Advertisement
E-Paper

প্রেমের পথের কাঁটা সরাতেই বেপরোয়া অবিনাশ, সূত্র তদন্তে

প্রেমের পথে ‘কাঁটা’ হয়ে উঠেছিলেন অভিভাবকরা। সে জন্যই বাবা-মা’কে গুলি করে মেরে আত্মঘাতী হয়েছেন পুলিশের জুনিয়র কনস্টেবল অবিনাশ পাত্র। প্রাথমিকভাবে এমন সূত্র ধরেই তদন্তের জাল গোটাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, বাবা-মাকে খুনের পরিকল্পনা করেই গুলি-বন্দুক নিয়ে রবিবার সকালে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি গিয়েছিলেন অবিনাশ। সঙ্গে চটের বস্তা ও সাইড ব্যাগ দেখে সন্দেহ হওয়ারও উপায় ছিল না। অনুমান, বন্দুকটি চটে জড়িয়ে এনেছিলেন। ব্যাগে ছিল কার্তুজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৩:৩৯

প্রেমের পথে ‘কাঁটা’ হয়ে উঠেছিলেন অভিভাবকরা। সে জন্যই বাবা-মা’কে গুলি করে মেরে আত্মঘাতী হয়েছেন পুলিশের জুনিয়র কনস্টেবল অবিনাশ পাত্র। প্রাথমিকভাবে এমন সূত্র ধরেই তদন্তের জাল গোটাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশের অনুমান, বাবা-মাকে খুনের পরিকল্পনা করেই গুলি-বন্দুক নিয়ে রবিবার সকালে গাড়ি ভাড়া করে বাড়ি গিয়েছিলেন অবিনাশ। সঙ্গে চটের বস্তা ও সাইড ব্যাগ দেখে সন্দেহ হওয়ারও উপায় ছিল না। অনুমান, বন্দুকটি চটে জড়িয়ে এনেছিলেন। ব্যাগে ছিল কার্তুজ।

কিন্তু শনিবার রাতে মেদিনীপুরে ‘নাকা’ ডিউটির পর রবিবার অবিনাশ কী ভাবে নিজের ইনসাস রাইফেল ও কার্তুজ নিয়ে গোপীবল্লভপুরের ফানিয়ামারা গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। যদিও জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্তাদের ব্যাখ্যা, জঙ্গলমহলে মোতায়েন পুলিশকর্মীরা সব সময় আগ্নেয়াস্ত্র নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারেন।

রবিবার ফানিয়ামারা গ্রামের বাড়িতে বাবা বালক পাত্র ও মা দীপালি পাত্রকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করেন অবিনাশ। পড়শি ও স্বজনরা ছুটে গেলে তাঁদেরও গুলি করে মারার হুমকি দেন অবিনাশ। কেউই আর এগোনোর সাহস পান নি। পুলিশ গিয়ে বাড়ি ঘিরে ফেললে পরে ওই বাড়ি থেকে অবিনাশের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্‌সকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, মেদিনীপুর পুলিশ লাইনের ৪৭৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জুনিয়র কনস্টেবল অবিনাশ থাকতেন মেদিনীপুর শহরের বটতলাচকের হর্ষণদিঘির পাড়ে পুলিশের এক ক্যাম্পে। মেদিনীপুরে থাকাকালীন একটি মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মাস খানেক আগে মেয়েটির বাবা ও মাকে ফানিয়ামারা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান অবিনাশ। পরে মেয়েটির বাড়িতেও আসেন অবিনাশের অভিভাবকরা। মেয়েটির পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তাই অবিনাশের পছন্দ করা মেয়েটিকে মেনে নিতে রাজি হননি বালকবাবু ও দীপালিদেবী। অন্যত্র অবিনাশের বিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন তাঁরা। গত ১১ মে মেদিনীপুরে পরিবারের সবাই মেয়ে দেখতে আসেন। এ নিয়েই পরিবারে অশান্তি শুরু হয়।

কিন্তু শান্ত স্বভাবের অবিনাশ কী ভাবে এমন নৃশংস হয়ে উঠলেন?

পরিবারের লোকজন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আর এখানেই ধোঁয়াশা দেখছে পুলিশ। পুলিশের অনুমান, বিয়ে নিয়ে পারিবারিক অশান্তির জের গড়িয়েছিল অনেক দূর। এই প্রেক্ষিতে উঠে আসছে নানা তথ্য। পড়শিদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, অবিনাশের প্রেমিকার অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন দীপালিদেবী। তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, কোনও মতেই প্রেমের বিয়ে তাঁরা মেনে নেবেন না। অবিনাশও গোঁ ধরেন, পছন্দের মেয়েকে নিজের বাড়িতে অনুষ্ঠান করেই বিয়ে করবেন। এই নিয়ে কিছুদিন ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে অবিনাশের মন কষাকষি চলছিল। মনোবিদ মোনালিসা ঘোষের ব্যাখ্যা, ‘‘ওই যুবকের বাবা-মার সঙ্গে ঠিক কেমন সম্পর্ক ছিল বুঝতে হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, প্রচণ্ড রাগের বশেই তিনি বাবা-মাকে খুন করেন। পরে যখন বুঝতে পারেন কত বড় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন, তখন বিবেক দংশনের চোটে নিজেকেও খতম করে দেন।’’ এ ক্ষেত্রে পুলিশের কাজে যে ধরনের প্রশিক্ষণ হয়, তারও একটা প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করছেন মোনালিসাদেবী।

ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার এক আধিকারিক বলেন, “তদন্তে জানা গিয়েছে অবিনাশের পছন্দ করা মেয়েটিকে মেনে নিতে আপত্তি ছিল তাঁর অভিভাবকদের। তার জেরেই এই ঘটনা। তবে তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” এ দিন মেদিনীপুর মেডিক্যাল হাসপাতালের পুলিশ মর্গে বালকবাবু, দীপালিদেবী ও অবিনাশের মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়। রাতে দেহগুলি নিয়ে যাওয়া হয় ঝাড়গ্রামের বৈতা-গোবিন্দপুর গ্রামে। সেখানে অবিনাশদের পৈতৃক ভিটে। ওই গ্রামেই তিনজনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

Jhargram Medinipur police hospital shot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy