Advertisement
E-Paper

‘নারীবিদ্বেষ...!’ তৃণমূল নিন্দা করতেই মদন-কল্যাণকে কটাক্ষ মহুয়ার, কলেজে ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছে শাসকদলের অন্দরে

কসবার কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মদন মিত্রের মন্তব্যের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিল তৃণমূল। তার সূত্র ধরেই দুই নেতাকে পাল্টা কটাক্ষ করেন মহুয়া।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫ ১১:১৪
(বাঁ দিক থেকে) কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র।

(বাঁ দিক থেকে) কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র, শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।

কসবার কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূলের অন্দরে। দলের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিধায়ক মদন মিত্র এই ঘটনা প্রসঙ্গে যে মন্তব্য করেছেন, তা থেকে ইতিমধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছে তৃণমূল। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই মন্তব্য ‘ব্যক্তিগত’। আদৌ তা দলের অবস্থান নয়। তৃণমূলের এই বিবৃতির পরে দুই নেতাকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। পরোক্ষে দু’জনকেই ‘নারীবিদ্বেষী’ বলেছেন তিনি। জানিয়েছেন, এই ধরনের নারীবিদ্বেষী মন্তব্য যে-ই করুন না কেন, তৃণমূল তার প্রতিবাদ করে। মহুয়ার মন্তব্যে কল্যাণ এবং মদনের প্রতি তাঁর ‘বিরূপ মনোভাব’ স্পষ্ট।

বিতর্কের সূত্রপাত শুক্রবার। কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ভিতর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এবং তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, তিন জনই তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ টিএমসিপির সঙ্গে যুক্ত। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তৃণমূল সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেয়, অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। দল দেখা হবে না। কিন্তু কল্যাণের মন্তব্যের সুর ছিল ভিন্ন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সহপাঠী যদি সহপাঠিনীকে ধর্ষণ করেন, তা হলে নিরাপত্তা দেবে কে?’’ পুলিশের পক্ষে কলেজের ভিতরে গিয়ে সহপাঠীদের মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, বোঝাতে চেয়েছিলেন কল্যাণ। এই মন্তব্যে বিতর্ক দানা বাঁধে। কামারহাটির বিধায়ক মদন এর মাঝেই আরও এক ধাপ এগিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েটি ওখানে না গেলে এই ঘটনা ঘটত না! যদি যাওয়ার সময় কাউকে বলে যেত, কিংবা কয়েক জন বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে যেত, তা হলে হয়তো এই ঘটনা আটকানো যেত।’’ ধর্ষণের মতো ঘটনায় কেন নির্যাতিতার দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছে, প্রশ্ন ওঠে। বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। রাতে যে কারণে বিবৃতি দিয়ে তৃণমূল বলে দেয়, ‘‘এই ধরনের বক্তব্য ব্যক্তিগত। কোনও ভাবেই তা দলের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট— মহিলাদের উপর অপরাধের ক্ষেত্রে বরাবরই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে। যারা এই নৃশংস ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যেন কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।’’

তৃণমূলের এই পোস্ট নিজের সমাজমাধ্যমের পাতায় শেয়ার করেন মহুয়া। তিনি নিজে কারও নাম নেননি। লেখেন, ‘‘ভারতে নারীবিদ্বেষ দলের গণ্ডিতে আটকে নেই। কিন্তু তৃণমূলকে অন্যদের থেকে আলাদা করে একটাই বিষয়, আমরা এই ধরনের বিরক্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ করি, তা সে যে-ই করুন না কেন।’’ মহুয়ার পোস্ট নিয়ে বক্তব্য জানতে কল্যাণ এবং মদনের সঙ্গে রবিবার সকালে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ফোন তোলেননি। তাঁদের বক্তব্য পাওয়া গেলে এই প্রতিবেদনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, কল্যাণের সঙ্গে মহুয়ার ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা অবশ্য কারও অজানা নয়। লোকসভায় এর আগে প্রকাশ্যে তাঁরা বিতন্ডায় জড়িয়েছেন। গত এপ্রিলে দলের এক প্রবীণ সাংসদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছিলেন। সংসদ চত্বরে মহিলা সাংসদকে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছিল প্রবীণ সাংসদের বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয় যে, কমিশনের ফুটপাথে প্রহরারত বিএসএফ এবং সিআইএসএফ জওয়ানদের ওই মহিলা সাংসদ প্রবীণ সাংসদকে গ্রেফতার করতে বলেন। কারণ, তিনি মহিলা সাংসদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ (অ্যাবিউসিভ বিহেভিয়র) করেছেন। প্রকাশ্যে অবশ্য কেউ কারও নাম করেননি। তবে এই ঘটনার পর কল্যাণ বলেছিলেন, ‘‘নারদার চোর আর এর-তার থেকে গিফ্‌ট-নেওয়া সব দু’নম্বরিগুলো এক জায়গায় হয়েছে। দু’নম্বরিদের এক জায়গায় হতে বেশি সময় লাগে না।’’ বিদেশে থাকা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার নিয়ে সংসদে আদানি এবং মোদীকে জড়িয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগে গত মেয়াদের শেষ পর্বে সংসদ থেকে মহুয়াকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল। ‘এর-তার থেকে গিফ্‌ট’ নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে কল্যাণ সেটিই ইঙ্গিত করতে চেয়েছিলেন। ফলে তাঁর সঙ্গে মহুয়ার দ্বন্দ্ব গোপন থাকেনি। কসবার ধর্ষণকাণ্ডের কল্যাণের বিতর্কিত মন্তব্য এবং দলের নিন্দার পর প্রথম সুযোগেই তাই মুখ খুললেন মহুয়া। ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে নেতাদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব দলকে অস্বস্তিতে রাখছে, মেনে নিচ্ছেন তৃণমূলের অনেকেই।

(ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির ঘটনায় যত ক্ষণ না অভিযুক্তকে আদালতে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তত ক্ষণ তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশে আইনি বাধা থাকে। সেই কারণে আনন্দবাজার ডট কম কসবার ধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের নাম এবং ছবি প্রকাশে বিরত থাকছে)



kasba Mahua Moitra Kalyan Banerjee Madan Mitra Kasba Rape Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy