চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের জন্য মাসিক ভাতা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তার পরও আন্দোলনের পথ থেকে সরে না আসার সিদ্ধান্ত নিলেন শিক্ষাকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের একাংশ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো ভাতা নেবেন তাঁরা। কিন্তু অনশন চালিয়ে যাবেন। যদিও নির্জলা নয়, এ বার থেকে জল খেয়ে ‘অনশন’ চালাবে আন্দোলনকারীরা।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা ২৬ হাজার (আদতে ২৫ হাজার ৭৫৩) শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। তার পর থেকেই পথে নেমে আন্দোলন করছেন তাঁরা। একাংশের দাবি, কেন রাজ্য সরকার ‘যোগ্য’ এবং ‘অযোগ্য’দের তালিকা দিল না? কেন ‘যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও চাকরি হারাতে হবে? চাকরি ফেরতের দাবিতে যেমন শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন, তেমন গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মীরা একই পথে হাঁটছেন। তাঁদের একাংশ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে অনশনও শুরু করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকার শুধু শিক্ষকদের কথা ভাবছে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করছে। সুপ্রিম কোর্টে শিক্ষাকর্মীদের হয়ে সওয়াল করা হয় না। উল্লেখ্য, শেষ শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, যাঁরা ‘চিহ্নিত অযোগ্য’ (দাগি) নন, তেমন শিক্ষক-শিক্ষিকারা আপাতত স্কুলে যেতে পারবেন। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকারকে পরীক্ষা নিয়ে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। শুধু শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশ কার্যকর হবে। শিক্ষাকর্মীদের চাকরি বাতিলই থাকছে। তার পরই চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
মধ্যশিক্ষা দফতরের ভিতরে প্রথমে আট জন শিক্ষাকর্মী অনশন শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে চার জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। বাকিরা এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তার মধ্যেই মুখ্যসচিব মারফত মুখ্যমন্ত্রী শনিবার নবান্ন থেকে জানিয়েছেন, মামলার নিষ্পত্তি যত দিন না হচ্ছে, তত দিন চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ভাতা দেবে রাজ্য সরকার। মমতার কথায়, গ্রুপ ‘সি’ কর্মীদের মাসিক ২৫ হাজার এবং গ্রু ‘ডি’ ২০ হাজার টাকা করে দেবে তাঁর সরকার। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য সরকারের তরফে ‘রিভিউ পিটিশন’ করা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সেই আইনি প্রক্রিয়া চলা পর্যন্ত রাজ্য সরকার সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের ভাতা দেবে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন:
মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসতে রাজি নন আন্দোলনকারী শিক্ষাকর্মীরা। তাঁদের দাবি, অনশন চলবে। তবে নির্জলা নয়, জল খেয়ে অনশন চালাবেন। তাঁরা ভাতার জন্য নয়, ‘যোগ্য’ বলেই আন্দোলন করছেন। যোগ্যদের তালিকা প্রকাশের দাবিও জানান আন্দোলনকারীরা। চাকরিহারা শিক্ষাকর্মী সত্যজিৎ ধর বলেন, ‘‘আমাদের অবস্থান চলবে। আমরা ভাতা পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। এই ভাতায় আমাদের সাংসারিক সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে।’’ প্রসঙ্গত, আদালতের নির্দেশে ‘অযোগ্য’ শিক্ষাকর্মীদের নাম ‘স্যালারি পোর্টাল’ থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জেলার স্কুল পরিদর্শকেরা প্রধানশিক্ষকদের বিষয়টি জানিয়েছেন।