E-Paper

ঢাকার খুদেকে রক্ত দিতে পাশে কলকাতা

ঢাকার বাসিন্দা মহম্মদ রেজাউল করিম (রিপন)-এর ছ’বছরের মেয়ে জান্নাতুল্লা ফিরদৌস রক্তের এক ধরনের কর্কট রোগে আক্রান্ত। মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় এলে উন্নত চিকিৎসা মিলতে পারে বলে জানতে পেরেছিলেন রিপন।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:২৭
হাসপাতালে খুদে জান্নাতুল্লা ফিরদৌস। শনিবার।

হাসপাতালে খুদে জান্নাতুল্লা ফিরদৌস। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র।

পড়শি দেশ। অচেনা শহর। নেই কোনও পরিজন বা পরিচিত। তা হলে রক্তের কর্কট রোগে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার প্রয়োজনে রক্ত মিলবে কোথায়? চিন্তায়, উদ্বেগে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছিলেন না বাবা। সমাজমাধ্যমে সেই অসহায় বাবার আকুতি পোস্ট হওয়া মাত্র আসতে শুরু করে একের পর এক ফোন। আর সেই রক্তদানের বন্ধনেই যেন কলকাতায় নিজের পরিজনদের খুঁজে পেলেন বাংলাদেশি ওই যুবক।

ঢাকার বাসিন্দা মহম্মদ রেজাউল করিম (রিপন)-এর ছ’বছরের মেয়ে জান্নাতুল্লা ফিরদৌস রক্তের এক ধরনের কর্কট রোগে আক্রান্ত। মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় এলে উন্নত চিকিৎসা মিলতে পারে বলে জানতে পেরেছিলেন রিপন। এর পরে গত ১৩ ডিসেম্বর মেয়েকে নিয়ে রিপন ও তাঁর স্ত্রী সানজিদা আক্তার চলে আসেন কলকাতায়। ১৫ ডিসেম্বর নিউ টাউনের টাটা ক্যানসারহাসপাতালে শিশু কর্কট রোগ চিকিৎসক অর্পিতা ভট্টাচার্যকে দেখানোর পরে ওই দিনই মেয়েকে ভর্তি করেন রিপন। তিনি জানাচ্ছেন, চিকিৎসা শুরুর পরে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, ছোট্ট মেয়েটিকে১০ ইউনিট মতো রক্ত দিতে হবে। কিন্তু কোনও কার্ডের বিনিময়ে নয়, এ-পজ়িটিভ রক্ত পেতে যে কোনও গ্রুপের দাতা প্রয়োজন।রিপন বলেন, ‘‘অচেনা শহরে কে দেবে আমায় রক্ত? মাথায় কিছুই ঢুকছিল না। শেষে ১৮ ডিসেম্বর এক বন্ধুর সহযোগিতায় সমাজমাধ্যমে পোস্ট করি।’’

ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের সেতু বন্ধনকারী হিসাবে থাকা সমাজমাধ্যমের পেজেবিস্তারিত লেখার শেষ অংশে রিপনের আর্তি ছিল, ‘দয়া করে এক জন অসহায় বাবাকে তার আদরের ছ’বছরের কন্যাসন্তানকে বাঁচাতে কলকাতার বন্ধুরাএগিয়ে আসুন।’ রিপন জানাচ্ছেন, পোস্ট করামাত্র বিভিন্ন রক্তদাতা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। তেমনই এক জনবেহালার অনির্বাণ বিশ্বাস। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অনির্বাণের পূর্বপুরুষএক সময়ে বাংলাদেশে থাকতেন। তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাটি বাংলাদেশি বলে নয়। সারা বছরই আমি রক্তদান করি। সেই সূত্রে এক জন অসহায় বাবার দিকে বন্ধুত্বেরহাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই আসল ছিল।’’ অনির্বাণের মতো কলকাতা ও আশপাশের শহরতলি থেকে অনেকেই এসে রক্তদানকরেছেন মাত্র কয়েক ঘণ্টায়। কেউ কেউ ফোন করে খোঁজওনিচ্ছেন ছোট্ট মেয়েটির। অচেনা শহরটা কত সহজে যে তাঁর এত আপন হয়ে উঠেছে এই কয়েক ঘণ্টায়, তা ভেবেই আপ্লুত রিপন।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন চললেও, সেসব নিয়ে এখন ভাবতে নারাজ রিপন। বরং শনিবার তিনি বলেন, ‘‘এক জন বাবা হিসাবে কলকাতার এই ভালবাসার ঋণ সারা জীবনে কোনও দিনও শোধ করতে পারব না।’’এত কিছু অবশ্য বোঝে না ছোট্ট মেয়েটি। মাথায়ঝুঁটি বেঁধে হাসপাতালের শয্যায় বসেও আদুরে গলায় সে শুধু চায় তার পুতুলকে কোলে নিতে। আর রিপন বলেন, ‘‘রাজনৈতিকপরিস্থিতির ঊর্ধ্বে উঠে দু’দেশের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবিকতাই শুধু বেঁচে থাকুক।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Blood Cancer Blood Donation India-Bangladesh Bangladeshi

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy