Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ছেলে-বৌমা দোষী, মানেন না শাহজামাল

শুক্রবার কলকাতার আদালত খাগড়াগড়-কাণ্ডে যে ১৯ জনকে সাজা শুনিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে আব্দুল হাকিম এবং তার স্ত্রী আলিমা বিবি।

নির্লিপ্ত: বাড়িতে শেখ শাহজামাল। ডেউচায়। নিজস্ব চিত্র

নির্লিপ্ত: বাড়িতে শেখ শাহজামাল। ডেউচায়। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত ও পাপাই বাগদি
মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

বাড়িতে খবরের কাগজ আসে না। টিভিও নেই। তাই তাঁরা কিছুই জানতেন না। শনিবার মহম্মদবাজার ডেউচার বাড়ির দাওয়ায় বসে এই কথাই জানালেন খাগড়াগড়-বিস্ফোরণে সাজাপ্রাপ্ত আব্দুল হাকিমের বাবা শেখ শাহজামাল। নির্লিপ্ত ভাবে বললেন, ‘‘পাড়ার লোকের কাছেই শুনেছি ছেলে, বৌমার সাজা হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।’’

শুক্রবার কলকাতার আদালত খাগড়াগড়-কাণ্ডে যে ১৯ জনকে সাজা শুনিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে আব্দুল হাকিম এবং তার স্ত্রী আলিমা বিবি। ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে আব্দুলের, স্ত্রী আলিমার সাজা ছ’বছরের। সাজার মেয়াদ প্রসঙ্গে না গিয়ে শাহজামাল দাবি করছেন, ‘‘আমার ছেলে-বৌমা নির্দোষ। ওদের ফাঁসানো হয়েছে।’’ তবে এই প্রসঙ্গে খুব বেশি কিছু বলতে চাননি বৃদ্ধ। পাশে থাকা আব্দুলের ভাইরাও চাননি, সংবাদমাধ্যমকে বাবা আরও কিছু বলুন।

২০১৪ সালের দুর্গাপুজোর অষ্টমীতে বর্ধমান শহরের অদূরে খাগড়াগড়ের ওই বিস্ফোরণে মারা যায় শামিম ওরফে শাকিল আহমেদ এবং সুবহান শেখ। আব্দুল হাকিম গুরুতর জখম হয়। বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলে হাকিম ছাড়াও ছিল নিহত শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া বিবি এবং হাকিমের স্ত্রী আলিমা বিবি। দু’জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। আহত হাকিমকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পায়ে স্‌প্লিন্টার ঢুকে গিয়েছিল। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে তার পায়ে একাধিক বার অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি দু’বার স্ক্রিন গ্রাফ্টিং-ও করা হয়। প্রায় এক মাস পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এনআইএ-র হাতে তুলে দেন হাকিমকে।

ডেউচার আব্দুল হাকিম কী ভাবে জেএমবি-র মতো জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে পড়ল, তা নিয়ে অবশ্য প্রথম থেকেই তাঁরা ‘অন্ধকারে’ ছিলেন বলে দাবি করেছেন হাকিমের বাড়ির লোকজন। এখনও তাঁরা জানেন না সে-সব। শাহজামাল তখন জানিয়েছিলেন, ২০০৭ সালে মাধ্যমিকে অনুত্তীর্ণ হয়ে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের মামারবাড়িতে চলে যায় হাকিম। বছর তিনেক পরে গ্রামে ফিরে মুদির দোকান করে। কিন্তু বছরখানেক পরেই সে নিখোঁজ হয়। পরে তাঁরা জানতে পারেন, ছেলে বর্ধমানে রিকশা চালায়। কাজের ফাঁকে আরবি ভাষার পাঠ নেয়। হাকিমের স্ত্রী আলিমার বাড়ি মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে।

আব্দুল ও আলিমার সাজা ঘোষণার পরেও ডেউচা গ্রামের বাউড়িপাড়া পেরিয়ে পলেস্তরা ছাড়া পুকুরপাড়ে থাকা একতলা পাকা বাড়ির সদস্যেরা সেই ধারণাই আঁকড়ে যে, ওই দু’জনের কোনও ভাবেই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগ নেই। শাহজামাল এ দিন বলছিলেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে শেষ দেখা তিন বছর আগে ওর মায়ের (জালিশা বিবি) মৃত্যুর পরে। সরকারের কাছে আবেদন করায়, মায়ের কাজে মাত্র কিছুক্ষণের জন্য এসেছিল ছেলে। আর যোগাযোগ নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় লোকমুখে সাজার খবর পেয়েছি। এর বেশি কিছু জানি না।’’ বাউড়িপাড়ার বাকি বাসিন্দারাও মুখ খুলতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE