Advertisement
E-Paper

শহুরে ছাদে আলু-পেঁয়াজ-ঝিঙে

শুধু গ্রাম কেন, চাইলে ইট-কাঠ-কংক্রিটের শহরেও চাষবাস সম্ভব।রাজারহাটে কংক্রিটের জঙ্গলের মাঝে সাততলা একটি বাড়ির ছাদে আলো-হাওয়ায় দিব্য বেড়ে উঠছে ফুলকপি, বেগুন, কুমড়ো। বিশাল ছাদ। রেলের কামরায় যেমন আপার, মিডল, লোয়ার বার্থ থাকে, তেমনই ছাদের উপরে লোহার খাঁচা করে কোথাও দুই, কোথাও তিনটি ধাপ তৈরি করা।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫৮
গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত বিজয়চন্দ্র ঘোষ। রাজারহাটে। ছবি:শৌভিক দে

গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত বিজয়চন্দ্র ঘোষ। রাজারহাটে। ছবি:শৌভিক দে

শুধু গ্রাম কেন, চাইলে ইট-কাঠ-কংক্রিটের শহরেও চাষবাস সম্ভব।

রাজারহাটে কংক্রিটের জঙ্গলের মাঝে সাততলা একটি বাড়ির ছাদে আলো-হাওয়ায় দিব্য বেড়ে উঠছে ফুলকপি, বেগুন, কুমড়ো। বিশাল ছাদ। রেলের কামরায় যেমন আপার, মিডল, লোয়ার বার্থ থাকে, তেমনই ছাদের উপরে লোহার খাঁচা করে কোথাও দুই, কোথাও তিনটি ধাপ তৈরি করা। তার উপরে প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে মাটি ফেলে চলছে চাষ। জৈব পদ্ধতিতে ফলেছে ক্যাপসিকাম থেকে ব্রকোলি।

তিন বছর আগে অবসর নেওয়া খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষিবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিজয় চন্দ্র ঘোষ এসে প্রস্তাব দেওয়ার পরে রাজারহাটের সেই সুধাংশুবালা ম্যানসনের মালিক ভবেশ মজুমদার দু’বার ভাবেননি। তাঁর কথায়, ‘‘যে মানুষটা ৩৬ বছর ধরে আইআইটি-র কৃষি বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত, যিনি রোজগারের জন্য নয়, স্রেফ ভালোবেসে এই কাজটা করছেন, তাঁকে না করি কী করে? বাড়িটা স্কুলকে ভাড়া দিয়েছি। ছাদটা তো খালি পড়ে ছিল।’’

৬৮ বছরের বিজয়বাবু আইআইটি ছাড়লেও আইআইটি তাঁকে ছাড়েনি। বেশ কয়েকটি প্রকল্পের গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তার মধ্যেই একটি হল এই ‘শহুরে চাষ’। দায়িত্ব পেয়ে শহরে এসে অনেকের দরজায় কড়া নেড়েছিলেন বিজয়বাবু। বেশির ভাগই না বলে দেন তাঁকে। তার পরে ভবেশবাবুর সঙ্গে দেখা। তাঁর ওই বহুতলের ছাদে গত এক বছর ধরে নিরলস পরিশ্রম করে বিজয়বাবু ফসল ফলিয়ে চলেছেন। তবে ধান-গম-ডাল নয়। প্রধানত আনাজ। কী নেই সেই তালিকায়! পটল থেকে পালং শাক, ঝিঙে থেকে টোম্যাটো—সবই আছে। রয়েছে আলু, পেঁয়াজও।

নিজের ছোটখাটো দলও বানিয়ে ফেলেছেন অধ্যাপক। শহরে, বাড়ির ছাদে কেউ এই চাষবাসে আগ্রহী হলে সেই দল চলে যাবে তাঁর বাড়ি। কী ভাবে লোহার ছোট ছোট কাঠামো বানিয়ে তার উপরে মাটি ভরাট করে চাষ করা যাবে, শিখিয়ে দেবেন তাঁরা। কী ভাবে নিয়ন্ত্রিত ভাবে জল ব্যবহার করা যাবে, তা-ও শেখানো হবে। রান্নাঘর ও বাগানের ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র দিয়ে কী করে বাড়িতেই জৈব সার বানানো সম্ভব, তা-ও তাঁরা শিখিয়ে দিয়ে যাবেন।

আঙুলের কর গুনে ৭টি সুবিধের কথা বলছেন বিজয়বাবু। ১) শহরের পড়ে থাকা এলাকার ঠিক ব্যবহার করা যাবে। ২) রান্নাঘর ও বাগানের বর্জ্যকে কাজে লাগানো যাবে। ৩) নিজের বাড়িতেই জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে স্বাস্থ্যকর আনাজ ও ফল খাওয়া যাবে। ৪) সূর্যের আলো ও বৃষ্টির জল, যা অপচয় হয়, তাকে কাজে লাগানো যাবে। ৫) ছাদের নীচের তলাগুলি গরমকালে ঠান্ডা থাকবে। ৬) বেশির ভাগ বাড়ির ছাদে এ ভাবে চাষ শুরু হলে, শহরের কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমবে, কমবে দূষণও। ৭) যাঁরা অবসর নিয়েছেন, যাঁদের অফুরন্ত সময়, তাঁরা চাইলে, এই কাজের মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারবেন।

ছাদে বাগান করতে গিয়েই বাঙালি দশ বার ভাবে। ১৯৯৫ সালে কলকাতায় বহুতল ‘শিবালিক’ ভেঙে পড়ার পরে নিকৃষ্ট মালমশলা, নকশার দোষের সঙ্গে উঠে এসেছিল ছাদে বাগানের কথাও। বলা হয়েছিল, বাগানের ওজন সামলাতে পারেনি বাড়িটি। রাতে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ১৬ জন মারা গিয়েছিলেন।

টবে ফুলগাছ বহুতলের বারান্দায় ঝুলিয়ে রাখেন অনেকেই। অনেকে তার সঙ্গে বড়জোর লঙ্কা, পাতিলেবুর গাছ লাগিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন। যাঁদের বাড়িতে বাগান থাকে, তাঁদের কথা ভিন্ন। বিজয়বাবু স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানত ফ্ল্যাটবাসীদেরই। বাড়ির মালিক চাইলেও অনায়াসে ছাদে বাগান করতে পারবেন।

কিন্তু বাগানের ওজন? বিজয়বাবুর কথায়, কোনও ছাদের ১৯০ বর্গ মিটার এলাকা অনায়াসে ১২০ কিলোগ্রাম ওজন নিতে পারে। যেমন, রাজারহাটের এই বাড়িটি। আমি তো ৫০-৬০ কিলোগ্রামের বেশি ওজন চাপাইনি। যে ভাবে চাষ হবে সেখান থেকে জল লিক করবে না। আইআইটি-র ছাদে গত ৩-৪ বছর ধরে তিনি পরীক্ষা করে দেখেছেন।

Cultivation Roof
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy