Advertisement
E-Paper

কাজ পুরো বন্ধ, ধুঁকছে মালিক-শ্রমিক দু’পক্ষই

মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন মালিক এবং শ্রমিক দু’জনেই। কারখানাটা এখনও আছে বটে, কিন্তু আর কিছুই নেই। কাজ নেই, কাজ কবে থাকবে, কবে আসবে, তার কোনও ইঙ্গিত নেই। খুব যে একটা আশা আছে, তা-ও নয়। দেশের কী সব ভাল হবে বলে এক মাস আগে ফরমান জারি করে প্রধানমন্ত্রী সেই যে নোট বাতিল করলেন, তার পর থেকেই তাঁদের রাস্তায় কে যেন অগুন্তি পেরেক ছড়িয়ে দিয়েছে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৭

মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন মালিক এবং শ্রমিক দু’জনেই।

কারখানাটা এখনও আছে বটে, কিন্তু আর কিছুই নেই। কাজ নেই, কাজ কবে থাকবে, কবে আসবে, তার কোনও ইঙ্গিত নেই। খুব যে একটা আশা আছে, তা-ও নয়। দেশের কী সব ভাল হবে বলে এক মাস আগে ফরমান জারি করে প্রধানমন্ত্রী সেই যে নোট বাতিল করলেন, তার পর থেকেই তাঁদের রাস্তায় কে যেন অগুন্তি পেরেক ছড়িয়ে দিয়েছে।

সাধারণত মালিক ও শ্রমিক কথা বলেন উল্টো সুরে। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর এই আশ্চর্য ফরমান মহম্মদ শাহজাহান আর ইউসুফ হোসেন দুজনকেই একই হতাশা আর অনিশ্চয়তার বিন্দুতে এনে দাঁড় করিয়েছে। দিনের পর দিন খালি হাতে বসে পদ্মপুকুরের এক জুতো কারখানার মালিক মহম্মদ শাহজাহান। শাহজাহানের কারখানারই শ্রমিক ইউসুফ হোসেন। মালিকের কাছ থেকে দু’বেলা খাওয়ার টাকা পাচ্ছেন, কিন্তু বাড়তি পয়সা পাচ্ছেন না। মজুরি না পেলে বিহারের বাড়িতে পাঠাবেন কী?

শাহজাহান বললেন, টাকার জোগান না থাকায় কলুটোলা, কলেজ স্ট্রিটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আর জুতোর কারখানার মালিকদের বরাত দিচ্ছেন না। ‘এক মাস কারখানা বন্ধ রাখার পর সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে।’ একই কথা বলছেন কাজ হারানোর আশঙ্কায় ধুঁকতে থাকা ইউসুফও। ‘কারখানার কাজ শুরু না হলে গোটা সংসারটা ভেসে যাবে।’

এ রকম কারখানা একটা নয়। কলকাতায় সস্তা জুতো তৈরির একের পর এক কারখানা রয়েছে বেনিয়াপুকুরের মফিদুল ইসলাম লেন, তাঁতিবাগান, ফুলবাগান, গুলপাড়ায়। সেগুলোর কয়েকটা ঘুরে দেখা গেল, কারখানাগুলোর শাটার নামানো। শুধু শাহজাহান বা ইউসুফ নয়, আরও বহু মানুষ এই নোট বাতিলের ধাক্কায় ছিটকে পড়েছেন, কাতরাচ্ছেন। বেনিয়াপুকুর, পদ্মপুকুর, এন্টালি তল্লাটের কমবেশি দেড় হাজার জুতো কারখানার প্রায় ৯০% বন্ধ হয়েছে। এক একটা কারখানায় খুব বেশি মানুষ কাজ করেন না, কিন্তু কারখানাপিছু গড়ে যদি চার জন শ্রমিকও ধরা যায়, তা হলেও প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার লোক পথে বসতে চলেছেন। অধিকাংশই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও বিহারের বাসিন্দা। কারখানার মালিকেরা জানান, চার হাজার শ্রমিক বাড়ি চলে গিয়েছেন। কবে কারখানা ফের খুলবে, তা বুঝতে পারছেন না মালিকেরাও।

অনেকে বাড়ি যাননি, তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দা, কারখানায় কাজ করেন। তাঁতিবাগানের জুতো কারখানার মালিক জলিল আহমেদ বলছেন, ‘আমার কারখানার দুই শ্রমিক এখানেই থাকে। তারা আছে, কিন্তু কাজ নেই। আমাকে ওদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। খাবারের টাকা দিই, কারণ পরে যদি কারখানা চালু হয়, তখন তো নতুন করে লোক জোগাড় করতে হবে। সে এক ঝক্কি।’

চালু কারখানার মালিকেরাও খুচরো নিয়ে সমস্যায়। তাঁরা জানালেন, পুরনো নোট তাঁরা নিচ্ছেন না। নতুন পাঁচশো টাকা খুব যে মিলছে, তা নয়। সবাই দু’হাজারের নোট দিচ্ছেন। তা ভাঙাতেও নাজেহাল এই মালিকরা।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র জমানায়, শ্রমিক বা মালিক, কে বেশি খারাপ অবস্থায় পড়লেন, তা নিয়ে বরং বিতর্ক হতে পারে। নোটের চোট তাঁদের মধ্যে আজ একটা আশ্চর্য সাম্য আনল। কিন্তু এমন সাম্য কি কাম্য?

Jute industry Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy