Advertisement
E-Paper

রাস্তায় বিশাল গর্ত, পড়ে মৃত্যু যুবকের

প্রায় সাত ফুট গভীর, দেড় ফুট চওড়া ও দু’ফুট লম্বা জল ভর্তি ওই গর্তের মধ্যে এক ব্যক্তিকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। খবর পেয়ে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ এসে ওই যুবককে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৫
মর্মান্তিক: গড়িয়া সান্ধ্যবাজারের এই গর্তে পড়েই মৃত্যু হয় অরূপ সরকারের।

মর্মান্তিক: গড়িয়া সান্ধ্যবাজারের এই গর্তে পড়েই মৃত্যু হয় অরূপ সরকারের।

সারা রাত নিখোঁজ থাকার পরে সকালে রাস্তার পাশে একটি গর্ত থেকে উদ্ধার হল এক যুবকের মৃতদেহ। শনিবার সকালে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গড়িয়ার সান্ধ্যবাজার এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম অরূপ সরকার (৪৩)। তাঁর বাড়ি গড়িয়ার নবগ্রাম এলাকায়। এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে শনিবার রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ। দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাঘা যতীন এলাকার ফুটপাতে অরূপবাবুর একটি দোকান রয়েছে। সেই দোকান বন্ধ করে প্রতিদিনই রাত ১১টার মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতেন তিনি। কিন্তু শুক্রবার রাতে অরূপবাবু আর বাড়ি ফেরেননি। পরদিন ভোরে গড়িয়া স্টেশন লাগোয়া সান্ধ্যবাজারে মাছের আড়তের সামনে রাস্তার পাশে গভীর ও সঙ্কীর্ণ একটি গর্ত দেখেন এলাকার লোকজন। গর্তটি কীসের জন্য খোঁড়া হয়েছে, তা দেখতে টর্চ জ্বালান তাঁরা। তখনই প্রায় সাত ফুট গভীর, দেড় ফুট চওড়া ও দু’ফুট লম্বা জল ভর্তি ওই গর্তের মধ্যে এক ব্যক্তিকে উপুড় হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। খবর পেয়ে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ এসে ওই যুবককে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। প্রবীরকুমার মণ্ডল নামে ওই বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমরা প্রতিদিনের মতো এ দিন ভোরেও আড়তে আসি। তখনই দেখা যায়, বাজারে একটি গর্ত খোঁড়া হয়েছে। তার মধ্যে এক ব্যক্তি উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন। আমি পুলিশ ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমি পুলিশ ও পুরসভাকে অনুরোধ করি, বাজারের ওই গর্তটি যেন ঘিরে দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তির মতো আর যেন কেউ বিপদে না পড়ে।’’

মৃত অরূপ সরকার

এ দিকে, বাজারের সামনেই বিপজ্জনক ভাবে গর্ত খুঁড়ে রাখায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। এ দিন দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গড়িয়া স্টেশনের সান্ধ্যবাজার থেকে নবগ্রাম যেতে রাস্তার ধারে একের পর এক বড় বড় বিপজ্জনক গর্ত খোঁড়া হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর বিভাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার জন্য রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা আমাদের না জানিয়েই শুক্রবার এ ভাবে একের পর এক গর্ত খুঁড়েছে। ওই ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘শুধু গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকাই নয়, রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডেও একই রকম ভাবে বিপজ্জনক গর্ত খোঁড়া হয়েছে।’’

এ দিন দুপুরে মৃত অরূপবাবুর নবগ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বৃদ্ধ বাবা ও বৃদ্ধা মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। ওড়নায় চোখ মুছতে মুছতে মৃতের স্ত্রী অপর্ণা সরকার বললেন, ‘‘বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতার জন্য গর্ত করার পরে ওই জায়গা ঘিরে রাখলে আমার স্বামীকে এ ভাবে মরতে হত না। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিক, এটাই চাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্বামীর মতো আর কারও যেন এ ভাবে মৃত্যু না হয়। প্রশাসন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার গাফিলতির ফলেই এমনটা ঘটল।’’ দুই ছেলে, শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেওরকে নিয়ে সংসার অপর্ণার। বলছিলেন, ‘‘আমার স্বামীর রোজগারের টাকাতেই সংসার চলত। এ বার আমাদের কী হবে!’’ গড়িয়ার নবগ্রামে রাস্তার ধারে এই ভাবে বিপজ্জনক বড় বড় গর্ত খোঁড়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারাও।

এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তারা দাবি করেন, বিদ্যুতের কোনও কাজ করতে গিয়ে গর্ত খোঁড়া হলে সেটি আংশিক ঘিরে রাখা বা কাজ হয়ে গেলে বুজিয়ে দেওয়াই নিয়ম। এ ক্ষেত্রে ঠিক কী করা হয়েছিল, সে সম্পর্কে ঠিকাদার সংস্থাটির কাছ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনাটি নিশ্চিত ভাবে দুঃখের। তবে ঠিক কী কারণে ওই যুবক মারা গেলেন, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না এলে তা বোঝা সম্ভব নয়।’’

Man Died Potholes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy