Advertisement
E-Paper

‘নির্মল’ এলাকা ফিরিয়ে দিতে খসবে ৩ লক্ষ

সাধারণ আবর্জনা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে যুক্ত হয় পুণ্যার্থীদের একাংশের যত্রতত্র মলত্যাগের সমস্যা। যাতে সাফাইকর্মীদের বিড়ম্বনা আরও বাড়ে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। কিন্তু সকলেই যে পুণ্যার্থী! তাই সব দেখেশুনেও চুপচাপ বসে থাকতে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৮
বিড়ম্বনা: ময়দান চত্বরে গঙ্গাসাগর যাত্রীদের ভিড়ের জেরে বাড়ছে দূষণ। নিজস্ব চিত্র

বিড়ম্বনা: ময়দান চত্বরে গঙ্গাসাগর যাত্রীদের ভিড়ের জেরে বাড়ছে দূষণ। নিজস্ব চিত্র

গঙ্গাসাগর যাত্রীদের যত্রতত্র মলত্যাগ। যা পরিষ্কার করতে তিন লক্ষ টাকা গচ্চা যেতে বসেছে কলকাতা পুরসভার। কারণ, ওই টাকা দিয়ে নোংরা ঢাকতে বালি কিনতে হচ্ছে তাদের।

পুরকর্তাদের একাংশ কিছুটা অসহায় ভাবেই জানাচ্ছেন, বর্তমান আর্থিক অবস্থায় যেখানে বহু ক্ষেত্রে পুর প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ পাওয়াটাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে, সেখানে পুণ্যার্থীদের নোংরা পরিষ্কারেই এত টাকা বেরিয়ে গেলে তা পুর কোষাগারে চাপ ফেলবে। অথচ, কিছু করারও নেই। কারণ, শহরকে সাফসুতরো রাখার দায়িত্ব তো পুর প্রশাসনের। হোক না সে গঙ্গাসাগরযাত্রীদের মলমূত্র। অনেকে আবার রসিকতা করে এ-ও বলছেন, পুর কর্তৃপক্ষের এই ক’দিন অক্ষয়কুমার অভিনীত ‘টয়লেট: এক প্রেম কথা’ সিনেমাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। তাতে যদি পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টাত।

প্রতি বছরই গঙ্গাসাগর উপলক্ষে সারা দেশ থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন এ শহরে। বাবুঘাট, উট্রাম ঘাট, ময়দান-সহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের জন্য বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্থাও করা হয় প্রশাসনের তরফে। এত লোকের সমাগমের জেরে এ সময়ে শহরে জঞ্জালের পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। সাধারণ আবর্জনা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে যুক্ত হয় পুণ্যার্থীদের একাংশের যত্রতত্র মলত্যাগের সমস্যা। যাতে সাফাইকর্মীদের বিড়ম্বনা আরও বাড়ে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। কিন্তু সকলেই যে পুণ্যার্থী! তাই সব দেখেশুনেও চুপচাপ বসে থাকতে হয় পুলিশ-প্রশাসনকে।

এ বার সেই বিড়ম্বনা আক্ষরিক অর্থেই চাপা দেওয়ার জন্য চলতি মাসে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭১৬ টাকার বালি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘আমাদেরই তো সব দায়। শহরটাকে নোংরা করে যাবে অন্যেরা। কিন্তু সেটা পরিষ্কার তো আমাদেরই করতে হবে!’’

অথচ, পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, পুণ্যার্থীদের জন্য অস্থায়ী শৌচালয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথায় কোথায় সেগুলি রয়েছে, তাঁদের তা জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও অনেকের গন্তব্য সেই মাঠ-ময়দানই। ফলে শুধু বালিই নয়, মাটি, ব্লিচিং, ফিনাইল নিয়েও মল-যুদ্ধে নামতে হয়েছে পুরসভাকে। মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘শৌচালয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরেও যদি অনেকে মাঠ বা খোলা জায়গাই পছন্দ করেন, তা হলে আমরা আর কী করতে পারি? আমাদের দিক থেকে যতটা সম্ভব, ততটা চেষ্টা করছি। মাটি, বালি, ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে রোজ।’’ এমনিতে গঙ্গাসাগর উপলক্ষে বাড়তি কর্মী নিয়োগ করেছে পুরসভা। তবে এ বার যে হেতু ঘরে ফেরার পালা, তার আগে শহর ঘুরতে বেরিয়েছেন অনেক পুণ্যার্থী। তাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর-সহ দ্রষ্টব্য স্থানগুলিতেও অতিরিক্ত সাফাইকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে বলে দেবব্রতবাবু জানিয়েছেন।

পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতিদিনই কোথায় কোথায় নোংরা পড়ে রয়েছে, তা সরেজমিন দেখা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী বালি-মাটি নিয়ে নেমে পড়ছেন পুরকর্মীরা। যাতায়াতের জায়গা যাতে অগম্য হয়ে না ওঠে, তাই দ্রুত সাফাইয়ের কাজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘বাইরে থেকে অনেকে আসেন, তাই কিছু তো বলা যায় না। আমরাই তৈরি থাকি। যাতায়াতের পথে কুকুরের মল পড়ে থাকলেও তো পুরকর্মীরাই পরিষ্কার করেন। এ ক্ষেত্রেও তাই করতে হবে! আগামী তিন দিনের মধ্যে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’

শুধু মল-বিড়ম্বনাই নয়, পুণ্যার্থীদের হাঁটতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্য এবড়ো-খেবড়ো, অসমান জায়গাতেও বালি, মাটি ফেলা হয়েছে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘দিনের পর দিন রাস্তা খানাখন্দে ভরে থাকে। তখন তা সারাতে মাস ঘুরে যায়। কিন্তু এখানে দেরি করার উপায় নেই। গঙ্গাসাগর বলে কথা!’’

Gangasagar Pilgrims KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy