Advertisement
০৭ মে ২০২৪
তেলেনিপাড়া জেটি কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬

দু’বছর আগেই প্রশ্নের মুখে ইজারাদার

জেটি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পরে টনক নড়েছে প্রশাসনের। ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া ফেরিঘাটে ভেঙে পড়া বাঁশের অস্থায়ী জেটির পরিবর্তে কংক্রিটের নতুন জেটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পূর্বাপর: গ্রেফতার তেলেনিপাড়া ঘাটের ইজারাদার মিহির ভট্টাচার্য।

পূর্বাপর: গ্রেফতার তেলেনিপাড়া ঘাটের ইজারাদার মিহির ভট্টাচার্য।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৫৪
Share: Save:

জেটি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পরে টনক নড়েছে প্রশাসনের। ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া ফেরিঘাটে ভেঙে পড়া বাঁশের অস্থায়ী জেটির পরিবর্তে কংক্রিটের নতুন জেটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক সময়ে হুগলি জেলা পরিষদের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও এত দিন কী ভাবে ওই ফেরিঘাট চালাচ্ছিলেন ইজারাদার সুকোমল চক্রবর্তী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সুকোমল ও তাঁর তিন সহযোগীকে বুধবার রাতেই অবশ্য গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার মতো দুর্ঘটনা ২০১৫ সালেও হয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। তখনও ঘাটটির ইজারাদার ছিলেন সুকোমল। সেই সময় তাঁর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন স্থানীয়েরা। বিক্ষোভের জেরে ওই ঘাট দিয়ে ২৫ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। সুকোমলকে সেই সময় সরিয়ে ভদ্রেশ্বর পুরসভাকে ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিল জেলা পরিষদ। কিন্তু তার পরেও কী ভাবে সুকোমল দায়িত্ব ফিরে পেলেন তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন দুর্ঘটনায় স্বজনহারা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের ধারণা, এর পিছনে জেলা পরিষদেরই কারও
অঙ্গুলিহেলন রয়েছে।

জেটি পরিদর্শনে পরিবহণ দফতরের আধিকারিকরা । ছবি: তাপস ঘোষ ও দীপঙ্কর দে

বৃহস্পতিবার ভদ্রেশ্বর পুরসভায় রাজ্য পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গে জেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কর্তারা এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে স্থির হয়েছে, তেলেনিপাড়া ঘাট ছাড়াও জেলার আরও ১৬টি ফেরিঘাটে কংক্রিটের জেটি বানানো হবে। এ ছাড়াও স্থির হয়, ‌দুর্ঘটনার নেপথ্যে যাঁদের গাফিলতি রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রশাসনের বিধিনিষেধ সত্ত্বেও কেন ওই দুর্ঘটনা এড়ানো গেল না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যাঁদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের শাস্তি হবে।’’

প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, জোয়ার-ভাটার সময় শালবল্লা দিয়ে তৈরি ওই জেটির খুঁটির মাটি সরে আলগা হয়ে যায়। তার জেরেই জলের তোড়ে জেটিটি ভাঙে। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ওই ঘাট দিয়ে পারাপার করেন। তা সত্ত্বেও নিরাপত্তায় প্রশ্নে জেটির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হত না।

তেলেনিপাড়া ফেরিঘাট ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা দেয় জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদেরই একটি সূত্রের খবর, ২০১৫ সালে ঘাটের ইজারাদার সুকোমলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তাঁকে কালো তালিকাভুক্ত করে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ওই বছরেরই অগস্ট মাস থেকে ২০১৬ নভেম্বর মাস পর্যন্ত পুরসভাই ঘাটটি চালায়। কিন্তু তার পরে ফের সুকোমল দায়িত্ব ফিরে পান। কিন্তু কী ভাবে? পুর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারেননি। তাঁরা জানান, ২০১৬ সেপ্টেম্বর মাসে শেষবারের মতো তাঁরা ওই ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। তবে, জেলা পরিষদের একটি সূত্রের দাবি, সেখানকার কিছু কর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদেই সুকোমল ঘাটের দায়িত্ব ফিরে পান। জেলা সভাধিপতি মেহেবুব রহমান জানান, ইজারার চুক্তি ঠিকমতো মানা হয়েছিল কিনা বা জেলা পরিষদের কেউ অনৈতিক ভাবে ইজারা পাইয়ে দিয়েছিলেন কিনা, তা খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jetty collapse Bhadreswar Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE