Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নিজস্ব বেতার তরঙ্গে মনের কথা বলে যাদবপুর

দেখতে দেখতে দশে পা দিল কমিউনিটি রেডিও জে ইউ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের দশ কিলোমিটারের গণ্ডির মধ্যে এই কমিউনিটি রেডিওর নিজস্ব জগৎ।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ২১:৪৮
Share: Save:

দেখতে দেখতে দশে পা দিল কমিউনিটি রেডিও জে ইউ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের দশ কিলোমিটারের গণ্ডির মধ্যে এই কমিউনিটি রেডিওর নিজস্ব জগৎ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড কালচার এবং টেকুইপ (TEQIP)-এর উদ্যোগে ২০০৮-এ কমিউনিটি রেডিওর পথ চলা শুরু। দশ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল বিকেল ৩টেয় ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয়েছে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের। এ ছাড়াও বছরভর নানা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে।

সে সময়ে কমিউনিটি রেডিওর ধারণাটা খুব একটা স্পষ্ট ছিল না। তাই পুরোটাই ছিল একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। বাণিজ্যিক রেডিওর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বা রেষারেষিতে না গিয়ে, বিনোদনের একটি বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ভিন্ন স্বাদের কিছু অনুষ্ঠান আর সামাজিক নানা সমস্যা তুলে ধরতে এই কমিউনিটি রেডিওর আত্মপ্রকাশ।

রেডিও জে ইউ আহ্বায়ক নীলাঞ্জনা গুপ্ত বলছিলেন, ‘‘শুধুমাত্র বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নয়। জনস্বার্থমূলক এবং সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের পাশাপশি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের একটা প্ল্যাটফর্ম দিতেও এই কমিউনিটি রেডিওর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাঁদের সরাসরি অংশগ্রহণ, নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা এবং সমস্যার কী ভাবে সমাধান করা যায় তা এই কমিউনিটি রেডিওর কার্যকলাপের অন্তর্গত। আজ দশ বছর পরে এর জনপ্রিয়তা অনেকটাই বেড়েছে। শ্রোতারা অনুষ্ঠান সংক্রান্ত মতমত জানান এসএমএস, ওয়্যাটসঅ্যাপ এবং ফেসবুকের মাধ্যমে। সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রেডিও জে ইউ অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়। এই দশ বছরে রেডিও জে ইউ-র প্রাপ্তি তিনটি জাতীয় সম্মান।’’

অনুষ্ঠান সম্ভারে এক দিকে যেমন রয়েছে রেডিও নাটক, গল্প পড়ার আসর, ভারতীয় ও পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সঙ্গীত। তেমনই লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা নিয়ে চর্চা, অলোচনা ও অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এক সময় এখানকার অনুষ্ঠানে আসতেন দোহারের সদ্যপ্রয়াত কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে ইয়ুথ রেডিও রিপোর্টারে কচিকাঁচা রেডিও রিপোর্টারের মুখ থেকে যেমন শোনা যায় সমাজের নানা সমস্যার কথা, ঠিক তেমনই গানের মাধ্যমে দিব্যি শেখা যায় জটিল অঙ্ক।

ছবি: সংগৃহীত

রেডিও বিভাগের এক শিক্ষক জানালেন, রেডিওর সম্প্রসারণের গণ্ডির মধ্যে পিছিয়ে পড়া এলাকায় গিয়ে সেখানকার মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা হয়। ‘সখী’ নামক এক অনুষ্ঠানে মহিলাদের নানা শারীরিক সমস্যা, গর্ভবতী মায়ের যত্ন, শিশুর বেড়ে ওঠা ইত্যাদি পরিবেশিত হয়। শ্রোতাবন্ধুরা সরাসরি কথা বলতে পারেন অতিথি ডাক্তাদের সঙ্গেও। কখনও আবার ডাক্তারদের নিয়ে ‘সখী’-র টিম পৌঁছে যায় কেপিসি কলোনি, যাদবপুর রেলকলোনি বা গোবিন্দপুরের মতো কিছু জায়গায়। এলাকার মা এবং শিশুর জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে স্বাস্থ্য শিবিরেরও।

যাদবপুর সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা সুকান্ত বসু বলছিলেন, ‘‘ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠানের জন্য শুনতে ভালই লাগে। তা ছাড়া এলাকার ছোটখাটো সমস্যার কথাও তুলে ধরা হয়।’’ তেমনই যোধপুর পার্কের বাসিন্দা সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মৌমিতা রায়ের কথায়, অঙ্ক হোক বা সাধারণ বিষয়— নানা তথ্য জানা যায় রেডিও জে ইউ অনুষ্ঠানে।

তবে শুধু অনুষ্ঠান সম্প্রচার নয়, রেডিও জে ইউ-র রয়েছে ছ’মাসের রেডিও প্রোডাকশনের একটি কোর্স। এখানে স্ক্রিপ্ট তৈরি থেকে শব্দ সম্পাদনা, স্টুডিওয় গিয়ে হাতে-কলমে রেডিওর অনুষ্ঠান তৈরি করা শেখানো হয়।

তাই দশে পা রেখে এখন স্বপ্ন বহু দূর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Community Radio Jadavpur University
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE