Advertisement
E-Paper

সব নারীকেই সম্মান করি, ঘৃণা করি শুধু মহুয়াকে: কল্যাণের পাল্টা আক্রমণ দলের মহিলা সাংসদকে! নিক্ষেপ পঞ্চবাণ

রবিবার সকালে আনন্দবাজার ডট কমের কাছে মুখ খুললেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম করেই পাঁচ তোপ দাগলেন দলের মহিলা সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫ ১২:৪৮
(বাঁ দিকে) কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

তিনি নারীবিদ্বেষী নন। কেবল এক জন নারীকেই ঘৃণা করেন। সেই নারী আর কেউ নন, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র! রবিবার সকালে আনন্দবাজার ডট কমের কাছে এ বিষয়ে মুখ খুললেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম করেই পাঁচ তোপ দাগলেন দলের মহিলা সাংসদের বিরুদ্ধে। কসবার ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে কল্যাণের মন্তব্যে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, শনিবার রাতেই তা থেকে দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছে দল। জানিয়ে দিয়েছে, এই ধরনের মন্তব্যকে তৃণমূল সমর্থন করে না। কিন্তু তাতে আইনজীবী সাংসদকে দমানো যায়নি। রাতেই তিনি জোর গলায় বলেছেন, ‘‘হাজার বার বলব।’’ কল্যাণ এবং বিধায়ক মদন মিত্রের বক্তব্যের সমালোচনা করে তৃণমূল যে পোস্ট করেছিল, মহুয়া তার সূত্র ধরেই দুই নেতাকে কটাক্ষ করেছিলেন। বলেছিলেন ‘নারীবিদ্বেষী’। তাঁর সেই কটাক্ষের জবাব দিতে গিয়ে কল্যাণ সাফ জানিয়ে দিলেন, তিনি মহুয়াকে ঘৃণা করেন। কেন করেন? পাঁচটি কারণ দেখালেন।

মহুয়া কারও নাম করেননি। কল্যাণ এবং মদনকে নিয়ে তৃণমূলের পোস্টটি শেয়ার করে রাতে নিজের সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘ভারতে নারীবিদ্বেষ দলের গণ্ডিতে আটকে নেই। কিন্তু তৃণমূলকে অন্যদের থেকে আলাদা করে একটাই বিষয়, আমরা এই ধরনের বিরক্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ করি, তা সে যে-ই করুন না কেন।’’ এ নিয়ে কল্যাণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। শুনেই তিনি বলে ওঠেন, ‘‘দেড় মাসের হানিমুন শেষ করে দেশে ফিরেই কি ওঁর আমার পিছনে লাগা শুরু হল? আমি সব নারীকে সম্মান করি, কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে ঘৃণা করি। যাঁকে পার্লামেন্টের এথিক্স কমিটি বহিষ্কার করে, তাঁকে ঘৃণাই করি।’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি বার্লিনের প্রাসাদে পুরীর প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে বিয়ে সেরেছেন মহুয়া। সূত্রের খবর, তার জন্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি নিয়ে বেশ কিছু দিনের ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। কল্যাণ সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।

‘নারীবিদ্বেষ’ অভিযোগ শুনে মহুয়ার বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়ে কটাক্ষ করেন কল্যাণ। বলেন, ‘‘আমি নারীবিদ্বেষী? আপনি এক মহিলার ৪০ বছরের বিবাহিত জীবন নষ্ট করে, তাঁকে কষ্ট দিয়ে সেই পুরুষকে বিয়ে করেছেন। আমি নারীবিদ্বেষী?’’ মহুয়া নিজের কেন্দ্রে অন্য কোনও মহিলা নেত্রীকে ‘উঠতে’ দেন না বলেও দাবি করেছেন কল্যাণ। এখানেই শেষ নয়, তাঁর দাবি, ২০১১ সালে এক বর্ষীয়ান মহিলা সাংসদের লোকসভার অন্তর্গত একটি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মহুয়াকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মহিলা সাংসদ দিদিকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মহুয়ার দায়িত্ব নিতে পারবেন না। কল্যাণ জানিয়েছেন, উপনির্বাচনের প্রচারের জন্য তাঁকে কালীগঞ্জে যেতে বলেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখানেই বাধা দেন মহুয়া। শ্রীরামপুরের সাংসদের কথায়, ‘‘কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে দিদি আমাকে প্রচারে যেতে বলেছিলেন। উনি আইপ্যাককে বলে আমার যাওয়া আটকে দেন। এত কিসের ভয়?’’

কল্যাণের সঙ্গে মহুয়ার ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। লোকসভায় এর আগে প্রকাশ্যে তাঁরা বিতন্ডায় জড়িয়েছেন। গত এপ্রিলে দলের এক প্রবীণ সাংসদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছিলেন। সংসদ চত্বরে মহিলা সাংসদকে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছিল প্রবীণ সাংসদের বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয় যে, কমিশনের ফুটপাথে প্রহরারত বিএসএফ এবং সিআইএসএফ জওয়ানদের ওই মহিলা সাংসদ প্রবীণ সাংসদকে গ্রেফতার করতে বলেন। কারণ, তিনি মহিলা সাংসদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ (অ্যাবিউসিভ বিহেভিয়র) করেছেন। প্রকাশ্যে অবশ্য কেউ কারও নাম করেননি। তবে এই ঘটনার পর কল্যাণ বলেছিলেন, ‘‘নারদার চোর আর এর-তার থেকে গিফ্‌ট-নেওয়া সব দু’নম্বরিগুলো এক জায়গায় হয়েছে। দু’নম্বরিদের এক জায়গায় হতে বেশি সময় লাগে না।’’ বিদেশে থাকা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার নিয়ে সংসদে আদানি এবং মোদীকে জড়িয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে গত মেয়াদের শেষ পর্বে সংসদ থেকে মহুয়াকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল। ‘এর-তার থেকে গিফ্‌ট’ নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে কল্যাণ সেটিই ইঙ্গিত করতে চেয়েছিলেন। ফলে তাঁর সঙ্গে মহুয়ার দ্বন্দ্ব গোপন থাকেনি।

কসবার ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশ যে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে, তাঁরা তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ টিএমসিপির সদস্য। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর কল্যাণ বলেছিলেন, ‘‘সহপাঠী যদি সহপাঠিনীকে ধর্ষণ করেন, তা হলে নিরাপত্তা দেবে কে?’’ পুলিশের পক্ষে কলেজের ভিতরে গিয়ে সহপাঠীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, বোঝাতে চেয়েছিলেন কল্যাণ। এই মন্তব্যে বিতর্ক দানা বাঁধে। তাকে কেন্দ্র করে কল্যাণ এবং মহুয়ার দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে উঠল, যা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে অস্বস্তিতে রাখছে।

Mahua Moitra Kalyan Banerjee TMC Kasba Rape Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy