Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Old House Collapsed

পুরনো বাড়ি ভেঙে বিপত্তি, আহতের মাথায় ৩০টি সেলাই

কয়েক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলেই পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার একাধিক ঘটনা ঘটছে শহরে। তাতে কখনও ভাঙা অংশের নীচে চাপা পড়ে বাড়ির বাসিন্দাদের মৃত্যু হচ্ছে, কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে।

An image of an old house

অঘটন: এই জীর্ণ বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে আহত হন এক ব্যক্তি। শনিবার, চারু মার্কেট এলাকায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৩
Share: Save:

শহরের একটি পুরনো বাড়ির নীচের অংশে থাকা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন মেদিনীপুর থেকে আসা এক যুবক। আচমকাই তাঁর উপরে ভেঙে পড়ল ওই বাড়ির একাংশ। শনিবার সকালে, দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রাণ শাসমল রোডের ঘটনা। স্থানীয়েরাই তড়িঘড়ি তাঁকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করান। অবস্থা সঙ্কটজনক। হাসপাতাল সূত্রের খবর, চন্দন বর্মণ নামে বছর ছত্রিশের ওই যুবকের মাথায় ৩০টি সেলাই পড়েছে।

কয়েক ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হলেই পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার একাধিক ঘটনা ঘটছে শহরে। তাতে কখনও ভাঙা অংশের নীচে চাপা পড়ে বাড়ির বাসিন্দাদের মৃত্যু হচ্ছে, কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এমন পুরনো বাড়ির সামনে দিয়ে যাতায়াত করার সময়ে অনেকে আহত হচ্ছেন বা মারাও যাচ্ছেন। তবু, পুরনো বাড়ি আঁকড়ে থাকার রোগ সারছে না! শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির জেরে দেশপ্রাণ শাসমল রোডে এ দিনের ঘটনায় জখম হন দু’জন। আহতদের মধ্যে এক জনকে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশি সূত্রের খবর, ভবানী সিনেমা হলের উল্টো দিকের ওই বাড়িটি প্রায় একশো বছরের পুরনো। বাড়ির বাসিন্দারা কেউই এখন সেখানে থাকেন না। তবে, নীচে কয়েকটি দোকান রয়েছে। তারই একটির সামনে এ দিন সকালে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন চন্দন। মেদিনীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে তিনি ওই বাড়িটির পাশে একটি ক্লিনিকে এসেছিলেন। সকাল ৯টা নাগাদ হঠাৎ তাঁর উপরেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়িটির একাংশ। ওই সময়ে সেখান দিয়ে হেঁটে যাওয়া অপর ব্যক্তিও জখম হন। স্থানীয়েরা ছুটে এসে কোনও মতে চন্দনকে উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেন। কাছেই চারু মার্কেট থানা থেকে পুলিশ আসে। কোনও মতে চন্দনকে বার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

An image of the injured man

আহত চন্দন বর্মণ —ফাইল চিত্র।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুরনো ওই বাড়িটিতে গাছপালা গজিয়েছে, দেওয়ালে ফাটল ধরে জায়গায় জায়গায় ভেঙে পড়েছে। দোতলা বাড়িটি কোনও ভাবেই বসবাসযোগ্য নেই। ঘটনাস্থলে বাড়ির ভেঙে পড়া অংশ সরানোর সময়ে কলকাতা পুরসভার এক কর্মী বললেন, ‘‘বিপজ্জনক নোটিস কোথাও দেখা যাচ্ছে না কেন, বুঝলাম না। কিন্তু এই বাড়ি তো বহু দিন আগেই বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছে।’’

এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৮৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এ নিয়ে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি মমতা মজুমদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খোঁজ নিয়ে বিষয়টি জানাতে পারবেন। কিন্তু তার পরে আর তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, প্রায় ১৫ বছর ধরে বাড়িটি এই অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কয়েক বছর আগে এক প্রোমোটার সেখানে নির্মাণের কথা জানালেও শরিকি বিবাদের জেরে কাজ এগোয়নি। তার পর থেকে এমন ভাবেই বাড়িটি পড়ে রয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা।

পুরসভার কর্তারা জানাচ্ছেন, শহরের পুরনো বাড়ির বিপদ না-কাটার নেপথ্যে অন্যতম কারণ এই শরিকি বিবাদ। সংস্কার প্রয়োজন, এমন পুরনো বাড়ির সংখ্যা শহরে এই মুহূর্তে প্রায় তিন হাজার। এর মধ্যে ৫০০টি বাড়ির ক্ষেত্রে কালবিলম্ব না করে এখনই ভাঙার কাজ শুরু করা প্রয়োজন। এর মধ্যে ৩৬০টি বাড়ি বিপজ্জনক তালিকাভুক্ত। বছর পাঁচেক আগে পাশ হওয়া পুর আইন ৪১২(এ)-তে পুরনো বাড়ি সংস্কারে উৎসাহ দিতে
একাধিক ছাড়ের ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, এতে মালিককে বাড়ি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে। সে জন্য ‘ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো’র (এফএআর) ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হবে। বাড়ির মালিক ওই কাজ করতে না পারলে সংস্থা লাগিয়ে তা করবে পুরসভাই। কিন্তু মালিকপক্ষকেই খরচের বিষয়টি দেখতে হবে। এর পরে পাশ হয় ১৪২ নম্বর পুর আইন। সেই আইন অনুযায়ী, ভাড়াটেরা যে জায়গা ভোগ করছেন, সেই সমপরিমাণ জায়গা ছাড় হিসাবে পেতে পারেন বাড়ির মালিক। কিন্তু এত ছাড়েও সমস্যা মেটেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

injured Old house
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE