Advertisement
E-Paper

ভেবেছিলাম পুলিশের সাহায্য পাব, কিন্তু...

আমরা তো স্তম্ভিত! বুঝে গেলাম ওরা সাহায্য করতে আসেননি মোটেই। নাম, ধাম, ফোন নম্বর জানানোর পরে বলতে বাধ্য হলাম, আমি একটা খবরের কাগজে কাজ করি। আপনি ছাড়লে বাড়ি ফিরতে পারি। যে রোগী অসুস্থ, তাঁকে ওষুধটা এখনই দিতে হবে যে!

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০২:৩১
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

রবিবার রাত দু’টো।

বর্ধমান থেকে এক আত্মীয়ের পরিবার ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। থাকবেন আমার বাড়িতেই। মাঝরাতে হঠাৎই এক জনের প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ওষুধ শেষ। পাড়ার কোনও ওষুধের দোকান তখন খোলা নেই। অগত্যা গুগল ঘেঁটে নম্বর বার করে ফোন করতেই জানা গেল শ্যামবাজারে একটি দোকান খোলা রয়েছে।

আমি আর পিসতুতো দিদি কুমোরটুলির বাড়ি থেকে হেঁটেই শ্যামবাজার রওনা হলাম। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে দেখি, হাতিবাগানের দিকে মুখ করে কলকাতা পুলিশের একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে। ভিতরে কয়েক জন পুলিশ কর্মী। দেখে সাহস বাড়ল। ভেবেছিলাম, দু’টি মেয়ে বৃষ্টির মধ্যে কেন এ ভাবে বেরিয়েছি তা জানতে এবং সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে পুলিশ। কিন্তু ওঁরা কেউ এলেন না।

আধ ঘণ্টা হেঁটে দোকানে পৌঁছে দোকানদারকে ঘুম থেকে তুললাম। তার পর ওষুধ বোঝাতে আরও মিনিট ১৫। শেষ পর্যন্ত যখন ওষুধ কিনে ফিরছি, ঘড়ির কাঁটায় পৌনে তিনটে। বৃষ্টিও ধরে এসেছে।

আরও পড়ুন:কালীঘাট মন্দির ঢেলে সাজতে উদ্যোগী মমতা

দেখলাম ভ্যানটা সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাইরে বর্ষাতি গায়ে চার জন পুলিশ কর্মী। তাঁদের মধ্যে এক জন বাঁশি বাজালেন। তখনও ভাবিনি, বাঁশিটা আমাদের জন্য। পা চালিয়ে হাঁটছি। মণীন্দ্র কলেজের কাছাকাছি এসেছি, পিছন থেকে একটা বাইক এসে দাঁড়াল। পুলিশের। ভাবলাম বুঝি আমাদের সাহায্য করতে এসেছেন ওঁরা। কিন্তু কোথায় কী! আমাদের জেরা শুরু করলেন ওঁরা। ওষুধের প্যাকেট দেখিয়ে যত বার বোঝাতে চাই, নতুন প্রশ্ন ভেসে আসে। সঙ্গের দিদিটি কে, কেন এসেছেন, কত দিন থাকবেন... ইত্যাদি ইত্যাদি। এত প্রশ্ন কেন? জানতে চাইলে জবাব আসে, ‘‘আপনাদের দেখে সন্দেহ হচ্ছে তাই।’’

আমরা তো স্তম্ভিত! বুঝে গেলাম ওরা সাহায্য করতে আসেননি মোটেই। নাম, ধাম, ফোন নম্বর জানানোর পরে বলতে বাধ্য হলাম, আমি একটা খবরের কাগজে কাজ করি। আপনি ছাড়লে বাড়ি ফিরতে পারি। যে রোগী অসুস্থ, তাঁকে ওষুধটা এখনই দিতে হবে যে!

খবরের কাগজে কাজ করি শুনেই পুলিশ কর্মীটি পেন বন্ধ করে, খাতা গুটিয়ে বললেন, ‘‘ঠিক আছে, যান।’’

দশ-বারো পা এগিয়েছি। তাঁরা এসে হাজির আবার। এ বার আবদারের সুর। ‘‘দিদিভাই, আমার নম্বরটা রেখে দিন।’’ বললাম, আপনার নম্বর আমার দরকার নেই। পুলিশ কর্মীটি নাছোড়, ‘‘জানি সেটা। তবু এক বার যদি বাড়ি ফিরে আমায় ফোন করে দেন, নিশ্চিন্ত হই। এটা তো আমার কর্তব্য।’’

এত ক্ষণ তাঁর এই কর্তব্যবোধ কোথায় ছিল, ভাবতে ভাবতেই বাড়ি পৌঁছলাম। আমি যদি পেশার কথা না-বলতাম, তা হলে কি সন্দেহের বশে থানায় যেতে হতো আমাদের? এই প্রশ্নটা তাড়া করছে।

ঠিক করি, আমার এই রাতের কথা কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমার এবং ডিসি (নর্থ) শুভঙ্কর সিংহ সরকারকে জানাব। দু’জনের ই-মেলে আমার সেই অভিজ্ঞতা আমি লিখে পাঠিয়েছি। জবাব আসেনি এখনও।

লালবাজার উবাচ

রাতে টহলদারিতে থাকা মানে দুষ্কৃতী দমন করা এবং অসহায় মানুষকে সাহায্য করা। দু’টি মেয়েকে গভীর রাতে রাস্তায় ঘুরতে দেখে পুলিশের আরও মানবিক হওয়া উচিত ছিল। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Kolkata Police KP Journalist পুলিশ শ্যামবাজার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy