E-Paper

স্ত্রীর নামে বয়ান লেখানোর জন্য চাপ দিচ্ছে সিআইডি, চিঠি দিয়ে অভিযোগ বিচারপতি সিংহের স্বামীর

সিআইডির এক কর্তার দাবি, তদন্ত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, তদন্তে কেউ যেন বাইরে থেকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা না করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫১
amrita sinha

বিচারপতি অমৃতা সিংহ। — ফাইল চিত্র।

তলব করা হয়েছিল একটি মামলার সাক্ষী হিসেবে। কিন্তু সেই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর নামে বয়ান লেখানোর জন্য সিআইডি চাপ দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন কলকাতার আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে। তাঁর স্ত্রী কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। ঘটনাচক্রে এই মুহূর্তে নিয়োগ দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি চলছে যাঁর এজলাসে।

কলকাতা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনকে লেখা চিঠিতে প্রতাপচন্দ্রের অভিযোগ, যে মামলায় তাঁকে সাক্ষী হিসেবে তলব করা হয়েছিল, তার সম্পর্কে প্রশ্ন করার বদলে বিচারপতি সিংহের বিষয়ে নানাবিধ তথ্য জানার চেষ্টা করেছেন সিআইডি অফিসারেরা। প্রতাপচন্দ্র যাতে স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা সাজানো বয়ান দেন, তার জন্যও তাঁকে কুকথা বলার পাশাপাশি মানসিক নিপীড়নও চালানো হয়েছে বলে আইনজীবীর অভিযোগ। প্রতাপচন্দ্রের অভিযোগ, তাঁকে টাকা, বাড়ি, গাড়িরও টোপ দিয়েছেন তদন্তকারীরা। এ পর্যন্ত দু’দফায় প্রতাপচন্দ্রকে তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দিন ন’ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলেই অভিযোগ তাঁর।

সিআইডির এক কর্তার অবশ্য দাবি, তদন্ত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, তদন্তে কেউ যেন বাইরে থেকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা না করেন। এই কর্তার কথায়, ‘‘আমরা সেই চেষ্টাই করছি। তদন্তে অসহযোগিতা করছেন ওই আইনজীবী। প্রশ্নাবলি তৈরি করে যে পদ্ধতি মেনে তদন্ত করা উচিত, তেমনটাই করা হচ্ছে।’’

কলকাতা হাই কোর্টে এই মুহূর্তে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার করছেন বিচারপতি সিংহ। তার মধ্যে অন্যতম প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির মামলা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে ওই মামলা সরিয়ে বিচারপতি সিংহের এজলাসে পাঠিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি। সেই মামলায় একাধিক কড়া নির্দেশ এবং পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ। পঞ্চায়েত ভোটের একাধিক মামলাতেও কড়া পদক্ষেপ করেছিলেন তিনি। ঘটনাচক্রে সেই সময়েই প্রতাপচন্দ্রের এই অভিযোগ সামনে আসায় তা আইনজীবী মহলে চর্চারও বিষয় হয়েছে।

বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রের খবর, ‘সাজানো’ বয়ান দেওয়ার জন্য সিআইডির আর্থিক অপরাধ শাখার (ইকনমিক অফেন্স উইং) অফিসারেরা টাকা, গাড়ি, ফ্ল্যাটের টোপ দিয়েছেন বলে প্রতাপচন্দ্র অভিযোগ করেছেন। সূত্রের দাবি, প্রতাপচন্দ্রের অভিযোগ, কথা না শুনলে পুরো পরিবারের চরম সর্বনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। সর্বশেষ জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করে প্রতাপচন্দ্র তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, উপর মহল থেকে নির্দেশ এলে ভুয়ো মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হবে বলেও সিআইডির অফিসারেরা জানিয়েছিলেন। শেষমেশ গ্রেফতার করা না-হলেও, সে দিনই ভবানী ভবন থেকে বেরনোর আগে তাঁকে ফের তলবের নোটিস ধরানো হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন গুরুতর অপরাধের তদন্তে ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় বহু বার কোর্টে মুখ পুড়েছে সিআইডির। আলিপুরদুয়ারের মহিলা সমবায় সমিতির ৫০ কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারিতে তিন বছর ধরে তদন্ত করলেও ঋণগ্রহীতাদের নামই জানতে পারেননি রাজ্যের গোয়েন্দারা। সেখানে সল্টলেকের একটি বাড়ি নিয়ে পরিবারের মধ্যে গোলমালের ঘটনায় ভবানী ভবনের এই তৎপরতা অনেককেই বিস্মিত করেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, এই ঘটনায় সিআইডি তদন্ত কি কোনও উঁচু মহলের অঙ্গুলিহেলনে চলছে? সিআইডির অবশ্য দাবি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই তারা তদন্ত করছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Justice Amrita Sinha CID Calcutta High Court

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy