জগন্নাথের রাজ্যের লোক তিনি। কোনও ভাবে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিদেশে। তাঁর বাড়ির খোঁজ দিল সেই জগন্নাথই!
মাথায় জট পড়ে যাওয়া লম্বা চুল। সঙ্গে দাড়ি-গোঁফের জঙ্গল। পরনে নোংরা, ছেঁড়া লুঙ্গি-পাঞ্জাবি। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার গোলাবাড়ি স্টেশন এবং সংলগ্ন এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তিকে বেশ কয়েক বছর ধরেই ঘুরে বেড়াতে দেখতেন স্থানীয় মানুষজন। সেই ব্যক্তি মাঝেমধ্যেই বলতেন, ‘‘জয় জগন্নাথো।’’
তাঁর এমন ওড়িয়া উচ্চারণে ‘জয় জগন্নাথ’ শুনেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মানবিক সহায়তা স্বেচ্ছাসেবক টিম’-এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি মহম্মদ আব্দুল গনি ফিটুর মনে হয়েছিল, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তি ভারতের ওড়িশার বাসিন্দা হতে পারেন। তাঁর কাছ থেকে খবর পেয়ে এই সূত্র ধরে খোঁজ চালিয়ে হ্যাম রেডিয়োর মারফত বুধবার জানা যায়, ওই ব্যক্তির বাড়ি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বেতনটি থানার জগন্নাথপুর গ্রামে। তাঁর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা। বাংলাদেশ থেকে সুদাম হেমব্রম নামে ওই ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু করেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’।
সুদামের ভাইপো সুভাষচন্দ্র হেমব্রম বলেন, ‘‘১০-১২ বছর ধরে কাকা নিরুদ্দেশ ছিলেন। তাঁর মানসিক সমস্যা রয়েছে। কী ভাবে তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিলেন, তা বলতে পারব না। তখন আমি ছোট ছিলাম। কাকাকে অনেক খোঁজা হয়েছে। কিন্তু এত দিন সন্ধান মেলেনি। কাকা বাংলাদেশে কী করে চলে গেলেন, তা-ও বুঝতে পারছি না।’’
বাংলাদেশের রাস্তায় পড়ে থাকা মানসিক ভারসাম্যহীনদের উদ্ধার এবং চিকিৎসা করানোর মতো কাজ করে ফিটুর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বুধবার বাংলাদেশ থেকে ফোনে ফিটু বলেন, ‘‘গত সাত-আট বছর ধরে গোলাবাড়ি স্টেশন এবং সংলগ্ন এলাকায় ওই ব্যক্তিকে ঘুরতে দেখতাম। এর আগে বেশ কয়েক বার তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমাকে মারধর করে তিনি পালিয়ে যেতেন। কথা বলতেন ওড়িয়ায়। গত পরশু দেখতে পাই, অসুস্থ অবস্থায় ওই ব্যক্তি স্টেশনে পড়ে রয়েছেন। এর পরেই আমি তাঁকে উদ্ধার করি।’’ তিনি জানান, এই ধরনের মানুষদের রাখার জন্য নিজের বাড়িতেই তিনি চারটি ঘর বানিয়েছেন। সেখানে সুদাম এবং এক মহিলা-সহ চার জন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন ভারতীয়।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’ সূত্রের খবর, গোলাবাড়ি স্টেশন থেকে উদ্ধার হওয়া সুদামের মুখে ওড়িয়া উচ্চারণে ‘জয় জগন্নাথ’ শুনে ফিটু বিষয়টি হ্যাম রেডিয়োর ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসকে জানান। তাঁকে সুদামের দু’টি ছবিও পাঠিয়ে দেন। একটি চুল-দাড়ি-গোঁফ সমেত। আর একটি চুল-গোঁফ-দাড়ি কেটে। সেই দু’টি ছবি নিয়ে হ্যাম রেডিয়োর সদস্যেরা ওড়িশায় খোঁজ শুরু করেন। এ দিন ময়ূরভঞ্জের জগন্নাথপুর গ্রামের এক দোকানদার ছবি দেখে জানান, ওই ব্যক্তিকে তিনি দেখেছেন। সেই সূত্রেই খোঁজ মেলে সুদামের আত্মীয়দের। ভিডিয়ো কলে তাঁর সঙ্গে ভাইপোর কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। এখন সুদামের বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় তাঁর আপনজনেরা।
অম্বরীশ বলেন, ‘‘বাংলাদেশ হাই কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত ওই ব্যক্তিকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। সবই জগন্নাথের কৃপা।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)