Advertisement
E-Paper

কলকাতার কড়চা

ক্লাস এইটের মুনমুন সেনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু পুটু বেরা। মুনমুন মূক-বধির। পুটু দৃষ্টিহীন। ওদের বন্ধুত্বের মাধ্যম অনুভূতি। স্পর্শের মাধ্যমে পরস্পরকে অনুভব করে। যেখানে যায়, দু’জনে এক সঙ্গে। বছর দুয়েক আগে গিয়েছিল হিমাচল প্রদেশে, পর্বত অভিযানে। একে অন্যের হাত ধরে! মুনমুনরা ‘ভয়েস অব ওয়ার্ল্ড’-এর আবাসিক। সংস্থাটি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ১৯৯২ সাল থেকে কাজ করে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে এদের ১৪টি কেন্দ্র। অন্ধদের জন্য বিএড ক্লাস হয়।

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০০:৫২

অনুভবের জগৎ

ক্লাস এইটের মুনমুন সেনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু পুটু বেরা। মুনমুন মূক-বধির। পুটু দৃষ্টিহীন। ওদের বন্ধুত্বের মাধ্যম অনুভূতি। স্পর্শের মাধ্যমে পরস্পরকে অনুভব করে। যেখানে যায়, দু’জনে এক সঙ্গে। বছর দুয়েক আগে গিয়েছিল হিমাচল প্রদেশে, পর্বত অভিযানে। একে অন্যের হাত ধরে! মুনমুনরা ‘ভয়েস অব ওয়ার্ল্ড’-এর আবাসিক। সংস্থাটি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে ১৯৯২ সাল থেকে কাজ করে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে এদের ১৪টি কেন্দ্র। অন্ধদের জন্য বিএড ক্লাস হয়। রয়েছে নিজস্ব ব্রেল প্রেস, গ্রন্থাগার। যাতে ওরা ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে ব্রেলের মাধ্যমে অন্যদেরও আলো দেখাতে পারে। মুনমুনরা সবাই কিন্তু অনাথ নয়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অনেক সময় মাথার উপর ছাদটাও কেড়ে নেয়। সংগঠনের সেন্টারেই ওরা আবাসিক। পুরুলিয়া থেকে এসে এখানেই থাকে নমিতা। বাড়িতে বাবা আছেন। আবার বাবা-মা কেউ নেই পাপ্পুর। মামার বাড়িতেই থাকত। এখন এখানে।

বাইরের জগতের সঙ্গে ওদের যোগাযোগ বাড়াতেই সংগঠনটি গত কয়েক বছর ধরে আয়োজন করছে নেচার স্টাডি, রক ক্লাইম্বিং, ট্রেকিং ইত্যাদি। দু’বছর আগে ওরা বেরিয়েছিল পর্বত অভিযানে। ৩৫ জনের দলে ১২ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী, ৭ জন সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, ৪ জন প্রায় অন্ধ আর এক জন মূক-বধির। গন্তব্য হিমাচল প্রদেশ। প্রবীণ পর্বতারোহী ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায়, তাঁর ও দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে অভিযান কলকাতা থেকে মানালি হয়ে জিসপা, সেখান থেকে বারলাচাল হয়ে ভরতপুর। ওদের অভ্যস্ত করতেই এই যাত্রাপথ। ওরাও মানিয়ে নিয়েছিল নিজেদের। ১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠেছিল পাপ্পু আর নমিতা। নমিতার কথায়, ‘প্রথম দিকে একটু ভয় ভয় করছিল। তার পর দড়ি ধরে ক্রমশ উঠে গেছি।’ এই পুরো অভিযানের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেন রাজা অভিমন্যু। ১ জুলাই গ্যালারি গোল্ডে সেই সব ছবি নিয়েই শুরু হচ্ছে একটি প্রদর্শনী ‘এক্সপিডিশন নম্বর ওয়ান’ (৬ জুলাই পর্যন্ত, রোজ ৪-৮টা)। ছবির বইটি, আ ডে অ্যাট জিসপা-ও প্রকাশিত হবে সেখানেই। সঙ্গে তারই ছবি।

জন্মদিনে

‘মানুষের রোগ থাকে মনে, শরীরে নয়। মনটাকে যদি রোগমুক্ত করা যায় শরীরও সুস্থ হয়ে ওঠে’— এ কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন বিধানচন্দ্র রায়। তাঁর প্রয়াণের পর পাঁচ দশক অতিক্রান্ত। ১ জুলাই বিকাল সাড়ে চারটেয় মহাজাতি সদন ও কলকাতা সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে মহাজাতি সদন অ্যানেক্স ভবন সেমিনার হলে তাঁর ১৩৩ তম জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনাসভা ‘সার্বিক উন্নয়নের প্রেক্ষিতে বিধান রায়ের ভাবনা’, থাকবেন কাশীকান্ত মৈত্র, ব্রাত্য বসু, সুখরঞ্জন সেনগুপ্ত, বারিদবরণ ঘোষ। সঙ্গে থাকবে বিধান রায়ের মূল্যবান গ্রন্থসংগ্রহের প্রদর্শনী।

ছোটদের ছবি

দশ বছরের জোজো বাবাকে লুকিয়ে একটা পাখি নিয়ে আসে বাড়িতে। তার সঙ্গে খুব ভাবও হয়ে যায় জোজোর। বাবা টেরও পান না, বাবা পছন্দও করেন না পাখিটাখি বাড়িতে থাকুক, অথচ পাখিটার সঙ্গে বন্ধুত্ব বেড়েই চলে জোজোর।— পশুপাখিদের সঙ্গে মানুষের সৌহার্দ্য নিয়ে নেদারল্যান্ডের ছবি ‘কাউবয়’ (সঙ্গে স্থিরচিত্র)। এমন অজস্র ছোটদের ছবি সারা দুনিয়া থেকে বেছে এনে দেখানো হচ্ছে ১৪তম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে। উদ্যোগে সিনে সেন্ট্রাল, সঙ্গে ইউনিসেফ ও নন্দন। নন্দনেই ৪-৮ জুলাই, প্রতি দিন ৩টে ও সাড়ে ৫টায়। ৩ জুলাই সন্ধে সাড়ে ৬টায় উদ্বোধন, উদ্বোধনী ছবি বাংলা— রামধনু। উপস্থিত থাকবেন ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীরা। এ-উৎসব তারপর রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে ২২-২৫ জুলাই, প্রতি দিন ৪টে ও ৬টায়।

দাদাঠাকুর

কলকাতা যে কেবল ভুলে ভরা... সারকথাটি বুঝেছিলেন তিনি, জঙ্গিপুরের দাদাঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলতেন ‘আত্মঘাতী দেবশর্মা’, সাধারণ মানুষের কাছে দাদাঠাকুর। ‘বিদূষক’ পত্রিকা চালাতেন, কিন্তু আক্রমণের পন্থাটির মধ্যে ছিল না কোনও বিদূষণ। মণীশ ঘটক তাই লিখেছিলেন, ‘শুধুমাত্র যে তোমারে বিদূষক কয়, সে কভু পায়নি তোমার সত্য পরিচয়।’ তাঁর জীবনকাহিনির সেই সত্য পরিচয়টি তুলে ধরার চেষ্টায় এক বার একটি সিনেমা হয়েছিল বাংলায়। এ বার শহরের মঞ্চে দাদাঠাকুর-এর জীবন। যোজক-এর নতুন নাটক ‘দাদাঠাকুর’-এর প্রথম অভিনয় হয়ে গেল ২০ জুন, মধুসূদন মঞ্চে। নির্দেশনায় দুলাল লাহিড়ী, নামভূমিকায় রজত গঙ্গোপাধ্যায়।

বোনফোঁটা

ভাইফোঁটা, জামাইষষ্ঠী, নীলষষ্ঠী, শিবের উপোস— সব আচার-অনুষ্ঠানই ছেলেদের জন্য। মেয়েরা এ ব্যাপারে ভীষণ বঞ্চিত। মেয়েদের জন্য এমন অনুষ্ঠান হয় না। তা হলে বোনফোঁটা করলে কেমন হয়? এই ভাবনাটাই ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন মিতা চক্রবর্তী। হাতেনাতে ফল। দেশবিদেশের বন্ধুরা অনেকেই আগ্রহী। তাই ২ জুলাই বেলা ১২টায় স্বভূমিতে (সভাঘর ১) বোনফোঁটার আয়োজন করেছে ‘বোনফোঁটা সমিতি’। ভাইয়েরা ফোঁটা দেবেন বোনেদের। দুর্বার থেকে যৌনকর্মীরাও আসবেন বোনফোঁটা নিতে। এমন উদ্যোগ আরও হোক না!

সংবাদপত্রের শিল্পীরা

কোনও চিত্রকরের ছবি আঁকার সময়ে প্রতিনিয়ত সমাজজীবনের ওঠাপড়া তাঁর ছবিতে উজিয়ে আসে প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে। তার ওপর শিল্পীরা যদি আবার কর্মসূত্রে সংবাদপত্র-প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তা হলে তাঁদের শিল্পকর্ম আরও বেশি সময়-সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে। তবে শিল্পী সুব্রত চৌধুরী মনে করেন, ‘সংবাদপত্রের কাজে যত সৃষ্টিশীলতাই থাকুক, সেখানে তো প্রদত্ত বিষয়ের দাবি মেনে ছবি আঁকতে হয়। কিন্তু সে কাজের বাইরে আমাদের স্বাধীন মন যে ছবি আঁকতে চায় তার প্রদর্শনী হওয়া উচিত।’ এ বার সংবাদপত্রে যুক্ত তেমনই সব বিশিষ্ট শিল্পীর ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে এক প্রদর্শনী: ‘প্রিন্ট ও আর্ট’। মায়া আর্ট স্পেস-এ (মোহনা, ৩২৯ শান্তি পল্লি, রাজডাঙা, কলকাতা-১০৭) ২৭ জুন থেকে। চলবে ৬ জুলাই অবধি, প্রতি দিন ২-৮টা। গোটা প্রদর্শনীর পরিকল্পনা-ভাবনা দেবব্রত চক্রবর্তীর।

হরবোলা

বাঘের ডাক শোনাও তো! শুনে পছন্দ হল না স্বপনবুড়োর। এক সপ্তাহের মধ্যে সঠিক ডাকতে পারলে তবেই দিল্লি যাওয়ার ছাড়পত্র। যুবক শুভেন্দু গেলেন চিড়িয়াখানায়। বাঘের ডাক শুনে শুনে রপ্ত করে দিল্লি যাওয়ার ছাড়পত্র মিলল। সেই থেকে শুভেন্দু বিশ্বাস ধীরে ধীরে হয়ে উঠলেন হরবোলা শিল্পী। ডাক পড়তে শুরু করল রেডিয়ো নাটক, সিনেমায়। তালিম নিলেন হরবোলা রবীন ভট্টাচার্যের কাছে।

এখন ৭২-এও অবলীলায় মুখের উপরে হাত চাপা দিয়ে ট্রেনের শব্দ, কুকুর-বিড়াল-পাখির ডাক, বাচ্চার কান্না ফুটিয়ে তোলেন হুবহু। আক্ষেপ, বিদেশে অনুষ্ঠান করে যা কদর পেয়েছেন দেশে তার তিলমাত্রও নেই। বাড়িতেই তালিম দেন কয়েকজন উৎসাহী ছাত্রকে। ডানকুনি থেকে সুদীপ্ত পাল, হুগলি থেকে রুনু দত্ত, পাটুলি থেকে স্বপন দত্ত-রা ছুটে আসেন তাঁর কাছে। বরানগরের এক চিলতে ফ্ল্যাট থেকে আচমকাই শোনা যায় কোরাসে ঝড়ের শোঁ-শোঁ শব্দ। প্রতিবেশীরা জানালা খুলে আকাশের দিকে চেয়ে ভুল বুঝতে পারেন। শুভেন্দুবাবু চান, উৎসাহী ছেলেমেয়েরা এগিয়ে আসুক। নচেৎ হারিয়ে যাবে হরবোলা নামটাই। সঙ্গে তাঁর ছবি।

প্রান্তিক

ভদ্রলোকে ঠাসা শহরের বাইরে তিতলি বস্তি। জল-জঙ্গল সাফ করে, পিপুল গাছের তলায় সেখানে ঘর তুলেছিল মুরলি, একে একে জড়ো করেছিল জেনা, কামু, বিন্দি, কানহাইয়াদের। এরা সবাই হিজড়ে। প্রচলিত মধ্যবিত্ত রুচিতে ও নাম মুখে নিতে বাধে, তাই সংস্কৃত সমাজ-মিডিয়া-আদালত নাম দিয়েছে বৃহন্নলা, তৃতীয় লিঙ্গ। ছোটবেলায় কাউকে মেলায় ফেলে এসেছিল বাবা, স্কুলে টিপ পরে যাওয়ায় কারও প্যান্ট নামিয়ে শিক্ষে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল গেম্স টিচার।

ঘর হারিয়ে, রোজের উপেক্ষা-তাচ্ছিল্য-ঘেন্নার সঙ্গে বড় হতে হতে যারা ভুলতে বসেছে নিজেদের মানুষ নামের পরিচয়টা। মাঝেমধ্যে বিবেক-জাগানিয়া বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে আসেন ফুলুটবাবু, আরও বেশি আসে গুন্ডা গোলাপ, মাতাল রঘু। লড়াই আর আপসে মেশানো হিজড়ে জনগোষ্ঠীর জীবনকে মঞ্চে এনেছে বহরমপুরের নাট্যদল রঙ্গাশ্রম, তাদের ‘সন্তাপ’ নাটকে। সন্দীপ ভট্টাচার্য অভিনীত-নির্দেশিত নাটকটির সাম্প্রতিক অভিনয় হয়ে গেল জ্ঞান মঞ্চে। সঙ্গী প্রত্যয় জেন্ডার ট্রাস্ট, রূপান্তরকামীদের যৌনতা, লিঙ্গ পরিচয় ও অধিকার নিয়ে যারা কাজ করছে দীর্ঘ দিন। সঙ্গে সেই নাটকের একটি দৃশ্য।

কবি

ষাট দশকের বিশিষ্ট কবি উত্তম দাশ। নোয়াখালির হাতিয়া অঞ্চলে ১৯৩৯-এ জন্ম। ১৯৪৭-এর দুর্দিনে পিতার কর্মসূত্রে সাগরদ্বীপ, পরে বারুইপুরে স্থিতি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ, পিএইচ ডি। খিদিরপুর কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধান। কলেজজীবনে কবিতা-পত্রিকা ‘বহ্নিশিখা’, পরে ‘মহাদিগন্ত’-এর পুরোধা হিসেবে সমকালের ধারায় বসবাস। জগদীশ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘কবি ও কবিতা’-র সহ-সম্পাদক ছিলেন আঠারো বছর। আঠারোটি কবিতার বই তাঁর, দুই খণ্ডে কবিতাসমগ্র। সমকালের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও বিশিষ্ট ছান্দসিক, প্রকাশিত হয়েছে এগারোটি প্রবন্ধগ্রন্থও। মননশীলতার সঙ্গে ছিল অন্তর্ভেদী কবিদৃষ্টি। ভ্রমণ ছিল তাঁর আত্মার সঙ্গী, ভারতবর্ষ নিবিড় ভাবে ঘুরেছেন, সেই সঙ্গে পৃথিবীর বহু দেশ। বহু সম্মানে ভূষিত। চলে গেলেন সম্প্রতি।

রবীন্দ্রকবিতা

গীতবিতানের পর এ বার রবীন্দ্র-কবিতা। চক্ষু-চিকিৎসক পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার ২০০৬ সালে তৈরি করেছিলেন ‘গীতবিতান আর্কাইভ’, একটি ডিভিডিতে রবীন্দ্রনাথের সমস্ত গান, স্বরলিপি এবং প্রতিটি গানের যাবতীয় তথ্যের সংকলন। এ বার রবীন্দ্রনাথের সমস্ত কবিতা নিয়ে ‘রবীন্দ্র-কবিতা আর্কাইভ’ নামের একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে চলেছেন তিনি। এতে ৩০০০-এর বেশি কবিতা, আনুষঙ্গিক তথ্য, রচনাস্থান/কাল, কাব্যগ্রন্থের পরিচিতির সঙ্গে থাকবে সব কবিতার আবৃত্তি। থাকবে রবীন্দ্রনাথের স্বকণ্ঠে আবৃত্তিও। একই কবিতা বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে থাকছে। প্রকাশের পথে ডিভিডি-টি।

উত্তরাধিকার

ছোটবেলায় খুব যে ইচ্ছে করত রবীন্দ্রনাথের গান শিখতে তা নয়, মা-বাবার ইচ্ছেতেই দক্ষিণী-তে গান শিখতে যাওয়া। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেমন যেন বুঁদ হয়ে গেলাম রবীন্দ্রগানে, নিজের মনের কথা, অনুভূতি— সবই যেন খুঁজে পেলাম তাতে। বাবাই আমায় রবীন্দ্রনাথের গান বুঝতে, তা জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে, তার সমঝদার হয়ে উঠতে শেখালেন।’ জানাচ্ছিলেন রোহিণী রায়চৌধুরী, সুস্মিতা ও দেবাশিসের কন্যা, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের দৌহিত্রী। পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রেই তাঁর এই সঙ্গীতানুরাগ, ‘দাদুকে না দেখলেও তাঁর গান শুনতে শুনতে বড় হওয়া, গাইও এখন তাঁর গান, কিন্তু গাওয়া খুব শক্ত।’ বয়ঃসন্ধিতে ছ’-সাত বছর তালিম নিয়েছেন ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতে।

দক্ষিণী-র শেষ পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় পেয়েছেন দক্ষিণী-পুরস্কারও। সঙ্গীতের পাশাপাশি অভিনয় চর্চাও শুরু বাবার তত্ত্বাবধানে, দেবাশিসের পরিচালনায় ‘রাজা’ নাটকের ইংরেজি প্রযোজনায় সুরঙ্গমার চরিত্রে করেছেন রোহিণী। ‘টেগোর অ্যাম্বাসেডার্স’ নামে বাবা-মেয়ের এই জুটি কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন মঞ্চে রবীন্দ্রগানের মাধ্যমে কবির ভাবনাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন অভারতীয় শ্রোতাদের কাছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসেরও কৃতী ছাত্রী রোহিণী, বঙ্গসংস্কৃতির ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করবেন মনস্থ করেছেন। এর আগেও তাঁর একক গানের সিডি বেরিয়েছে, এ বারের একক সিডি’টিতে রবীন্দ্রনাথের দশটি প্রেমের গান, গেয়েছেন বাবার পরিচালনাতেই— ‘হৃদে এসো’ (কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ড)। অ্যালবামটি উন্মোচন করবেন সরোদশিল্পী পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ২ জুলাই সন্ধে সাড়ে ৬টায় আইসিসিআর-এ সত্যজিৎ রায় প্রেক্ষাগৃহে। এরপর রোহিণীর রবীন্দ্রসঙ্গীতের একক অনুষ্ঠান: ‘হৃদয় আমার’।

শুধু সুন্দরবন

সত্তরের দশক। সুন্দরবনের রাঙাবেলিয়া হাইস্কুলে প্রার্থনার সময় একটি ছেলে জ্ঞান হারায়। প্রধানশিক্ষক তুষার কাঞ্জিলাল জানতে পারেন, ছেলেটি আগের রাত থেকে অভুক্ত ছিল। এক ফসলি চাষের জন্য তখন সুন্দরবনে খাদ্যাভাব। তিনটি গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে সেই দুরবস্থার কথা টেগোর সোসাইটিকে জানান তিনি। তাদের ১৩ লক্ষ টাকা অনুদানে ‘রাঙাবেলিয়া প্রকল্প’ শুরু হল নোনা জমিকে দুই ফসলি করা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রাণীসম্পদ ইত্যাদি নানা বিষয়ে। সুন্দরবনের উন্নয়নে তুষারবাবুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। রাঙাবেলিয়াকে তিনি স্বনির্ভর করে তোলেন। ১৯৩৫-এ নোয়াখালিতে জন্ম তুষারবাবুর। দাঙ্গার সময় চলে আসেন হুগলিতে। পলিটেকনিকে পড়া শুরু করেও অর্থনীতিতে স্নাতক হন। বর্ধমানে উদ্বাস্তুদের অধিকারের দাবিতে বামপন্থী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হন। জেলও খাটেন। দলের দায়িত্ব নিয়ে কলকাতায় আসা। বিয়ে করেন দলের সক্রিয় কর্মী বীণা দেবীকে। পরে আদর্শগত কারণে সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে ১৯৬৭-র জানুয়ারিতে রাঙাবেলিয়ায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে আসা। সেই শুরু। শহুরে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে পড়ে থেকেছেন সেখানে। রুক্ষ প্রকৃতির সঙ্গে সেখানকার মানুষকে বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছেন। সঙ্গী স্ত্রী। মহিলাদের হাতের কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করেন বীণা দেবী। আয়লা-র ত্রাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। পেয়েছেন পদ্মশ্রী ও নানা সম্মান। শারীরিক কারণে থাকা সম্ভব না হলেও আজও প্রায়ই ছুটে যান। পত্রপত্রিকায় সুন্দরবনের মানুষের কথা লিখে চলেছেন অক্লান্ত ভাবে। শুধু সুন্দরবন চর্চা পত্রিকা দীর্ঘ দিন ধরে সুন্দরবন নিয়ে কাজ করছে (সম্পা: জ্যোতিরিন্দ্রনারায়ণ লাহিড়ী)। এ বারের সংখ্যাটি তাঁকে নিয়েই।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy