যোগবেদান পোদ্দার।
বঙ থেকে বম্ব। সেখান থেকে জঙ্গি। বিমানের মধ্যে হুলস্থূল। হলিউডি কমিক ছবি ‘হ্যারল্ড অ্যান্ড কুমার এসকেপ ফ্রম গুয়ানতানামো বে’-তে হ্যারল্ড এবং কুমার পটেলের যা হাল হয়েছিল, ঠিক সেই হালই হল বেলেঘাটার যোগবেদান পোদ্দারের।
২০০৮ এর ওই ছবিতে দেখা গিয়েছিল কুমার গাঁজা খাওয়ার একটি বঙ(গাঁজা খাওয়ার জন্য ব্যাবহৃত কাচের পাইপ)বের করেছেন বিমানের মধ্যে। এক সহযাত্রী মহিলা জিজ্ঞাসু চোখে তাকালে তিনি উচ্চারণ করেন বঙ...। আর সেটাই ওই যাত্রী বম্ব শোনেন। মুহূর্তের মধ্যে জঙ্গি ভেবে দুই যুবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বিমানে থাকা এয়ার মার্শালরা।
সোমবারও প্রায় একই দৃশ্য দমদম বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া মুম্বইগামী জেট এয়ারওয়েজের বিমানে। বিমান তখনও রানওয়েতে গতি নেয়নি। আর তখনই বিমানের আইরিশ যাত্রী বেঞ্জামিন প্লুফেটের কানে এল একটি বাক্য—“আই উইল ডেসট্রয় অল”। বেঞ্জামিনের ঠিক সামনেই বসে ছিলেন বছর তেইশের এক যুবক। তিনি স্ন্যাপচ্যাটে ভিডিয়ো কল করে কথা বলছেন। ওই যুবকের কণ্ঠস্বরই শুনেছেন বেঞ্জামিন। নিঃসন্দেহ হয়েই বিমান সেবিকাদের চুপি চুপি কথাটা বলেন তিনি। তাঁদের মারফৎ খবর যায় বিমানের দুই পাইলটের কাছে। সেখান থেকে সন্দেহজনক যাত্রী এবং তাঁর ‘ধ্বংস করে দেওয়ার’ ভিডিয়ো কলের কথা পৌঁছয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলেও।
আরও পড়ুন: ‘সব ধ্বংস করে দেব...’ জেটের বিমানে সন্দেহজনক ভিডিয়ো চ্যাট, কলকাতায় আটক
সোমবার ২৬ নভেম্বর। ২৬/১১ মুম্বই হামলার দশম বর্ষ পুর্তি। সূত্রের খবর, ওই সন্দেহজনক বার্তালাপ এবং সন্দেহভাজন যাত্রীর কথা শুনে ঝুঁকি নিতে পারেননি পাইলট বা এটিসি-র কর্মীরা। তাঁরা পাইলটকে বিমান ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি খবর দেওয়া হয় বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফকে। সাজোসাজো রব গোটা বিমান বন্দরে। বিমান ফিরে আসা মাত্র দ্রুত বিমান ফাঁকা করতে বলে হয় যাত্রীদের। কারণ আশঙ্কা ছিল বিমানে কোনও বিস্ফোরক থাকতে পারে। শুরু হয় তল্লাশি। কিছু না পাওয়া গেলেও সেই সন্দেহভাজন যুবককে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় এনএসসিবিআই থানায়।
সেখানে ওই যুবককে জেরা করতে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম পুলিশ থেকে গোয়েন্দা সবার। ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটির ছাত্র ওই যুবক সদ্য স্নাতক স্তরের পরীক্ষা দিয়ে মুম্বই যাচ্ছিলেন বেড়াতে। বিমানে বসে তাহলে এমন কী বলেছিলেন যাতে ভয় পেলেন পিছনে বসে থাকা বিদেশি যাত্রী?
আরও পড়ুন: আঠারোর ‘আস্পর্ধা’! ট্রাম্পকে শিক্ষা দিলেন অসমের তরুণী
অভিযুক্ত বলেন, তিনি চ্যাট করছিলেন এক বন্ধুর সঙ্গে। মজা করেই মুখটা একটু ঢেকে বন্ধুকে বলেছিলেন,“আই উইল ডেসট্রয় অল উইমেন’স হার্ট’’ (আমি সব মহিলার হৃদয় ধ্বংস করব)। জিজ্ঞাসা করা হয় সেই আইরিশ যাত্রীকেও। তিনিও স্বীকার করেন ‘ডেসট্রয়’ কথাটি শোনার পর এতটাই বিচলিত ছিলেন যে পরের শব্দগুলো শোনেননি তিনি।
তা-ও পুলিশ খবর দেয় যুবকের বাড়িতে। খবর নেওয়া হয় স্থানীয় থানায়। কোথাও কোনও অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায় নি। ততক্ষণে যোগের বাবা নির্মল পৌঁছেছেন থানায়। সব খতিয়ে দুপুরেই ছেড়ে দেওয়া হয় ওই ছাত্রকে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন বিমানের যাত্রী থেকে শুরু করে কর্মীরা। ছাড়া পাওয়ার পরও গোটা ঘটনার ঘোর কাটেনি ওই যুবকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy