Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পোশাক নিয়ে ‘তির্যক’ মন্তব্য তরুণীকে

গত সোমবার সন্ধ্যার ঘটনা। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের কাছে ওই আবাসনে বহু বিশিষ্ট মানুষের বাস। সেখানেই থাকেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ওই তরুণী।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৯ ০১:২২
Share: Save:

শর্টস আর টপ পরে আবাসনের আবাসিকদের সংগঠনের অফিসে গিয়েছিলেন তরুণীটি। অভিযোগ, তাঁর সেই পোশাক দেখে সংগঠনের কর্মকর্তা তির্যক মন্তব্য করেন। শুধু তাই নয়। ওই পোশাক পরায় তরুণীটি জরুরি প্রয়োজনেও আবাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকতাটির থেকে কোনও সাহায্য পাননি। ঘটনার পরে তরুণীর সমর্থনে দাঁড়িয়ে ওই কর্মকর্তার ব্যবহারের সমালোচনা করেছেন ওই আবাসনের অন্যান্য বাসিন্দাও।

গত সোমবার সন্ধ্যার ঘটনা। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের কাছে ওই আবাসনে বহু বিশিষ্ট মানুষের বাস। সেখানেই থাকেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ওই তরুণী। তিনি জানান, আয়ারল্যান্ডে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। হাতে চলে এসেছে ভিসাও। তাঁর পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতির কাজে ওই দিন তাঁর বাবা-মা বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। ফ্ল্যাটে একাই ছিলেন ওই তরুণী। সেই সময়ে তিনি দেখেন তাঁদের ফ্ল্যাটের শৌচাগারের একটি জলের পাইপ থেকে জল লিক করে পড়ে যাচ্ছে।

জল পড়তে দেখে ওই তরুণী পরিচিত এক মিস্ত্রিকে ফোন করে ডেকে পাঠান পাইপ মেরামতির কাজ করতে। তরুণী জানান, মিস্ত্রি এলেও তাঁকে নিরাপত্তারক্ষী আবাসনের বাইরে আটকে দেন। তখন ওই মিস্ত্রি তাঁকে ফোন করলে তিনি নীচে নেমে আসেন। তরুণীর কথায়, ‘‘নিরাপত্তারক্ষী জানান, সন্ধ্যা ছ’টার পরে বাইরের কোনও মিস্ত্রিকে দিয়ে কাজ করাতে গেলে আবাসনের অ্যাসোসিয়েশনের অফিস থেকে অনুমতি আনতে হবে।’’

তরুণীর বাবার দাবি, নিরাপত্তারক্ষীর কথা মতো তাঁর মেয়ে আবাসনের অফিসে যান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সেই সময়ে আবাসনের অফিসে ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নিবিড় দাশগুপ্ত। আমার মেয়েকে দেখে নিবিড়বাবু মেয়েকে পোশাক বদলে সেখানে যেতে বলেন। ওই পোশাকের কারণে তিনি মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন।’’

তরুণীর কথায়, ‘‘আমি পাল্টা জানতে চাই যে কী এমন খারাপ পোশাক আমি পরেছি? আমি তো বাড়ির পোশাকেই এসেছি। কিন্তু সে কথা না শুনে উনি আমায় জানান আমার মতো মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন না। আমি অপমানিত বোধ করি। তা সত্ত্বেও আমি কী কারণে অফিসে গিয়েছি তা ওঁকে জানাই।’’

যদিও নিবিড়বাবুর দাবি, ‘‘ওই সময়ে আমার অফিসে অনেক বয়স্ক আবাসিক বসেছিলেন। ওই তরুণী ওই পোশাকে অফিসে এসে চিৎকার করছিলেন। আমি শুধু ‘ভদ্র’ পোশাক পরে আসতে বলি।’’ যদিও ‘ভদ্র’ পোশাক বলতে ঠিক তিনি কী বলতে চেয়েছেন, তাঁর কোনও ব্যাখ্যা দেননি নিবিড়বাবু। তরুণীর অভিযোগ, জল পড়ে যাওয়ার কথা শুনেও সভাপতি কোনও ব্যবস্থা নেননি। তরুণী পুরো বিষয়টি কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের কাছে লিখিত অভিযোগের আকারে জানান। তরুণীর বাবাও বিষয়টি ট্যুইট করে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এ দিকে ওই আবাসনের অ্যাসোসিয়েশনের বাকি সদস্যেরা ওই তরুণীর পাশেই দাঁড়িয়েছেন।

আবাসনের অন্য বাসিন্দাদের অনেকেরই মত, কারও পোশাক নিয়ে মন্তব্য করার অধিকার অ্যাসোসিয়েশনের নেই। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘‘পোশাক নিয়ে কোনও মন্তব্য কেউ করতে পারেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Human Rights EM BYpass Derogatory Comment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE