Advertisement
E-Paper

দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন মৃতের পরিবারের

এই মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সানির পরিজনেরা। বুধবার তাঁরা দাবি করেন, কোথায় এবং কী ভাবে সানিকে ধাক্কা মেরে একটি গাড়ি পালিয়ে গেল তা তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২০ ০২:২৪
শোকার্ত: সানি দাসের (বাঁ দিকে) স্ত্রী ভাগ্যশ্রী। বুধবার, গরফার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: সানি দাসের (বাঁ দিকে) স্ত্রী ভাগ্যশ্রী। বুধবার, গরফার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

বিকেল থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি পড়ছিল। মঙ্গলবার রাতে তাই স্বামীকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসার জন্য বলেছিলেন গরফার বাসিন্দা ভাগ্যশ্রী দাস। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ শেষ বার স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হওয়ার সময়েও বলেন, দু’জনে একসঙ্গে রাতের খাবার খাবেন। যদিও তাঁর সেই পরিকল্পনা পূরণ হয়নি। রাত দেড়টা নাগাদ পুলিশ তাঁকে ফোন করে জানায়, গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্বামী সানি দাসের (৩১)। দ্রুত এম আর বাঙুর হাসপাতালে যেতে হবে।

এই মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সানির পরিজনেরা। বুধবার তাঁরা দাবি করেন, কোথায় এবং কী ভাবে সানিকে ধাক্কা মেরে একটি গাড়ি পালিয়ে গেল তা তাঁদের কাছে পরিষ্কার নয়। পুলিশ বলেছে, ট্র্যাফিক সিগন্যাল ভেঙে সাইকেলে থাকা সানিই গাড়ির সামনে পড়ে গিয়েছিলেন। সানির এক আত্মীয়ের দাবি, ‘‘যে জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে তো সিগন্যাল ভেঙে গাড়ির সামনে পড়ে যাওয়ার কোনও উপায়ই নেই।’’ ভাগ্যশ্রীর মাসতুতো দিদি নবনীতা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সে রাতে দুর্ঘটনাস্থলের কাছের একটি দোকানের মালিক অনেক কিছু দেখেছেন। সবটা আমরা পুলিশের কাছে লিখিত ভাবে জানাব।’’ ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের ফেটাল স্কোয়াড। তারা জানিয়েছে, সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হবে।

কী ঘটেছিল মঙ্গলবার রাতে? এলাকাটি গরফা থানার অন্তর্গত। সেখানকার পুলিশ জানিয়েছে, সাইকেলে ইএম বাইপাসের দিক থেকে পূর্বাচল বিধান রোডের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন সানি। রাত বারোটা পাঁচ মিনিট নাগাদ কালিকাপুরের কাছে একটি গাড়ি তাঁর সাইকেলে সরাসরি ধাক্কা মারে। গাড়িটির গতি এতই বেশি ছিল যে, ধাক্কার জেরে বনেটের উপরে উঠে কিছু দূরে ছিটকে পড়েন সানি। চিৎ হয়ে পড়ায় তাঁর মাথার পিছনের দিকে গুরুতর আঘাত লাগে। রতনকুমার সাহা নামে এক পুলিশকর্মী সানিকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুরে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনায় জড়িত গাড়িটিকে আটক করা যায়নি। তবে ঘটনাস্থলের কাছের সিসি ক্যামেরা থেকে বেশ কয়েকটি ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার বেশ কয়েক জন কর্মীকে একসঙ্গে কোথাও পৌঁছে দেওয়ার জন্য ওই ধরনের গাড়ি ব্যবহার করে। ওই রাতে গাড়িটিতে চালক ছাড়া আরও কেউ ছিলেন কি না, দেখা হচ্ছে। তবে ঘটনার পর থেকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও গাড়িটিকে কেন ধরা গেল না, সেই প্রশ্নও উঠছে। সানির এক আত্মীয় বলেন, ‘‘ঘটনার রাত থেকে বারবার সানিকে ফোন করে দেখেছি, সেটি বেজে যাচ্ছে। ফোনটি কোথায় আমরা জানি না। পুলিশও আমাদের দেয়নি। ফোনের খোঁজ করতে ঘটনাস্থলে গিয়েই শুনেছি, কাউকে ধাক্কা মারার পরেও একটি গাড়ি পালিয়ে গিয়েছে!’’

সানির স্ত্রী ভাগ্যশ্রী অবশ্য কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। আদতে বিহারের বাসিন্দা সানির সঙ্গে বছর দশেক আগে বিয়ে হয় ভাগ্যশ্রীর। সানির বাবা-মা কেউই জীবিত নেই। হাইল্যান্ড পার্কের একটি রেস্তরাঁয় রান্নার কাজ করতেন সানি। স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে সংসার। মূল রোজগেরে ছিলেন তিনিই। স্বামীর উপর চাপ কমাতে কিছু দিন আগেই একটি সংস্থায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন ভাগ্যশ্রী। কাঁদতে কাঁদতে এ দিন তিনি বললেন, ‘‘আর কার জন্য লড়াই করব? কেউ নেই।’’

Death Accident Lalbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy