Advertisement
E-Paper

এক কলেই দিনে অপচয় ২০ হাজার লিটার!

পাঁচ ও ছ’নম্বর ওয়ার্ডের মাত্র দু’টি রাস্তার কলের জল অপচয়ের ওই তথ্য ‘বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন’ বলে জানাচ্ছেন পুর কর্তাদের একাংশ।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০২:৪৩
অবিরাম: শহর জুড়ে এ ভাবেই সারা দিন কল থেকে পড়ে চলেছে জল। ভবানীপুরে।

অবিরাম: শহর জুড়ে এ ভাবেই সারা দিন কল থেকে পড়ে চলেছে জল। ভবানীপুরে।

তথ্য দেখে প্রথমে চমকে উঠেছিলেন পুরকর্তারা! এটা কী করে সম্ভব! কিন্তু আরও কিছু দিন লক্ষ্য করে দেখা গেল, সত্যিই কলকাতা পুরসভার ছ’নম্বর ওয়ার্ডে, বিটি রোডের উপরে একটি রাস্তার কল থেকে দিনে প্রায় ২২ হাজার লিটার জল বেরিয়ে যাচ্ছে! রাস্তার ওই কলে লাগানো জলের মিটারে তেমনই তথ্য ধরা পড়েছে। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের পঞ্চানন মুখার্জি রোডের একটি কলের ক্ষেত্রেও একই চিত্র ধরা পড়েছে। সেখানে দিনে বেরিয়ে যাচ্ছে ১২ হাজার লিটার জল।

পাঁচ ও ছ’নম্বর ওয়ার্ডের মাত্র দু’টি রাস্তার কলের জল অপচয়ের ওই তথ্য ‘বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন’ বলে জানাচ্ছেন পুর কর্তাদের একাংশ। কারণ, শুধু ওই এলাকায় নয়, সারা শহরের রাস্তার কল থেকে এমনই অবিরল জলের অপচয় হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। এত দিন রাস্তার কলে কতটা জল সরবরাহ করা হচ্ছে, তা জানা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এক থেকে ছ’নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার তরফে ‘ওয়াটার লস ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রোজ পুরসভা কত পরিমাণ জল সরবরাহ করছে এবং কতটা অপচয় হচ্ছে তা বার করা, সেই সঙ্গে যেখানে জলের সরবরাহ যথেষ্ট ভাল ও যেখানে জলের সমস্যা রয়েছে, এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনাই ওই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ঋণে ওই প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ওই ছয় ওয়ার্ডে আবাসিক বাড়িতে যেমন জল সরবরাহ মাপার জন্য মিটার বসানো হচ্ছে, তেমনই রাস্তার কলেও মিটার বসানো শুরু হয়েছে। প্রাথমিক সমীক্ষার কাজও হয়ে গিয়েছে।

আরও পড়ুন: বেহিসাবি পাম্পে বিপদ বৃদ্ধি ভূগর্ভের

পুর তথ্য অনুযায়ী, সারা শহরে রাস্তার ধারে প্রায় ১৭ হাজার জলের কল রয়েছে। শুধু এক থেকে ছ’নম্বর ওয়ার্ডে কলের সংখ্যা ১৩৭৫টি। তার মধ্যে ৩৮টি রাস্তার কলে মিটার বসানো হয়েছে। সেই মিটার থেকে জল অপচয়ের যে তথ্য প্রাথমিক ভাবে উঠে এসেছে, তাতেই প্রমাদ গুনছেন পুরকর্তারা! এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘রাস্তার ধারে জলের কলের যে হিসেব পাওয়া যাচ্ছে, তা অবিশ্বাস্য। এত দিন আমরা জানতেই পারতাম না যে রাস্তার কলগুলি থেকে রোজ কতটা জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে যে সংখ্যাটা ধরা পড়েছে তা খুবই উদ্বেগের। দিনে যদি একটি কল থেকেই ২০ হাজার লিটার জল বেরিয়ে যায়, তা হলে তো মুশকিল।’’

অবশ্য এই সমস্যার সমাধান কী পথে হবে, তা জানেন না পুরকর্তারা। কারণ, কোনও কোনও এলাকা পুরোপুরি রাস্তার কলের জলের উপরেই নির্ভরশীল। ফলে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব নয়। অপচয় আটকানোর জন্য কল খোলা-বন্ধের ব্যবস্থা করলেও কিছু দিন পরে যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। এমনকী, জলের মিটার চুরির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানাচ্ছেন আধিকারিকদের একাংশ। ওই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি বিশেষজ্ঞ সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘জল থেকে কাউকে বঞ্চিত করা সম্ভব নয় ঠিকই। অন্য মেট্রোপলিটন শহরে জলের সমস্যা আছে। কলকাতায় কিন্তু পর্যাপ্ত জলের সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ জল অপচয় হচ্ছে, তা আটকাতে না পারলে জল সরবরাহে ভারসাম্য আনা যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সকলকেই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’’

বেলেঘাটা এবং শোভাবাজারে। বুধবার।

কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনে ‘দ্য সেন্ট্রাল পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশন’-এর (সিপিএইচইইও) নির্দেশিকা অনুযায়ী, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই-সহ মেট্রোপলিটন শহরগুলিতে মাথা পিছু দিনে ১৫০ লিটার জলের প্রয়োজন। প্রসঙ্গত, সারা দেশে জল সরবরাহ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে সিপিএইচইইও-ই প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

আজ, বৃহস্পতিবার বিশ্ব জল দিবসের আগে শহরের পরিবেশ ও পানীয় জল নিয়ে কাজ করা এক সংগঠনের মুখপাত্র অমৃতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যত দিন বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে, তত দিন জলের অপচয় চলবেই। এটা শুধু প্রশাসনের তরফে বন্ধ করা সম্ভব নয়। নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। এই মূহূর্তে হয়তো অন্য বড় শহরের তুলনায় কলকাতায় জলের সমস্যা কম, তবে ভবিষ্যতে সমস্যা হতেই পারে।’’

ছবি: রণজিৎ নন্দী, শৌভিক দে, স্বাতী চক্রবর্তী

water wasting Kolkata KMC Water
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy