পোস্তার নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার ঘটনায় এ বার ঠিকাদার সংস্থা আইভিআরসিএলের সহযোগী সংস্থাগুলির দিকেও হাত বাড়াতে শুরু করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার। চার জনই আইভিআরসিএলের কাছ থেকে বরাত পেয়ে উড়ালপুল নির্মাণে যুক্ত ছিল।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান বিশাল গর্গ জানান, ধৃতদের নাম পার্থপ্রতিম দত্ত, মনসারাম মণ্ডল, প্রদীপকুমার নাথ ও তপনকুমার ধর। পার্থপ্রতিমবাবু পোস্তার নকশার কাজে যুক্ত সংস্থার ডিরেক্টর। উড়ালপুলের ধাতব পাত কাটা, ঝালাই, নাটবোল্ট লাগানোর মতো কাজের বরাত পেয়েছিল অনিন্দিতা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সংস্থা। গুণমান যাচাইয়ে ‘থার্ড পার্টি’ হিসেবেও কাজ করেছিল তারা। মনসারাম ওই সংস্থার মালিক, প্রদীপবাবু সংস্থার প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা ও তপনবাবু ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার। লালবাজার সূত্রে খবর, ওই চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়। কয়েক দফা জেরার পরে তাঁদের গাফিলতির বিষয়টি সামনে আসে। তার পর চার জনকে গ্রেফতার করা হয়।
৩১ মার্চ বিবেকানন্দ উড়ালপুল ভেঙে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। সে সময়ে আমজনতা থেকে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই উড়ালপুলের নকশা, নির্মাণ সামগ্রী, তদারকির অভাবের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। এ বার আইআইটি-র রিপোর্ট কার্যত একই কথা বলায় গোটা প্রকল্প নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে সরকারি কর্তাদের মনে।
উড়ালপুল ভাঙার পরেই খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছিল পুলিশ। লালবাজারের তদন্তকারী দল নির্মাণকারী সংস্থার (আইভিআরসিএল) চার ইঞ্জিনিয়ারকে গ্রেফতার করে। পরে গ্রেফতার করা হয় ওই সংস্থার আরও ছ’জনকে। এর পরেই নির্মাণকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সরাসরি খুনের মামলা দায়ের হয়। গ্রেফতার হয়েছে কেএমডিএ-র এক অবসরপ্রাপ্ত চিফ ইঞ্জিনিয়ার-সহ দুই কর্তাও। উড়ালপুলের মামলায় ইতিমধ্যে চার্জশিটও দাখিল করেছে পুলিশ। তাতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানোর (ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা) কথা বলেছেন তদন্তকারীরা।
লালবাজারের খবর, প্রাথমিক ভাবে নির্মাণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত লোকেদেরই পাকড়াও করা হয়েছিল। সে সময় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ছোট কাজের বরাত পাওয়া সংস্থাগুলি এবং নকশার সঙ্গে যুক্ত থাকা লোক জনকে গ্রেফতার করা হবে না? তদন্তকারীরা বলছেন, এই ঘটনায় প্রযুক্তিগত ত্রুটি খতিয়ে দেখতে আইআইটি-খড়্গপুর এবং রেলের সংস্থা ‘রাইটস’-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর নকশা এবং ঝালাইয়ের মতো কাজে গাফিলতির কথা জানা গিয়েছে। সেই সূত্রেই এ বার ধরপাক়়ড় শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও এমন কিছু সংস্থার লোক জনকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলেও তদন্তকারীদের সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy