Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

যশোর রোড সম্প্রসারণে বৈঠক, বাধা কাটবে কি?

কথা চলছে বহু দিন ধরে। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় করে, বেআইনি দখল হটিয়ে এত দিন কাজ এগোতে পারেনি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হয়েছেন। তাই বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোর রোড সম্প্রসারণে সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী ও অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

কথা চলছে বহু দিন ধরে। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় করে, বেআইনি দখল হটিয়ে এত দিন কাজ এগোতে পারেনি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগী হয়েছেন। তাই বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোর রোড সম্প্রসারণে সমীক্ষার কাজ শুরু করে দিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

প্রশাসন সূত্রের খবর, পরিকল্পনা রূপায়ণের নকশা তৈরি করতে আজ, শুক্রবার জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন, স্থানীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসছেন। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সুপারিন্টেনডিং ইঞ্জিনিয়ার রাজীব চট্টরাজ বলেন, ‘‘রাস্তা সম্প্রসারণে সমীক্ষা চলছে। এ সব নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে।’’

বারাসতের ডাকবাংলো মোড় থেকে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যম্ত ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ যশোর রোড (৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক) সম্প্রসারণ করে চার লেন করা হবে। এ ব্যাপারে শাসক দলের জেলা নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, রাস্তার কাজ নির্বিঘ্নে এবং দ্রুত শেষ করতে হবে। সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তাটির উপর রেলগেট রয়েছে যথাক্রমে বারাসতের কাজীপাড়া, অশোকনগর, হাবরা এবং বনগাঁয়। এর উপর সেতু নির্মাণ করা হবে। কারা এই কাজ করবে, দরপত্র ডেকে তা-ও চূড়ান্ত হয়েছে।

কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ৯ কিলোমিটার যাওয়ার পরে বারাসতের ডাকবাংলো মোড়ে যশোর রোড দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। এক দিক চলে গিয়েছে ডালখোলা হয়ে উত্তরবঙ্গে, যার পোশাকি নাম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। অন্যটি যশোর রোড নামেই (৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক) চলে গিয়েছে বনগাঁর পেট্রাপোলে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত। প্রশাসন সূত্রের খবর, অনেক বাধা-নিষেধ পেরিয়ে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চালু হয়েছে। এ বার ৩৫ নম্বর সম্প্রসারণে হাত দেওয়া হচ্ছে।

যশোর রোড শেষ বার সম্প্রসারণ হয়েছিল বছর কুড়ি আগে। তার পর থেকে এই রাস্তার দু’ধারে ফের বসে পড়েছে শয়ে শয়ে হকার। তৈরি হয়েছে অসংখ্য পাকা ও কাঁচা নির্মাণ। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, বাম-ডান দুই আমলেই এই বেআইনি দখল হটাতে বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতি বারই বাধা এসেছে বিস্তর। যশোর রোডের সমান্তরাল একটি বাইপাস তৈরির কাজও বাধার ফলে আটকে রয়েছে মাত্র তিনটি জায়গায়।

সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, এ বারেও তার পুনরাবৃত্তি হবে না তো?

প্রশাসনের একটি অংশ এই প্রশ্নেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। তাঁদের ধারণা, দীর্ঘ পথে দখল তুলতে গেলে বা বাড়ি ভাঙতে গেলে শাসক দলের কোনও গোষ্ঠীর পক্ষে বাধা আসতে পারে। প্রশাসনের অন্য একটি অংশের মত, এ বার জাতীয় সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণে নজর দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তাই দলের কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে না।

তবে আত্মবিশ্বাসী খাদ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বারাসত, হাবরা, বনগাঁয় যে পাঁচটি রেলসেতু হবে, তা যতটা সম্ভব দীর্ঘ করে জনাকীর্ণ জায়গাগুলিকে এড়ানো হবে। বারাসতে রাস্তা সংলগ্ন মাছের বাজার পিছিয়ে দেওয়া হবে। আবার হাবরার মতো জায়গায় ‘হকার্স কর্নার’ করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘কাজে তদারকির দায়িত্বে থাকবে স্থানীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু রাস্তা চওড়া করতেই হবে।’’ আরও জানান, সম্প্রসারণের জন্য রাস্তার দু’ধারের হাজার খানেক গাছ কাটতে হবে। পরিবর্তে দশটি করে গাছ লাগানো হবে।

এই দুই জাতীয় সড়ক ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি, ঢাকা-কলকাতা বাস চলাচলের একমাত্র পথও বটে। তাই রাস্তা সম্প্রসারণ হলে নিত্যদিনের যন্ত্রণা কমবে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু সত্যিই কী তা হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jessore road extension
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE