Advertisement
E-Paper

কত রাত হবে? ৮টা-৯টা, নাকি তারও বেশি!

এ শহরে নতুন চাকরি নিয়ে আসা এক মহিলার পরিচয় দিয়ে ভাড়া বাড়ি খুঁজতে সল্টলেক অঞ্চলের এক ‘ব্রোকারে’র দ্বারস্থ হওয়া গিয়েছিল। এক মহিলা একাই থাকবেন শুনে ফোনে বলেছিলেন, ‘‘বাড়ি দেখতে গিয়ে সাবধানে কথা বলতে হবে।’’ কিন্তু ‘ব্রোকারের’ সঙ্গে একা দেখা করতে গিয়েই তো জুটল বকুনি।

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৯
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

একা থাকবেন ভাল কথা, কিন্তু বাড়ি দেখার সময় তো কাউকে নিয়ে আসতে পারতেন!

মানে?

বাবা, মা, দাদা, কাকা— কেউ নেই? হয় নাকি!

এ শহরে নতুন চাকরি নিয়ে আসা এক মহিলার পরিচয় দিয়ে ভাড়া বাড়ি খুঁজতে সল্টলেক অঞ্চলের এক ‘ব্রোকারে’র দ্বারস্থ হওয়া গিয়েছিল। এক মহিলা একাই থাকবেন শুনে ফোনে বলেছিলেন, ‘‘বাড়ি দেখতে গিয়ে সাবধানে কথা বলতে হবে।’’ কিন্তু ‘ব্রোকারের’ সঙ্গে একা দেখা করতে গিয়েই তো জুটল বকুনি।

এ শহরে বাড়ি ভাড়া পেতে কেন এখনও নাজেহাল হওয়ার অভিযোগ তোলেন মহিলারা, তা বুঝতেই শুরু হয়েছিল খোঁজখবর।

প্রথম দিন সল্টলেক পরিক্রমার শুরুতেই বকুনি দিয়ে নরম হলেন ব্রোকার, ‘‘আসলে কী জানেন দিদি, একা মহিলাদেরও বিশ্বাস করেন না বাড়িওয়ালারা। বোঝেনই তো, কত কী ঘটে!’’ সঙ্গে অভিভাবক না নিয়ে যাওয়ার জের এ ভাবেই চলল পিএনবি চত্বরের একটি বাড়িতে পৌঁছনো পর্যন্ত। প্রৌঢ়া মালকিন নেমে এলেন। তিনতলা বাড়ির নীচের তলার দু’টো ঘর ভাড়া দেবেন। মধ্য তিরিশের মহিলা একা থাকার জন্য বাড়ি খুঁজছেন দেখে কৌতূহল চাপতে পারলেন না। প্রশ্ন এল, ‘‘বিয়ে করেননি?’’ সম্ভাব্য ভাড়াটের উত্তর শুনে কিছু ক্ষণের স্তব্ধতা। বিবাহিতা মহিলা একাই নেবেন ভাড়া। স্বামী কৃষ্ণনগরে থাকেন অথচ স্ত্রীর সঙ্গে বাড়ি খুঁজতে আসেননি, এমনটা হজম হল না তাঁর! অতএব নিষ্ক্রমণ।

সে বাড়ি থেকে বার করে এনেই চোটপাট ব্রোকারের। ‘‘এ সব বললে কিন্তু বাড়ি পাবেন না।’’ জানা গেল, বাড়ি পেতে হলে অভিভাবক সঙ্গে আসাই ভাল। রোজ যে বেশ রাত হয় বাড়ি ফিরতে, সে কথাও আগেভাগে জানানোর দরকার নেই। তবে খদ্দের হাতছাড়া হোক, এমনটাও চান না তিনি। তাই প্রথম দিনের সন্ধান শেষে তাঁর আশ্বাসবাণী, ‘‘বিবাহিতা বলার দরকার নেই। কাল চলে আসবেন, অন্য বাড়ি দেখিয়ে দেব। বেশি টাকা জমা রাখতে হতে পারে!’’

কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, বাড়ির খোঁজে ইতিমধ্যে ফোন গিয়েছে বহু ‘ব্রোকারের’ মোবাইলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তর মিলেছে, ‘মধ্যবিত্ত’ পাড়ায় একক মহিলারা পছন্দের ভাড়াটে নন। তার উপরে বেশি রাতে ফেরা মহিলাকে বাড়ি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। সোজাসাপ্টা উত্তর কলকাতার এক ব্রোকার, ‘‘ফিরতে অনেক রাত হবে বলছেন তো, তা-ই পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি রাতে হবে শুনলেই লোকে অন্য রকম ভাবে!’’ তবে একটু বেশি ভাড়া দিলে চেষ্টা করবেন বলে জানালেন কেউ কেউ।

তেমনই এক চেষ্টায় পৌঁছনো গেল কসবার এক শপিং মলের পিছনের ফ্ল্যাটবাড়িতে। পাশাপাশি দু’টি ফ্ল্যাট। একটি ভাড়ার, অন্যটিতে সংসার বছর পঁয়তাল্লিশের মালিক-মালকিনের। একা মহিলা ভাড়াটেতে আপত্তি নেই তাঁদের। মালকিন বললেন, ‘‘এখন তো কত মেয়ে বিয়েই করে না। অন্যের কথায় চলতে ভালবাসে না এখনকার মেয়েরা! কত রাত হবে? আটটা-ন’টা তো? নাকি তারও বেশি?’’ জানা গেল, আগে ওই ফ্ল্যাটে দু’জন অবিবাহিতা তরুণী থাকতেন। বিপদ-আপদে মালিকেরা তাঁদের সাহায্যও করেছেন। ‘একাকিনী’ ভাড়াটের নিরাপত্তার স্বার্থে তাই ফ্ল্যাটের একটি চাবি জমা রাখতে হবে মালিকের কাছে। যাতে ‘প্রয়োজনে’ তাঁরা ঢুকতে
পারেন সে বাড়িতে।

‘ছিমছাম’ ভাড়াটেই খুঁজছেন দমদমের দোতলা বাড়ির মালিক। একা মহিলা হলেই ভাল। ফলে নাগেরবাজারের অনতিদূরে গুটিগুটি পৌঁছনো গেল। আপাত ভাবে সম্ভাব্য ভাড়াটেকে পছন্দ মালিকের। শুধু সংশয় দূর করতে ধেয়ে এল শর্তগুচ্ছ। ভদ্র-নম্র কণ্ঠে মালিক বললেন, ‘‘আশা করি, নিজের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বাইরের লোক ঢোকাবেন না এখানে।’’
বাড়ির লোক, বন্ধুবান্ধব কেউ আসতে পারবেন না? মিষ্টি করে জবাব, ‘‘তা কেন? কনট্র্যাক্ট সই করার আগে নিশ্চয় বাবা-মায়ের সঙ্গে আলাপ করাবেন আমাদের।’’ বন্ধুদের ‘নো-এন্ট্রি’? ‘‘বোঝেনই তো, ভদ্রলোকের বাড়ি। শেষে কে কাকে নিয়ে এসে ঢুকে বসবে। এখনকার মেয়েদেরও তো ঠিক নেই!’’

অভিভাবকহীন মহিলা ভাড়াটের ট্যাঁকের জোর কত, তা নিয়েও সংশয়। রাজারহাটের এক ব্রোকার সাফ জানালেন, সে অঞ্চলে থাকতে মোটা টাকা লাগে। আগে থেকে বাজেট বুঝে দেখা করাই ভাল। যাদবপুরে এক বাড়িমালিকের নিয়ম, বাড়ির কাউকে এসে পরিচয়পত্র দেখিয়ে সই করতে হবে চুক্তিতে। ‘‘মহিলা একা থাকবেন, শেষে টাকা না পেলে কার কাছে যাব জানতে হবে তো!’’ ব্রোকারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন বাড়িমালিক।

Kolkata Live in House Rent
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy