Advertisement
২৬ মে ২০২৪

শিশু কল্যাণ সমিতি চত্বরেই ‘শ্লীলতাহানি’

জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির চত্বরেই দুই নাবালিকার শ্লীলতাহানির চেষ্টা। যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খেলেন জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির এক কর্মী, চাইল্ডলাইনের এক কর্মী এবং কিশলয় হোমের এক নিরাপত্তারক্ষী।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৭ ০১:৪৫
Share: Save:

জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির চত্বরেই দুই নাবালিকার শ্লীলতাহানির চেষ্টা। যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খেলেন জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির এক কর্মী, চাইল্ডলাইনের এক কর্মী এবং কিশলয় হোমের এক নিরাপত্তারক্ষী। বেধড়ক মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হল দু’জনের মাথা। ঘটনার কেন্দ্রস্থল সেই বারাসত। তবে এ বারের ঘটনাটি একেবারে দফতর সংলগ্ন এলাকায় ঘটায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন সমিতির চেয়ারপার্সন-সহ বাকি সদস্যেরা। এই ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে কিশলয় হোম ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি সংলগ্ন সমাজকল্যাণ দফতরের এলাকার ভিতরে। পুলিশ সূত্রে খবর, আচমকা দুই নাবালিকার গলার আওয়াজ পেয়ে দফতর থেকে বেরিয়ে আসেন চাইল্ড লাইনের কর্মীরা। তাঁরা টের পান, শিশু কল্যাণ সমিতির পিছনের দিকে অন্ধকার জায়গা থেকে আওয়াজটি আসছে। খবর পাঠানো হয় কিশলয় হোমের সুপারের কাছে। সঙ্গে সঙ্গে হোমের এক রক্ষীকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠান তিনি। ওই নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে যান আরও দু’জন। সমিতির ভবনের পিছনে গিয়ে দেখা যায়, দুই যুবক সেখানে দুই নাবালিকার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছে। তা দেখে তিন জনই প্রতিবাদ করে ওঠেন।

প্রতিবাদ করার পরে মুহূর্তের মধ্যেই বদলে যায় ওই এলাকার ছবি। অভিযোগ, দুই যুবক চেঁচামেচি শুরু করতেই চারপাশ থেকে প্রায় ১০-১২ জনের একটি দল নিমেষে ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয়। সমিতির কর্মী, চাইল্ডলাইনের কর্মী এবং হোমের ওই নিরাপত্তারক্ষীর উপরে চড়াও হয় তারা। এলোপাথাড়ি মারধর করে সমিতির কর্মী শুভেন্দু ধর এবং হোমের নিরাপত্তারক্ষী গোপাল রেড্ডির মাথা ফাটিয়ে দেয় তারা। এই গণ্ডগোলের মাঝে দুই নাবালিকাও সেখান থেকে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। অন্ধকারে মারধর এবং চিৎকার-চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেয়ে হোমের সুপার তৎক্ষণাৎ খবর পাঠান বারাসত থানায়। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে বুঝতে পেরে হামলাকারী দলটিও ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে দেবনাথ বিশ্বাস ও ঋত্বিক সাউ-সহ সাত জন ধরা পড়েছে। পুলিশ জানায়, দেবনাথ ও ঋত্বিকই অন্ধকারে টেনে নিয়ে গিয়ে ওই নাবালিকাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করছিল।

এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উঠেছে নানা অভিযোগ। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সে দিন শিশু কল্যাণ সমিতি, কিশলয় হোম এবং চাইল্ডলাইনের কর্মীরা মারধর খাওয়ায় ঘটনাটি বড় আকার নিয়েছে। কিন্তু ওই জায়গায় নিত্যদিনই কিছু যুবক নেশা করে। অভিযোগ, সমাজকল্যাণ দফতরের ওই জমিটি ১৭ একর জায়গা জুড়ে। ভিতরে কিশলয় হোম এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি রয়েছে। কিন্তু ওই ১৭ একর জায়গার অনেকটাই অরক্ষিত। কিছু অংশে পাঁচিল থাকলেও বাকি প্রায় গোটা অংশটাই খোলা। চত্বরের ভিতরে ঢোকার গেটে নেই রক্ষী। প্রায় ১০০ মিটার ভিতরে থাকা হোমের নিজস্ব রক্ষী রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা হোমের ভিতরের জন্যই নিযুক্ত। গোলমাল টের পেয়ে এ দিন সুপার এক রক্ষীকে বিষয়টি দেখতে পাঠান। কিন্তু বাকি সময়ে পুরো এলাকাটি আশপাশের সাতটি বস্তির যুবকদের দখলেই থাকে বলে অভিযোগ।

স্থানীয় মানুষের দাবি, এর আগেও জেলাশাসককে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে ফের জেলাশাসক অন্তরা আচার্যকে জানানো হয়। অন্তরাদেবী বলেন, ‘‘এত বড় এলাকা ঘিরে পাঁচিল তোলার কাজ তো বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আপাতত পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। দফতরের সঙ্গে কথা বলে আমরা ধাপে ধাপে ব্যবস্থা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Molestation Arrest Barasat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE