নির্দেশিকা জারি করে, সেটাই দেখার।