Advertisement
E-Paper

বেলাশেষে যা থাকে, তা কি শুধু ভালবাসা

প্রতিদিনের সম্পর্কে নিত্য-নতুন আবিষ্কার কি থাকতেই হবে? থাকতেই হবে পরতে পরতে উত্তেজনা? তা যদি না থাকে, যদি একটা সময়ের পরে সম্পর্কটা বহু বার পড়া বইয়ের মতো হয়ে দাঁড়ায়, তা হলেই কি এক কথায় তাকে ‘ব্যর্থ’ বলে দেগে দেওয়া যায়? মিথ্যা হয়ে যায় বছরের পর বছর এক ছাদের তলায় থাকাটা?

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৫
‘বেলাশেষে’র জুটি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

‘বেলাশেষে’র জুটি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

প্রতিদিনের সম্পর্কে নিত্য-নতুন আবিষ্কার কি থাকতেই হবে? থাকতেই হবে পরতে পরতে উত্তেজনা? তা যদি না থাকে, যদি একটা সময়ের পরে সম্পর্কটা বহু বার পড়া বইয়ের মতো হয়ে দাঁড়ায়, তা হলেই কি এক কথায় তাকে ‘ব্যর্থ’ বলে দেগে দেওয়া যায়? মিথ্যা হয়ে যায় বছরের পর বছর এক ছাদের তলায় থাকাটা?

‘বিয়ে’ নামক প্রতিষ্ঠান নিয়ে এখন নানা চর্চা চলছে নিরন্তর। সিনেমায়, গল্প-উপন্যাসে, টিভি সিরিয়ালে এমন কী নতুন প্রজন্মের আড্ডাতেও এ নিয়ে কাঁটাছেঁড়া চলে অবিরাম। মুক্তি পেতে চলা একটি বাংলা ছবিতেও মূল উপজীব্য ৫০ বছর এক সঙ্গে ঘর করা এক দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত। প্রশ্ন উঠেছে, বিবাহিত সম্পর্কে কোনটা জরুরি— উত্তেজক প্রেম নাকি নিশ্চিন্ততা? প্রশ্ন উঠেছে, ক’জন দম্পতি মনে করতে পারেন, শেষ কবে তাঁরা একসঙ্গে সূর্যোদয় দেখেছেন? শেষ কবে একসঙ্গে সিনেমা দেখেছেন, রেস্তোরাঁয় খেয়েছেন? শেষ কবে স্পর্শ করেছেন পরস্পরকে? কোনওটাই যদি মনে করা না যায়, তা হলে সম্পর্কটা যে আছে— সেটাও কি জোর দিয়ে বলা যায়?

দিন কয়েক আগের এক অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় যেমন বলেছিলেন, ‘‘বিবাহিত সম্পর্কে ভালবাসাটাই সব নয়। নির্মাণটাই জরুরি। শেষ পর্যন্ত ওই নির্মাণের উপরেই টিকে থাকে একটা আস্ত সংসার।’’

ঠিক কোন নির্মাণের কথা বলেছেন তিনি? শীর্ষেন্দুর ব্যাখ্যা, ‘‘একটা সংসারে রোম্যান্টিক ভালবাসাটাই শেষ কথা নয়। নারী-পুরুষ মিলে যে ঘর বাঁধা হয়, সেখানে বাতাস আসে, টবের গাছ বেড়ে ওঠে, চড়াইপাখি বাসা বাধে, রাস্তার নেড়ি কুকুরও হয়তো ঠাঁই পায়। সবটা মিলিয়ে গড়ে ওঠে একটা সংসার। এটাই নির্মাণ। রোম্যান্টিক প্রেম তার একমাত্র শর্ত হতে পারে না।’’

অনেকটা একই রকম ভাবনা চিত্রপরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের। কয়েক দিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে চলা তাঁর ওই ছবিতে উঠে এসেছে বিবাহিত সম্পর্কের নানা টানাপড়েনের তত্ত্ব। যেখানে স্বামী তাঁর ৫০ বছরের পুরনো স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, স্ত্রী তাঁকে সময় না দিয়ে সংসারকে বেশি সময় দিয়ে এসেছেন বরাবর। আর স্ত্রী বলেছেন, ‘‘তোমাকে আর সংসারকে আমি আলাদা ভাবিনি কোনওদিনও।’’ সেই ছবি ‘বেলাশেষে’র পরিচালক শিবপ্রসাদ বলেন, ‘‘১৯৯৫ সালে আমার বাবা মারা গেছেন। অথচ মা এখনও বাবার জন্যই বিছানাটা টানটান করে রাখেন। সাজিয়ে রাখেন চটিজোড়া। বাবার পোশাক এখনও গুছিয়ে তোলা রয়েছে। এটা ভালবাসা ছাড়া কী?’’ নির্মাণ আর প্রেম মিলেমিশে যায় তাঁর কাছে।

কিন্তু আধুনিক প্রজন্ম কি এ ভাবে ভাবতে জানে? নাকি এ ভাবে ভাবতে জানাটা জরুরি? স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের নিত্য ঠোকাঠুকি এখন বহু সময়েই আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বিষয়টা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেওয়া যায় কি না, তা ভেবে দেখতে বলেন বিচারপতিরা। সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কিছু ঘটনায় নিজেদের ভুল বোঝাবুঝি মেটাতে স্বামী-স্ত্রীকে পুরী, দিঘা বা অন্যত্র বেড়িয়ে আসার পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা। কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে সময় কাটিয়ে এসে ভুল বোঝাবুঝি মিটেও গেছে। তা হলে কি পরস্পরকে সময় না দেওয়ার মধ্যেই মূল জটিলতার সূত্রপাত? আইনজীবী সুতপা দে বলেন, ‘‘সব সময়ে এই থিওরি কাজে লাগে না। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অতীত ভুলে গিয়ে নতুন করে সব কিছু শুরু করার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। কিন্তু শুরু করার কিছু দিনের মধ্যেই ফের পুরনো সমস্যাগুলো মাথাচাড়া দিয়েছে।’’

তার পরে ফের বিচ্ছেদ। ফের তিক্ততা।

মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিয়ে নামের প্রতিষ্ঠানটা সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমন দম্পতিও দেখছি, যাঁরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সুখী নন, কিন্তু বন্ধু হিসেবে খুবই স্বচ্ছন্দ। সেটাও তো একটা বড় সম্পর্ক। দাম্পত্য টেকাতে গিয়ে সম্পর্কের সেই নির্মাণটাকে অবহেলা করা ঠিক নয়।’’

দাম্পত্য যা দিতে পারে না, অনেক সময়ে বন্ধুত্ব তা দিতে পারে। তাই বিচ্ছেদ হওয়া স্বামী-স্ত্রীও কফি খেতে খেতে পরস্পরের কুশল জেনে নেন স্বচ্ছন্দে।

নির্মাণতত্ত্বকে কি আর কোনও একটা সম্পর্কে বেঁধে রাখা যায়?

Relationship Couple Marriage Soma Mukhopadhyay shirshendu mukhopadhyay swatilekha sengupta soumitra chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy