E-Paper

নির্মাণের গুঁতোয় উড়েছে শীতঘুম, ডিসেম্বরের ঠান্ডাতেও বেরোচ্ছে সাপ

শহরে শীত পড়লেও শীতঘুম নেই সাপেদের। নিউ টাউন, রাজারহাটের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরা পড়ছে গোখরো,চন্দ্রবোড়া বা কেউটে সাপ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ জানাচ্ছে, গত তিন দিনে তিনটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সাপ ধরা পড়েছে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৩৪
শুক্রবার নিউ টাউনের কারিগরি ভবনের পিছন থেকে উদ্ধার হয় এই চন্দ্রবোড়াটি।

শুক্রবার নিউ টাউনের কারিগরি ভবনের পিছন থেকে উদ্ধার হয় এই চন্দ্রবোড়াটি। — নিজস্ব চিত্র।

পরিবেশ বদলাচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের আশপাশের জীবজগতের উপরেও।

শহরে শীত পড়লেও শীতঘুম নেই সাপেদের। নিউ টাউন, রাজারহাটের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরা পড়ছে গোখরো,চন্দ্রবোড়া বা কেউটে সাপ। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ জানাচ্ছে, গত তিন দিনে তিনটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের সাপ ধরা পড়েছে। প্রতিটি সাপকেই লোকালয়ের ভিতর থেকে উদ্ধার করে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

নিউ টাউনে সাপের উপদ্রব নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই বর্ষায় নিউ টাউনের বিভিন্ন এলাকায় সাপের উপদ্রব বাড়ে। সাপ ঢুকে পড়ে আবাসন চত্বরেও। কিন্তু এ বছর শীত পড়ে যাওয়ার পরেওরাজারহাট ও নিউ টাউনে মাঝেমধ্যেই সাপের দেখা মিলছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞান মঞ্চের রাজারহাট কেন্দ্রের সম্পাদক তাপস রায়। তিনি জানান, শনিবার রাজারহাটের কাছেহাড়োয়া খালের পাশ থেকে মিলেছে প্রমাণ আকৃতির একটি কেউটে। তার আগে শুক্রবার নিউ টাউনের কারিগরি ভবনের পিছন থেকে এবং বৃহস্পতিবার রাজারহাটের ভাতুরিয়া এলাকা থেকে দু’টি পূর্ণাঙ্গচন্দ্রবোড়া উদ্ধার হয়েছে। তাপসের কথায়, ‘‘নিউ টাউন তো জলাভূমি ভরাট করে গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় এখনও নির্মাণের কাজ হচ্ছে। যার জেরে সাপেদেরখাবারের জোগান কমে গিয়েছে। খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন সময়ে বেরিয়ে পড়ছে তারা।নইলে এই সময়ে তো ওদের শীতঘুমে থাকার কথা। হতে পারে, পরিবেশ-পরিস্থিতির বদলের জন্য এমনটা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশকয়েকটি সাপ ধরে বন দফতরকে দিয়েছি।’’

নিউ টাউন ও রাজারহাটে চন্দ্রবোড়া, গোখরো এবং কালাচ সাপের সংখ্যা বেশি। তবে, রাজারহাটের দিকে কেউটে সাপের দেখাও পাওয়া যায়।অতীতে ভিন্‌ রাজ্য থেকে পরীক্ষা দিতে নিউ টাউনে এসে সাপের কামড়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। ওই ঘটনার পরে নিউ টাউনে এনকেডিএ-র এলাকায় প্রাথমিকস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অ্যান্টি-ভেনাম রাখাও চালু হয়। সেই সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে দ্রুত অ্যান্টি-ভেনাম ব্যবহার করে রোগীর শুশ্রূষা শুরু করারপরিকাঠামো তৈরির নির্দেশও দিয়েছিল এনকেডিএ।

নিউ টাউনের শহর এলাকা তো বটেই, নিউ টাউন বিধানসভা কেন্দ্রের গ্রামীণ অঞ্চলগুলিতেও এখন সর্বত্র বহুতল তৈরির কাজ হচ্ছে। ঢালাই-সহ বিভিন্ন কারণে তৈরি হওয়া কম্পনের কারণেই সাপগর্ত ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে ঠান্ডা পড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাপের উপদ্রব চোখে পড়ছে অনেক জায়গাতেই। নিউ টাউন কিংবা রাজারহাটেপর পর তিন দিন উদ্ধার হওয়া সব ক’টি সাপই পাওয়া গিয়েছে লোকালয়ের ভিতরে। রাজারহাটের ভাতুরিয়া থেকে ধরাপড়া চন্দ্রবোড়াটি মিলেছে বাড়িতে ছাগল বেঁধে রাখার জালের ভিতর থেকে।

বন দফতর জানাচ্ছে, কলকাতার আশপাশের বিভিন্ন এলাকাতেও একই রকম সমস্যা। ঠাকুরপুকুর, সোনারপুর, গড়িয়া থেকে হাওড়া— সর্বত্রই শীতে বিভিন্ন প্রজাতির সাপেরদেখা মিলছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সাপেদের শীতঘুমে না যাওয়ার পিছনে অন্যতম প্রধান কারণ নির্মাণের কাজ। এক বনকর্মীর কথায়,‘‘আমরা খবর পেয়ে গিয়ে সাপ উদ্ধার করার সময়ে দেখতে পাই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্মাণের কাজের জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়েছে। সেই সব জায়গা থেকেই সাপ বেরোচ্ছে বেশি।অর্থাৎ, এক দিকে ঝোপঝাড় কেটে দেওয়ায় পোকামাকড় বা ছোট প্রাণী কমে যাওয়ায় সাপের খাবারের অভাব হচ্ছে। অন্য দিকে, নির্মাণেরকাজের কারণে মাটিতে কম্পনতৈরি হওয়ায় শীতেও সাপ বেরিয়ে পড়ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Snakes New Town Rajarhat

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy