বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোন করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। সেই ঘটনার সাড়ে তিন মাস পরে প্রথম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হলেন তিনি। সোমবার ক্যামাক স্ট্রিটে বীরভূমের কোর কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন অভিষেক। বৈঠকে ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, সোমবারের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে সংগঠন নিয়েই। বিতর্কিত অডিয়ো ক্লিপের প্রসঙ্গ ওঠেনি।
বীরভূমে সংগঠন পরিচলনার দায়িত্বে রয়েছে কোর কমিটি। অনুব্রত জেলা সভাপতি পদ হারিয়ে আপাতত কোর কমিটির আহ্বায়ক। তৃণমূল সূত্রে খবর, অডিয়ো-কাণ্ডের বিষয় সোমবারের বৈঠকে আলোচনা হয়নি। তা হওয়ার কথাও ছিল না। কারণ, বিষয়টি এখন আইনের পরিসরে রয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে অনুব্রত ওই ঘটনায় আদালতে হাজির হয়ে আগাম জামিনও নিয়ে রেখেছেন।
অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হতেই দল অনুব্রতকে নিশঃর্ত ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। প্রথমে অস্বীকার করেও পরে ক্ষমা চান অনুব্রত। সূত্রের খবর, পুলিশ আধিকারিকের মা, স্ত্রীকে টেনে অনুব্রত যে ভাষায় হুমকি দিয়েছিলেন, তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। যে মমতা অনুব্রতকে স্নেহের দৃষ্টিতেই দেখেন।
আরও পড়ুন:
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটের সময়ে অনুব্রত গরুপাচার মামলায় জেলবন্দি ছিলেন। কিন্তু অনুব্রতহীন বীরভূমের দু’টি লোকসভা আসন জিততে তৃণমূলকে বিশেষ কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। বরং ২০১৯ সালের তুলনায় দুই আসনেই ব্যবধান বাড়িয়ে জিতেছেন অসিত মাল এবং শতাব্দী রায়।
অনুব্রত, কাজল শেখ, শতাব্দী, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ কোর কমিটির সকল সদস্যই সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বীরভূমের তৃণমূলে কেষ্ট-কাজল দ্বন্দ্বও সুবিদিত। সূত্রের খবর, সোমবারের বৈঠকেও তার ছাপ লক্ষ্য করা গিয়েছে। সিউড়ি, রামপুরহাটের ব্লক সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে কাজল যে নামের কথা বলেন তার পাল্টা ভিন্ন নাম প্রস্তাব করেন অনুব্রত। তবে অভিষেক দু’পক্ষকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বার্তা দিয়েছেন। এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে যে, কোর কমিটি যেমন সংগঠন পরিচালনা করছে, তেমনই করবে। তাতে কোনও বদল এখনই হওয়ার নেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্লকে দল এবং শাখা সংগঠনের সভাপতি বদল হবে। পরামর্শদাতা সংস্থা সমীক্ষার মাধ্যমে কিছু নাম অভিষককে দিয়েছে। সোমবারের বৈঠকে ব্লকভিত্তিক আলোচনার সময়ে নেতাদের থেকেও নাম জানতে চান অভিষেক। তার পরে বলা হয়েছে, সবটা খতিয়ে দেখে নেত্রী মমতা রদবদলে সিলমোহর দেবেন। সোমবার পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করেন অভিষেক। সেখানকার নেতৃত্বকেও কোন্দল সরিয়ে বুথ স্তরে কাজে মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে। ভোটবাক্সে যাতে উন্নয়নের ছাপ থাকে, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।