Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
তদন্তের আশ্বাস

তরুণী নিগ্রহের অভিযোগ ‘নিতে চায়নি’ দুই থানা

অভিযোগ অনুযায়ী, যৌন হেনস্থা ও মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ। তার পর থেকে কলকাতা ও হাওড়ার দু’টি থানায় ছুটে বেরিয়েছেন তরুণী। অভিযোগ, বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তরুণীর লিখিত বক্তব্য নেয়নি পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৩
Share: Save:

অভিযোগ অনুযায়ী, যৌন হেনস্থা ও মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ। তার পর থেকে কলকাতা ও হাওড়ার দু’টি থানায় ছুটে বেরিয়েছেন তরুণী। অভিযোগ, বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তরুণীর লিখিত বক্তব্য নেয়নি পুলিশ।

ঘটনার ৩২ ঘণ্টা পরে শুক্রবার দুপুরে হাওড়ার মহিলা থানায় তরুণীর অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়েছে। ‘‘কেন সময় মতো তরুণীর অভিযোগ নেওয়া হল না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে,’’ বলেছেন হাওড়া ও কলকাতা — দুই কমিশনারেটের পুলিশকর্তারা। অভিযোগ না নেওয়ার জন্য পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না তা শুক্রবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।

পুলিশ জানায়, লিলুয়ার বাসিন্দা ওই তরুণী বিবাদী বাগে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। গত ডিসেম্বরে তাঁর সঙ্গে ফেসবুকে কসবার যোগেন্দ্র গার্ডেন রোডের বাসিন্দা গৌরব সাহার আলাপ হয়। অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। ওই যুবক পেশায় অ্যাপ ক্যাবের চালক। ওই তরুণীর অভিযোগ, তিনি সম্প্রতি জানতে পারেন গৌরব বিবাহিত এবং তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। তার পর থেকে তিনি গৌরবকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন।

শুক্রবার দুপুরে হাওড়া মহিলা থানায় দাঁড়িয়ে ওই তরুণী অভিযোগ করেন, ‘‘আমার বান্ধবীর মা মানিকতলার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। আমি ওই বান্ধবীর সঙ্গে বুধবার রাতে হাসপাতালে ছিলাম। সেটা গৌরব জানতে পেরে সকালে ও নিজের ওই অ্যাপ ক্যাব নিয়ে হাসপাতালে আসে। আমাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে কসবার দিকে যায়। গাড়ির সমস্ত দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে যৌন হেনস্থা ও বেল্ট দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে।’’ গৌরব শ্বাসরুদ্ধ করে তাঁকে খুনের চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই তরুণী।

পুলিশের কাছে দেওয়া তাঁর বয়ান অনুযায়ী, কসবায় দুই পথচারী তাঁকে উদ্ধার করে একটি ট্যাক্সিতে তুলে দেন। গৌরব পালিয়ে যান। ওই অবস্থায় তরুণী প্রথমে কসবা থানায় যান। কিন্তু সেখানে তাঁর অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন ভারপ্রাপ্ত ডিউটি অফিসার। তাঁর বাড়ি লিলুয়ায় বলে কসবা থানা থেকে তাঁকে লিলুয়া থানায় অভিযোগ জানাতে বলা হয়।

তরুণী জানান, লিলুয়া থানাও তাঁর অভিযোগ নেয়নি। থানা থেকে তাঁকে একা জায়সবাল হাসপাতালে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তরুণীর অভিযোগ, লিলুয়ার থানায় অফিসার তাঁকে বলেন, ‘‘হাসপাতালে মেডিক্যাল করিয়ে রাতে আসুন।’’ তরুণী জানান, লিলুয়া থানার নির্দেশে বৃহস্পতিবার তিনি ওই হাসপাতালে গেলে সেখানেও তাঁকে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখা হয়। তিনি বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যান।

শুক্রবার সকালে পরিবারের সঙ্গে আবার লিলুয়া থানায় আসেন তিনি। তখন তাঁকে হাওড়ার মহিলা থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দুপুরে তিনি সেখানে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে আইন রয়েছে, কোনও নিগৃহীতা থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে থানা সেই অভিযোগ নিতে বাধ্য, সেখানে আহত এক তরুণীর অভিযোগ কেন নেওয়া হল না? কেনই বা তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হল না?

কলকাতা ও হাওড়া সিটি পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনাটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (উত্তর) স্বাতী ভাঙারিয়া বলেন, ‘‘অভিযোগ না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণ হলে ওই সময় যিনি দায়িত্বে ছিলেন কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police station sexual molestation Youth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE