গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কলকাতা পুরভোটে কি কেন্দ্রীয় বাহিনী নামবে, শনিবারের মধ্যেই তা জানাবে আদালত। শুক্রবার এই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে। কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলকে (এএসজি) প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘এখন কি বাহিনী আনা সম্ভব?’’ তার উত্তরে এএসজি বলেন, “ ৬ ঘণ্টার মধ্যে বাহিনী আনা সম্ভব।” একই সঙ্গে তিনি জানান, তবে এখনই বিশাল সংখ্যক বাহিনী আনা সম্ভব নয়। সিআরপিএফ-সহ বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি তিনি বলতে পারবেন। এর পরই এএসজি বলেন, “চাহিদা মতো কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে আমরা প্রস্তুত। নির্বাচনের কাজে সরাসরি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যুক্ত করা না হলেও, এলাকা টহলদারিতে মোতায়েন করা যেতে পারে।”
অন্য দিকে, বাহিনী নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে না দিতে পারায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তিরস্কার করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি কমিশনের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, ‘‘বিগত ভোটের পরিস্থিতি দেখে ভোটাররা ভোট দিতে এগিয়ে না এলে, তার জন্য আপনারা কী ব্যবস্থা করেছেন?’’ এ প্রসঙ্গে কমিশনের আইনজীবী জানান, প্রচুর সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ১০ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু কমিশনের এই উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। এ প্রসঙ্গে সঠিক তথ্য দিতে না পারায় কমিশনকে ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনারা কি এই মামলাটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না?” এর পরই কমিশনকে এ বিষয়ে মজবুত তথ্য দিতে বলেন তিনি। অবশেষে কমিশনের আইনজীবী জানান, ১১ হাজার ৯৯৭ সশস্ত্র পুলিশ। এবং ১০ হাজার ৬২৪ জন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
এক দিন পরই তো ভোট। নিরাপত্তা নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা কোথায়, প্রশ্ন করেন বিচারপতি। তখন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (এজি) বলেন, “বলা হচ্ছে, ভোটাররা ভোট দিতে যেতে ভয় পাচ্ছে। এটা তো কোনও জনস্বার্থ মামলা নয়। মাত্র চার জন প্রার্থী অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন। তা হলে ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’-সহ এই বিষয়গুলি আসছে কেন?” তিনি আরও বলেন, “প্রয়োজনে আরও পুলিশ দেওয়া হবে। মোট ২৭ হাজারের মতো কলকাতা পুলিশ রয়েছে। তার মধ্যে ১৮ হাজারের বেশি পুলিশ ভোটের কাজে নিযুক্ত। আর বাকি ৫ হাজার থাকছে রাজ্য পুলিশ।”
এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি ফের প্রশ্ন করেন, ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব কে নেবে। তার উত্তরে এজি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত করে বলছি রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনার নেবে। তাঁরা সিনিয়র আইপিএস অফিসার। তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, রাজ্য নির্বাচন কমিশন পুলিশি ব্যবস্থায় খুশি। এটা কলকাতা না হয়ে গোটা রাজ্যের ক্ষেত্রে হলে আলাদা বিষয় ছিল। কিন্তু কলকাতায় ভাল ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবারের মতো হাই কোর্টে শুনানি শেষ হয়। স্থগিত থাকে রায়দান। আদালত সূত্রে খবর, শুক্রবার রাত কিংবা শনিবার সকালে নির্দেশনামা ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কাজে লাগিয়ে পুরভোট করানো হোক, এই আবেদন করে প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে বিজেপি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলা ফেরত পাঠায় কলকাতা হাই কোর্টে। এর পর হাই কোর্টে নতুন করে মামলা করে বিজেপি। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি হয় আদালতের সিঙ্গল বেঞ্চে। আদালত তখন জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী নয়, রাজ্য পুলিশের উপরই আস্থা রাখছে তারা। বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বলেন, “কেউ নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ করবেন। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে পুলিশকে।” এ নিয়ে রাজ্য এবং কমিশনের ব্যাখ্যাতেও সন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। কিন্তু সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে যায় বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy