প্রতীকী ছবি
এক দলা তামার তার। আনুমানিক ওজন এক কিলোগ্রাম। ওই তামার তারের জন্যই কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল এন্টালির বছর ষোলোর কিশোরকে। গত ১৩ অগস্টের ওই খুনের ঘটনার তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্টে এই তথ্যই উঠে এসেছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। অভিযুক্ত সন্দেহে চার জনকে আগেই গ্রেফতার করা হলেও খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। পরে বিহার থেকে এই ঘটনার মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পরে ধোঁয়াশা কাটে। দিন কয়েকের মধ্যেই এই তামার তারের জেরে খুনের রিপোর্টই পুলিশ আদালতে জমা দিতে চলেছে বলে খবর।
গত ১৩ অগস্ট ভোরে এন্টালির দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে মহম্মদ সোনু নামে বছর ষোলোর এক কিশোরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তি ওই দৃশ্য দেখে পুলিশে খবর দেন। দ্রুত সোনুকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময়েই তার মৃত্যু হয়। চোর সন্দেহে ওই কিশোরকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে বলে খবর রটে।
তদন্তে নেমে পুলিশ দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের একাধিক বাড়ির দেওয়ালে রক্তের ছাপ দেখতে পায়। মেলে একাধিক ভাঙা টাইলসের টুকরোও। যে বাড়িগুলির দেওয়ালে রক্তের ছাপ দেখা গিয়েছিল, তার থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডের উপরেই পড়ে ছিল সোনুর রক্তাক্ত দেহ। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের সায়েন্টিফিক উইংয়ের সদস্যেরা। এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে এর পরে পুলিশ একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। তাতে দেখা যায়, একটি রাস্তা দিয়ে দুই সঙ্গীর সঙ্গে সোনু হেঁটে যাচ্ছে। কিছু পরেই ওই রাস্তা দিয়ে ছুটে আসতে দেখা যায় সোনুকে। তার ডান হাত গলার কাছে চেপে ধরা ছিল। হাসপাতালে দেখা যায়, ওই জায়গাতেই গভীর ক্ষত রয়েছে সোনুর। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, টিউব জাতীয় কিছু দিয়ে কোপানোর ফলেই সোনুর মৃত্যু হয়েছে। পেশায় মুদির দোকানি, ওই কিশোরের বাবা পুলিশকে জানান, বন্ধুদের সঙ্গে রাতে শিয়ালদহে ফল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করত সোনু। সেই কারণেই ঘটনার রাতে বাড়ি থেকে একটি সাইকেল ভ্যান নিয়ে বেরিয়েছিল সে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেই পুলিশ এর পরে এক নাবালক-সহ পাঁচ জনকে চিহ্নিত করে। বেলেঘাটা মেন রোডের বাসিন্দা রাহুল যাদব এবং আশিস সোনি নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জেরা করে ধরা হয় সুধীর কুমার নামে বছর বাইশের আর এক জনকে। আটক নাবালককে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠানো হয়। তবে রণজয় সিংহ নামে মূল অভিযুক্ত ফেরার হয়ে যায়।
লাগাতার তল্লাশি চালিয়ে এর পরে বিহার থেকে রণজয়কে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদেই জানা যায়, রণজয় হল রাহুল, আশিস এবং সুধীরদের দলের মাথা। প্রতি রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শহরের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াত তারা। বিভিন্ন এলাকার লোহার জিনিস, তামার
তার চুরি চক্রের সঙ্গেও তারা যুক্ত।
মৃত কিশোর ছিল এমনই অন্য এক দলের সদস্য। ঘটনার রাতে দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোডে মুখোমুখি হয়ে যায় দুই দলের। সেই সময়ে ১ কেজি তামার তার হাতে নিয়ে ফিরছিল সোনুরা। সোনুর দলের এক সদস্য পুলিশকে জানিয়েছে, রাস্তায় পড়ে থাকা একটা কেবল্ কেটে ওই তামার তার বার করেছিল তারা। ওই তার নেওয়ার জন্যই এর পরে সোনুকে ধরে মারতে শুরু করে রণজয়রা। রাগের মাথায় একটি ভাঙা টিউব দিয়ে আঘাত করা হয় সোনুকে। এর কিছু ক্ষণ পরেই তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy