Advertisement
E-Paper

ভিক্ষেতে কেন ৩০ টাকা, মার জুটল মামাবাড়িতে

নির্দেশ ছিল, দৈনিক ৫০ টাকা ভিক্ষে জোগাড় করেই বাড়ি ফিরতে হবে। সারা দিন বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে দিনের শেষে অনাথ মেয়েটির কৌটোয় জুটেছিল ৩০ টাকা! অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ মামাবাড়িতে ফিরে কপালে জুটল প্রবল মার। বাড়ি থেকেও বের করে দেওয়া হল!

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৯:১৮

নির্দেশ ছিল, দৈনিক ৫০ টাকা ভিক্ষে জোগাড় করেই বাড়ি ফিরতে হবে। সারা দিন বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে দিনের শেষে অনাথ মেয়েটির কৌটোয় জুটেছিল ৩০ টাকা! অভিযোগ, সেই ‘অপরাধে’ মামাবাড়িতে ফিরে কপালে জুটল প্রবল মার। বাড়ি থেকেও বের করে দেওয়া হল!

বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার ডিউটি অফিসারের কাছে রবিবার যখন কাঁদতে কাঁদতে এই অভিযোগ করছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মৌসুমি (নাম পরিবর্তিত), তখন থানাতেই একটি অন্য ঘটনার তদন্তে এসেছিলেন চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা। ছোট্ট মেয়েটির মুখে সমস্ত শুনে তো তাঁরা রীতিমতো অবাক! থানা থেকেই ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে চাইল্ড লাইন।

জেলা চাইল্ড লাইনের সদস্য শিবদাস ঘটক বলেন, “নির্যাতনের শিকার ছাত্রীটি আর মামা বাড়ি যেতে চায় না। সব জেনে আমরা ওই ছাত্রীকে হেফাজতে নিয়েছি।’’ আপাতত মেয়েটিকে বাঁকুড়া শহরের একটি হোমে রাখা হয়েছে। মামাবাড়ির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে মেয়েটি, তা জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে লিখিত ভাবে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল।

এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন সোমা কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মেয়েটি নিজে থানায় গিয়ে তার উপরে অত্যাচারের বিবরণ দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ স্রেফ একটি সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সেরেছে। অথচ পুলিশের উচিত ছিল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, বাঁকুড়া জেলায় এর আগেও এই ধরনের কয়েকটি ঘটনায় পুলিশকে নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা ডায়েরি করে তদন্ত শুরু করেছি। মেয়েটি মূলত তার দিদার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে। এফআইআর করে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা, তা দেখা হচ্ছে।’’

বিষ্ণুপুর শহরের ছিন্নমস্তা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মৌসুমি স্থানীয় স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। বেশ কয়েক বছর আগেই তার মা-বাবা মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে মামা বাড়িতে দিদা ও মামা-মামিদের সঙ্গে থাকে সে। মৌসুমির কথায়, “আমি আর ওই বাড়িতে যাব না। ওরা আমাকে মারে। লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। জোর করে ভিক্ষে করিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা নেয়।’’ মেয়েটির দিদা শহরের একটি হোটেলে কাজ করেন। এ ছাড়াও বাড়িতে তিন মামা ও মামি রয়েছেন। মৌসুমির অভিযোগ, স্কুলের ফাঁকেই প্রতিদিন বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষে করে ৫০ টাকা করে নিয়ে যেতে হত বাড়িতে। শনিবার মাত্র ৩০ টাকা ভিক্ষে করে জুটিয়েছিল সে। বাড়ি ফিরতেই তাই তার দিদা তাকে মারধর করেন। রবিবার সকালে তাকে জোর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই সে সোজা থানায় গিয়ে অভিযোগ জানায়।

সজলবাবুর কথায়, “ভাবতেই পারছি না বিষ্ণুপুর শহরে এ রকম ঘটতে পারে। মানসিক ভাবে মেয়েটি বিপর্যস্ত। ওর কাউন্সেলিং করাব। ওর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে।’’

এ দিন ওই বাড়িতে গিয়ে অবশ্য মৌসুমির দিদার দেখা মেলেনি। পড়শিরাও মুখ খুলতে চাননি। মেয়েটির বড় মামা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ও নিজেই ভিক্ষে করতে যেত। আমরা জোর করিনি। মারধরও করিনি। বাড়ি থেকে সে নিজেই চলে গিয়েছে।’’

rajdip bandopadhay begging beat girl kin bishnupur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy