Advertisement
E-Paper

শিশুকন্যা, মায়ের নিগ্রহে ঝাড়গ্রাম-কলকাতা একাকার

ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়া থেকে কলকাতা ঠিক কত দূর? ভৌগোলিক বিচারে দেড়শো কিলোমিটার। কিন্তু শিশুকন্যা আর তাদের মায়েদের উপরে অত্যাচারের নিরিখে? দূরত্বটা শূন্য। কোনও দূরত্বই নেই। যাঁহা কলকাতা, তাঁহা ঝাড়গ্রাম!

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ১৩:৩০

ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়া থেকে কলকাতা ঠিক কত দূর?

ভৌগোলিক বিচারে দেড়শো কিলোমিটার। কিন্তু শিশুকন্যা আর তাদের মায়েদের উপরে অত্যাচারের নিরিখে? দূরত্বটা শূন্য। কোনও দূরত্বই নেই। যাঁহা কলকাতা, তাঁহা ঝাড়গ্রাম!

কাগজে-কলমে শিক্ষিত, শহুরে পরিবার। কিন্তু পরপর দু’টি কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধ’-এ মাকে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে। শাসানো হয়েছে, মেয়ে নিয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করলে মেয়েদের না-ও বাঁচানো যেতে পারে!

ঝাড়গ্রামের গ্রাম নয়, কলকাতা থেকেই এমন অভিযোগ জমা পড়েছে নারী ও সমাজকল্যাণ দফতর এবং মহিলা কমিশনে। সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, একটি-আধটি নয়, এমন অভিযোগ আসছে পরের পর। কন্যাসন্তানকে যথাযোগ্য মমতায় বড় করে তোলার জন্য সরকারের বেশ কিছু প্রকল্প চালু হওয়া সত্ত্বেও সমাজের একাংশের মানসিকতায় কোনও পরিবর্তন আসেনি। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়ায় বাবার বিরুদ্ধে তিন বছরের মেয়েকে গলা টিপে খুন করার যে-অভিযোগ উঠেছে, তা যে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এই সব অভিযোগই তার প্রমাণ।

শুধু প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, মেয়ের জন্ম দেওয়ায় মায়েদের নিগ্রহ সহ্য করতে হচ্ছে অনেক জেলা শহরে, এমনকী শহর কলকাতাতেও। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় জানান, কন্যাভ্রূণ হত্যা ঠেকাতে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কাজ করছেন তাঁরা। আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ক্লিনিকগুলিতে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ বন্ধ করতে পরিদর্শন চলছে। তবু এমন ঘটনা এড়ানো যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘শহুরে, শিক্ষিত পরিবার থেকে এমন অভিযোগ যখন আসছে, স্তম্ভিত হয়ে যাচ্ছি।’’ তাঁর অভিজ্ঞতা, এই সব ক্ষেত্রে মহিলারা কমিশনে আসেন ঠিকই। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা আপসে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চান। মামলায় যেতে চান না। কমিশন আইনি সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মামলা চলাকালীন কোথায় থাকবেন, সেই চিন্তায় ওই মহিলারা দিশাহারা হয়ে পড়েন। ‘‘কোনও মতে সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদটাই বড় হয়ে ওঠে তাঁদের কাছে। আর সেই সুযোগে শ্বশুরবাড়ি রেহাই পেয়ে যায়,’’ মন্তব্য কমিশনের চেয়ারপার্সনের।

রাজ্যে প্রতি হাজার পুরুষে নারীর অনুপাত কমতে থাকায় এমনিতেই চিন্তার ভাঁজ প্রশাসকদের কপালে। কলকাতায় এই অনুপাত সব চেয়ে কম। প্রতি হাজারে ৯৩৩। এই হার বাড়াতে নানান পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। স্কুল-কলেজ স্তর থেকেই সচেতনতা তৈরির চেষ্টা চলছে। কিন্তু শিশুকন্যাদের উপরে এক শ্রেণির মানুষের অকরুণ বিমুখতা এই প্রয়াসে ক্রমাগত কাঁটা ছড়িয়ে চলেছে।

কী করছে সরকার? রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, মূলত নারী পাচার রুখতে গ্রাম স্তরেও ‘চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি’ গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি এখন বাল্য বিবাহ রুখতে এবং কন্যাভ্রূণ হত্যা ঠেকাতেও কাজ করছে। তার পরেও এমন ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। মন্ত্রী জানাচ্ছেন, এই সব ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মা যদি তাঁর এবং তাঁর কন্যাসন্তানের উপরে অত্যাচারের বিষয়টি প্রশাসনের সামনে তুলে ধরার সুযোগ না-ও পান, পড়শিরা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। থানায় যেতে না-পারলেও পঞ্চায়েত বা ব্লক স্তরে কথা বললেই চলবে। ‘‘এই ধরনের অভিযোগ এলে সেগুলোকে যাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, ইতিমধ্যেই আমরা সেই নির্দেশ দিয়েছি,’’ বললেন শশীদেবী।

Girl Child Mother Persecution Save Girl child
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy