E-Paper

তরজা হাজার, শিক্ষকদের সঙ্কট ‘ব্রাত্য’ বিধানসভায়

চলতি অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহে প্রশ্নোত্তর-পর্বে নিয়োগ ও শিক্ষকদের এই সঙ্কট সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু ছিল না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৫ ০৯:১৭
আন্দোলনরত শিক্ষকেরা।

আন্দোলনরত শিক্ষকেরা। —ফাইল চিত্র।

খাতায়-কলমে সদস্যসংখ্যা ২৯৪। দু’জন প্রয়াত এবং আরও দু’জনের দীর্ঘ দিনের অনুপস্থিতি বিবেচনায় রাখলে কার্যকরী ভাবে বিধায়ক আছেন ২৯০ জন। কিন্তু অধিবেশনের এক সপ্তাহ পেরোলেও চাকরিহারা শিক্ষকদের সমস্যার কথা বিধানসভায় তোলার জন্য এক জনকেও পাওয়া গেল না!

আলোচনা হলেই সমাধান হত, এমন আশা কেউ করছেন না। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের অনাগ্রহে এখনও পর্যন্ত যে রাজ্যের আইনসভায় ২৬ হাজার কাজ-হারানো, শিক্ষিত যুবক- যুবতীর কথা জায়গা পায়নি, শুক্রবার সে কথাই জেনে গেলেন সেই শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা। চাকরি হারিয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও নানা পথে সঙ্কট মুক্তির চেষ্টায় আছেন প্রায় ১৬ হাজার ‘যোগ্য’ চাকরিহারা শিক্ষক- শিক্ষিকা। সমাধানের আশায় এ দিন বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁদেরই পাঁচ প্রতিনিধি। ‘যোগ্য ও নিরাপরাধ’ হিসেবে চাকরি ফিরে পেতে তাঁরা স্পিকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। কিন্তু স্পিকার তাঁদের বলেছেন, এই রকম দাবিপত্রের ভিত্তিতে এই ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কোনও সুযোগ তাঁর নেই। বিধানসভার কোনও সদস্য বিষয়টি অধিবেশনে উত্থাপন করলে পরিষদীয় রীতি মেনে তিনি তা বিবেচনা করতে পারেন।

চলতি অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহে প্রশ্নোত্তর-পর্বে নিয়োগ ও শিক্ষকদের এই সঙ্কট সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু ছিল না। সরকার বা বিরোধী পক্ষের কোনও বিধায়ক চাকরিহারা শিক্ষকদের ব্যাপারে কোনও প্রশ্ন জমা দিয়েছেন বলেও পরিষদীয় দফতরে কোনও তথ্য নেই। সে দিক থেকে দেখলে, যে প্রশ্নোত্তর-পর্বে মন্ত্রীরা উত্তর দিতে বাধ্য থাকেন, সেখানে এই নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। স্পিকার অবশ্য বলছেন, ‘‘অধিবেশনে কেউ উল্লেখ না-করলে আমার কিছু করার থাকে না।’’

বিধানসভার সচিবালয়ের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘প্রশ্ন জমা না-করলে অনেক সময়ে মন্ত্রীর নির্দিষ্ট উত্তর পাওয়া যায় না। বিধায়কেরা অতিরিক্ত প্রশ্ন করতেই পারেন। তা ছাড়াও, উল্লেখ-পর্বে যে কোনও বিধায়ক যে কোনও বিষয়ে সরকার বা নির্দিষ্ট দফতরের মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে স্পিকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর উত্তর চাইতে পারেন।’’

এখনও কেন ঠাঁই পেল না শিক্ষকদের সঙ্কটের প্রশ্ন? বিধানসভায় বিরোধী দলের সচেতক, বিজেপির শঙ্কর ঘোষের মতে, ‘‘এক দিন সেনাবাহিনীর কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পর দিন অনুব্রত মণ্ডলের মন্তব্য নিয়ে আমরা মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিলাম। মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে এলে তো আর দৃষ্টি আকর্ষণ, উল্লেখ করতে পারি না। তার পরে আমরা ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু না-হওয়া নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। উপস্থিতি কম ছিল এ দিন। আমরা কখন ওই প্রশ্ন তুলব? প্রশ্ন তো আগে থেকে জমা দিতে হয়।’’

প্রত্যাশিত ভাবেই সরকার পক্ষের কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূলের পরিষদীয় দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এই প্রশ্ন বিরোধীরাই তুলতে পারতেন। তাঁরা তা করেননি। তবে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই চাকরিহারা শিক্ষকদের পক্ষে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করেছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বামেদের প্রাক্তন পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আমরা শূন্য হলে অনেকে হয়তো খুশি হন কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি এটাই হয়! আমরা বিধানসভায় থাকাকালীন নিয়োগ ও সে সময়ে শিক্ষকদের সমস্যা নিয়ে ১২ বার মুলতুবি প্রস্তাব এনেছিলাম, যদিও আলোচনা করতে দেওয়া হয়নি। এখন তো সরকার ও বিরোধী পক্ষ, কারও মাথাব্যথা নেই। তারা ধর্মীয় ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy