প্রতীকী ছবি।
গ্রামের সব চেয়ে বড় মাঠটা কয়েক মুহূর্তে দৌড়ে পার করা স্মৃতির পাতায় ঢুকে যাচ্ছিল। সেই সঙ্গে গ্রাস করছিল একরাশ হতাশা। অবশেষে বীরভূমের সেই যুবক বাপি দাসের দৌড় থামতে দেননি কলকাতার চিকিৎসকেরা। তাঁদের তৎপরতায় হার মেনেছে ক্যানসারের মতো মারণ অসুখও।
রামপুরহাটের বছর পঁচিশের বাপি দাস। তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর উপরের হাড়ে একটি টিউমার হয়েছিল। পরীক্ষায় করে জানা যায়, সেটি ম্যালিগন্যান্ট। হাঁটু থেকে পায়ের অন্য অংশে ছড়াচ্ছিল সেই ক্যানসার।
এ বছরের গোড়ায় এসএসকেএম হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগে ভর্তি হন বাপি। মাস চারেক আগে সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় অস্থি বিভাগে।
চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচার করে পা বাদ দিতে হবে। তবে মেগা প্রস্থেসিস পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করলে পা কাটা আটকানো যেতে পারে বলে জানান চিকিৎসকেরা। এই পদ্ধতি হল, যে হাড়ে ক্যানসার ছড়াচ্ছে সেটি কেটে বাদ দিয়ে একটি কৃত্রিম যন্ত্র বসানো। কিন্তু ব্যয়বহুল এই অস্ত্রোপচার বেসরকারি হাসপাতালে করানোর সামর্থ্য ছিল না বাপির।
হাল ছাড়েননি চিকিৎসকেরা। ভিন্ রাজ্যের হাসপাতালের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ চালান এসএসকেএম হাসপাতালের অস্থিবিভাগের চিকিৎসকেরা। এর পরে অস্থি বিভাগের চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে ছ’জন চিকিৎসকের দল টানা চার ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করে। কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচার পরবর্তী চিকিৎসা শেষ করে বাপি এখন সুস্থ। এরকম অস্ত্রোপচার রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে প্রথম। এই প্রয়াস আমাদের অনেকটা এগিয়ে দিল।’’
এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর অজয়কুমার রায়ের দাবি, ‘‘এ রাজ্যে প্রথম কোনও সরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার হল। এটা বড় সাফল্য। এমন ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচার সরকারি হাসপাতালে হলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। একটা পঁচিশ বছরের ছেলে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন কাটাতে পারবে, সেটা ভেবেও ভালো লাগছে।’’
সরকারি হাসপাতালের এই সাফল্য রোগীদের কাছে ইতিবাচক বলে মনে করছেন শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের অস্থিরোগ চিকিৎসক বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘জটিল এই অস্ত্রোপচার করার পরিকাঠামো সরকারি হাসপাতালে তৈরি হলে, সেটা খুবই ভাল। তাতে অসংখ্য মানুষ উপকৃত হবেন।’’
মাস চারেকের যুদ্ধ শেষে কয়েক দিন আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন বাপি। অস্ত্রোপচারের পরে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে পরবর্তী পর্যায়ের চিকিৎসা চলেছিল বাপির। এখন তিনি ফের স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলা করতে পারছেন। বললেন, ‘‘খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। এক পায়ে জীবন কাটানোর কথা ভেবে ভয় লাগত। এ এক নতুন জীবনের প্রাপ্তি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy