Advertisement
E-Paper

শ্রমিক থেকে ইসরোয় উড়ান

শুক্রবার আগরপাড়ার পণ্ডিত সারদা বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের বাড়িতে আসেন রাজীব। যান নিজের ছেলেবেলার স্কুলে। দেখা করেন ছাত্র-রাজীবকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার লড়াইয়ে পাশে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৪৮
representational image

—ফাইল চিত্র।

বাবা যে সংস্থায় চাকরি করতেন, মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় আচমকাই সেটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরিবারে নেমে এসেছিল তীব্র অনটন। তাই পরীক্ষার শেষে আর কালবিলম্ব না করে ঠিকা-শ্রমিকের চাকরি নিয়েছিলেন। কিন্তু হারতে নারাজ ছিলেন তিনি। সেই জেদকে সম্বল করেই পড়াশোনা চালিয়ে নিজের জায়গা করে নেন ইসরোয়। বাকিটা ইতিহাস। ভারতের চাঁদে পাড়ির সাফল্যের অংশীদার আগরপাড়ার রাজীব সাহা।

শুক্রবার আগরপাড়ার পণ্ডিত সারদা বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের বাড়িতে আসেন রাজীব। যান নিজের ছেলেবেলার স্কুলে। দেখা করেন ছাত্র-রাজীবকে হারিয়ে যেতে না দেওয়ার লড়াইয়ে পাশে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে। সঙ্গে ছিলেন দাদা রাজু ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত স্ত্রী অন্নপূর্ণা।

যে রকেটে করে বিক্রম চাঁদে পাড়ি দিয়েছে, সেটি তৈরির দলে থাকা রাজীব ২০০৫ সালে ‘আগরপাড়া নেতাজী শিক্ষায়তন’ থেকে মাধ্যমিক দেন। সেই সময়েই বাবা প্রাণতোষের কাজ চলে যায়। এক দিকে বাড়ি তৈরির জন্য বাড়তে থাকা ঋণ, তার সঙ্গে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার, দিশেহারা হয়ে পড়েন প্রাণতোষ। দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ঠিকা শ্রমিকের কাজ নেন বেলঘরিয়ার সরস্বতী প্রেসে। ওই প্রেসেই রাজীব দৈনিক ৩০ টাকার মজুরিতে ঠিকাদারের অধীনে কাগজ শুকোতে দেওয়ার কাজে যোগ দেন। পরীক্ষায় স্কুলের মধ্যে প্রথম হওয়ায়, গৃহশিক্ষক সুভাষ বসু সাহস জুগিয়েছিলেন। তাঁর মতো আরও কিছু শিক্ষক এক প্রকার বিনা বেতনেই পড়ানোর আশ্বাস দেন রাজীবকে।

ঊষুমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন রাজীব। সংসারে তখনও তীব্র অনটন। বাবার মতো মা-ও কারখানায় সেলাইয়ের কাজ করতেন। দাদা করতেন গৃহশিক্ষকতা। রাজীব বলেন, ‘‘জয়েন্ট দেওয়ার মতো সাহস করতে পারিনি। তাড়াতাড়ি চাকরি পাওয়ার আশায় বেলঘরিয়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পলিটেকনিক পাশ করি। তার পরে নিউ আলিপুরের একটি ডিজ়াইন করার সংস্থায় কাজ পাই়।’’ তিন-চার মাস কাটতেই রাজীব বুঝতে পারেন, এ ভাবে হারলে চলবে না। আরও পড়তে হবে। সেই মতো বি-টেকে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। প্রতিদিন বিকেল ৫টায় অফিস ছুটির পরে মাঝেরহাট স্টেশনে এসে উঠে বসতেন দাঁড়িয়ে থাকা চক্ররেলে। ৭টায় ট্রেন ছাড়ার আগে পর্যন্ত বইতে চোখ বোলাতেন সেখানেই।

২০১১ সালে ‘জিলেট’ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন রাজীব। সেখান থেকে পাশ করে দিল্লিতে চাকরি নেন। কিন্তু বছর দুয়েক পরে ফিরে আসেন বাড়িতে। ফের প্রস্তুতি নিয়ে ‘গেট’ পরীক্ষা দিয়ে, দেশে তিনশোর মধ্যে র‌্যাঙ্ক করেন। পরীক্ষা দেন ইসরোতেও। সেখানেও ২১ র‌্যাঙ্ক করে চাকরি পান।

এমটেক করার জন্য ইসরোর তরফে খড়্গপুর আইআইটিতে পাঠানো হয়েছে রাজীবকে। সেখানেই বুধবার বিকেলে অধিকর্তা, অধ্যাপকদের সঙ্গে রাজীবও চোখ রেখেছিলেন লাইভ-স্ক্রিনে। ১০০, ৪০...। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে বিক্রমের যাত্রাপথের দূরত্ব যত কমছিল, বুকের ধুকপুকানি ততই বাড়ছিল ওই যুবকের। নিজের হাত নিজেই শক্ত করে চেপে ধরে শুধু মনে মনে বলেছেন, ‘‘জয় আসবেই।’’

Chandrayaan-3 ISRO Jadavpur University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy